আগামী মাসে ফের বাড়তে পারে গ্যাসের দাম। মূলত জ্বালানি খাতে বাড়তি চাপের কারণে আগামী জুলাই থেকে আবারও বাড়তে পারে গ্যাসের দাম। সূত্র জানায়, জুলাইয়ের শুরুর দিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে পারে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ও জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকির ওপর দাম বৃদ্ধির হার নির্ভর করছে। ভর্তুকি যত বাড়বে দাম বৃদ্ধির হার তত কম হবে বলেও জানা গেছে।
বিইআরসির সূত্র জানায়, জ্বালানি খাতে বাড়তি চাপের জন্য এলএনজি আমদানির বিষয়টিকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এলএনজির কারণে এখন গ্যাস সরবরাহে ব্যয় হচ্ছে প্রতি ঘনমিটারে ১৪ টাকা। আর গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৭.১৭ টাকায়।
অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে সাত টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। এলএনজির জন্য এরই মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। চলতি বছর আরও ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে চলতি অর্থবছরে তিন হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও মেলেনি। আর আগামী অর্থবছরে এলএনজির জন্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তাই গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। গেল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে না পারলে ভর্তুকি বাড়বে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে। এরপরও ছয় হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এবং দেশীয় সামিট গ্রুপ বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছ।
তাদের ১০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। গেল ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিইআরসিতে গড়ে ১০২ শতাংশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এরপর মার্চে কমিশন প্রস্তাবগুলোর ওপর গণশুনানির আয়োজন করে। বিইআরসি আইন অনুসারে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানতে হয় কমিশনকে। জুনেই এ সময়সীমা শেষ হবে। তবে আইনে বলা হয়েছে, সব তথ্য প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। কমিশন যদি মনে করে কোম্পানিগুলোর কাছ থেক আরও তথ্য লাগবে তাহলে এ সময়সীমা বাড়তে পারে। ফলে বাজেট পাশের পর জুলাই মাসে দাম বাড়ানো হতে পারে।
এর আগে গেল বছরের জুনেও গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বাড়ানোর আবেদনের ওপর এক দফা গণশুনানির আয়োজন করে কমিশন। তবে সামনে নির্বাচন থাকায় সে সময় সরকার দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়নি। ফলে ১৬ অক্টোবর বিইআরসি সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া সুপারিশ করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরই মধ্যে গণশুনানি থেকে পাওয়া মতামত যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসেব করা হয়েছে। এলএনজির ব্যয়েরও হিসেব আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকস্বার্থ বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের ভর্তুকির ওপর। তিনি জানান, আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে জুলাইতে দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে থাকলে বিইআরসির আইন অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে না। দেশে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি একটি। আর বিতরণ কোম্পানি তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ ছয়টি। এর মধ্যে একটি (সুন্দরবন) ছাড়া বাকি পাঁচটি কোম্পানিই লাভে রয়েছে। একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলও লাভে আছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে গ্যাস খাতে অযৌক্তি ব্যয় রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভারত ছয় ডলারে প্রতি ইউনিট এলএনজি কিনছে। সেখানে বাংলাদেশ দিচ্ছে আট থেকে ১০ ডলার। প্রতিযোগিতামূলকভাবে এলএনজি আনলে পরিবহনেও ২০ শতাংশ ব্যয় কমানো সম্ভব হতো। এছাড়া এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনেও ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। সব কিছু দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করলে এলএনজি আমদানির ঘাটতি অনেক কমে আসত। এরপর যতটুকু ঘাটতি হতো তা জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকেই পূরণ করা যেত। না সরকারকে ভর্তুকি দিতে হতো না গ্রাহকে বাড়তি দামে গ্যাস কেনা লাগত। কিন্তু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা না কমিয়ে কর্তৃপক্ষ সরাসরি দাম বৃদ্ধিতেই বেশি উৎসাহী।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৩:২৫ পি.এম, ১৫ জুন ২০১৯
ইব্রাহীম জুয়েল