Home / আন্তর্জাতিক / আজ ৮ মে বিশ্ব  থ্যালাসেমিয়া দিবস
thalsima

আজ ৮ মে বিশ্ব  থ্যালাসেমিয়া দিবস

আজ ৮ মে বিশ্ব  থ্যালাসেমিয়া দিবস । দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার ৮ মে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনাত সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রচারাভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

এছাড়া রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উপলক্ষে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। থ্যালাসেমিয়া একটি জন্মগত রক্তস্বল্পতাজনিত বংশগত রোগ।  বাবা-মা এ রোগের বাহক হলে সন্তান এ রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে। প্রতিবছরই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক । আর প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে,বর্তমানে দেশে মারাত্মক থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এ ধরনের রোগীর দেশের রক্ত চাহিদার এক তৃতীয়াংশ ব্যবহার করছে।

প্রতি বছর দেশে রক্তের চাহিদা ৬ থেকে ৭ লাখ ব্যাগ। বর্তমানে এ রক্ত চাহিদার ৩০ % পাওয়া যায় স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে। বাকি  ৭০  % রক্ত আত্মীয়-স্বজনদের দান করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে যদি মাত্র ১ জন রক্তদান করে তবে দেশের রক্তের এ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

 থ্যালাসেমিয়া অনেক ধরনের হতে পারে। তবে এর মেধ্যে থ্যালাসেমিয়া মেজর ও অপরটি বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের  ৩  % মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং প্রায় ৫ %  মানুষ হিমোগ্লোবিন-ই এর বাহক। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় বিটা থ্যালাসেমিয়া এবং হিমোগ্লোবিন-ই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।

এক পরিসংখ্যানে দেখাযায়, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার বাহক এবং প্রায় ১ লাখ শিশু প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা প্রতি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পরপর শরীরে রক্ত নিয়ে করে বেঁচে থাকে।

চিকিৎসকদের  মতে, পিতা-মাতার কারণে সন্তানরা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এর থেকে প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা এবং এ রোগের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা।

থ্যালাসেমিয়ার জিন বহনকারী নারী গর্ভবতী হলে তার সন্তান প্রসবের আগে অথবা গর্ভাবস্থায় ৮-১৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রি-মেটাল ডায়াগনোসিস করিয়ে নিতে হবে। এ পরীক্ষার ফলে যদি দেখা যায় অনাগত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তবে সন্তানটির মারাত্মক পরিণতির কথা ভেবে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা গর্ভপাত করার সুযোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

থ্যলাসেমিয়া মেজর ধরনের রোগীরা শিশুকাল থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। আক্রান্ত শিশুটি ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে ও দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় এরা জন্ডিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এ রোগে আক্রান্ত রোগী মারা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. জলিলুর রহমান বলেন,‘ থ্যালাসেমিয়া এমন একটি রোগ চিকিৎসায় যা ভালো করা সম্ভব নয়। এমনকি দেশে বর্তমানে কতজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা রোগী তারও সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তা কয়েক বছর আগের।

তিনি বলেন, ‘ উন্নত বিশ্বে থ্যালাসেমিয়া পুরোপুরি নিরাময়ে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে সে ধরনের সুযোগ নেই বললেই চলে। এছাড়া যাদের আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায় নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের আয়রন অপসারণ করা হয়, আর যাদের রক্তের প্রয়োজন হয় তাদের নিয়মিত রক্ত প্রদান করতে হয়ে। এছাড়া যাদের ফলিক এসিডের ঘাটতি হয় তাদের জীবনভর ফলিসন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়।’

ডা.জলিলুর রহমান বলেন,`একসময় সাইপ্রাসে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু নিয়মিত কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে তা কমিয়ে আনা সম্বভ হয়েছে। বাংলাদেশেও বাবা-মাকে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে এ রোগ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষ করে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকলে থ্যালাসেমিয়ার বিস্তার  অনেকাংশে নিয়ন্ত্রন সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুর রহিম বলেন,  ‘থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। প্রতিমাসে তাদের রক্ত গ্রহণ করতে হয়। নিয়মিত ওষুধ সেবন ও শরীরে রক্তগ্রহণ না করলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ অকেজো হতে শুরু করে। ’

প্রতিমাসে এদের রক্তগ্রহণ ও ওষুধ সেবনে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়, সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় অনেক পরিবারই এ রোগের চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ডা. রহিম এক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার চেয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

বার্তা কক্ষ
৮ মে ২০১৯