Sunday, 24 May, 2015 02:29:30 PM
নিউজ ডেস্ক, চাঁদপুর টাইমস :
নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাজধানী ঢাকার রেলপথে বেড়েছে চোরাচালানসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড। সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে রেলপথকেই বেছে নিয়েছে অপরাধীচক্র।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার অধীনে রেলপথের ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৮০ ভাগ স্টেশনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দর ও কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়া অন্য স্টেশনে নেই পুলিশি নিরাপত্তা। এ সুযোগে চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠছে রেলপথ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা রেলওয়ে থানার অধীনে ২৪টি রেলস্টেশন। এরমধ্যে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ৫টিতে। বাকি ১৯ স্টেশনেই নেই পুলিশি নিরাপত্তা।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য। সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকায় চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে অপরাধীচক্র ব্যবহার করছেন রেল। এছাড়া রয়েছে খুন, ছিনতাই, চুরি ও অজ্ঞানপার্টির উৎপাত।
ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চলতি বছরে গত ৪ মাসে মাদক, স্বর্ণ চোরাচালান, অস্ত্র ও অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার অপরাধে ৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৬৩টি।
এর মধ্যে গত মার্চে ৩৭ জনকে আটক হয়। এতে মামলা হয় ২৯টি। আটকদের কাছ থেকে অক্টোবর মাসে মোট আড়াই হাজার ইয়াবা ও বিপুল পরিমান বিদেশী মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে দুইটি বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়। সর্বশেষ শনিবার দুপুরেও ৪০০ ইয়াবাসহ দুইজনকে আটক করেছে জিআরপি থানা পুলিশ।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র মতে, ঢাকা রেলওয়ে থানা এলাকার সীমানা ঢাকা রুটে নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এবং গাজীপুর রুটে কাওড়াকান্দি পর্যন্ত অন্তত ৩০০ কিলোমিটার এলাকা। এ বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণে অন্তত তিন হাজার জনবল প্রয়োজন থাকলেও ঢাকা রেলওয়ে থানায় রয়েছে মাত্র তিনশজন জনবল। ফলে নির্বিঘ্নে ইয়াবা, স্বর্ণ ও অস্ত্রের চালান প্রবেশ করছে রাজধানীতে।
সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা রেলওয়ে থানার লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বিমানবন্দর ও কমলাপুর স্টেশন ছাড়া তাই অন্য কোন স্টেশনে যাত্রীদের তল্লাশির ব্যবস্থা নেই।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা মেইল ট্রেনগুলো সব স্টেশনেই যাত্রা বিরতি করে।তবে পুলিশি নজরদারি না থাকায় এসব ট্রেনে অবৈধ মালামালের চালান সহজেই রাজধানীতে প্রবেশ করে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে শত্রুকে হত্যা করতেও ব্যবহার করা হচ্ছে রেলকে। গত বছরের হিসেব অনুযায়ী ঢাকা রেলওয়ে থানা এলাকায় নিহতের সংখ্যা ২৯৮ জন। এরমধ্যে ৭টি হত্যা মামলা। এসব ঘটনায় সুষ্ঠু নজরদারি ও তদারকির ব্যাপারে জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এব্যাপারে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ বলেন, কি করবো বলেন? দরকার জনবল তিন হাজার, আছে মাত্র তিনশ। অল্প জনবল দিয়েই যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে সব স্টেশনে পুলিশ দেওয়া সম্ভব হয় না হলেও সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সদর দফতরের দাবি, পূর্ব রেলওয়ে এলাকায় কঠোর নজরদারি রয়েছে। তবে রাজধানীর ভেতরে কমলাপুর রেলস্টেশন হওয়ায় এখানে নজরদারি আরও বেশি।
রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি রুহুল আমিন বলেন, সারাদেশে রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে ৪০০টি। এরমধ্যে মাত্র ৫৮টি স্টেশনে দায়িত্ব পালন করার মতো জনবল রয়েছে আমাদের। এ কারণে সদিচ্ছা স্বত্ত্বেও সব রেলওয়ে স্টেশনে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ও নজরদারি রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জনবল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বেশ কিছু জনবল আমরা পাবো। নতুন জনবল পেলে নিরাপত্তা ও নজরদারি শক্তিশালী হবে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।