রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনে লাগা ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৫ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৩টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই চলছে লাশের সন্ধান। একের পর এক ব্যাগ ভর্তি করে লাশ বের করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা ৭৬ জন হলেও তা আরো বাড়তে পারে।
নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
চকবাজারের বাসিন্দা মো. মাহির হোসেন। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। ভাইকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলে পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন বোন নূর আনহা। বোনেরা খুঁজে পাচ্ছে না স্বামী সন্তানকে। নিখোঁজ রয়েছেন জহিরেরা। মৃতদের খোঁজে ঢামেকে আসছেন অনেকে। ভিড় জমতে শুরু করেছে হাসপাতাল। ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন সবাই। সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে স্বজনেরা।
ভাই আব্দুর রহিমকে খুঁজে পাচ্ছেন না ইসমাইল হোসেন। ঢাকা মেডিকেলে ছেলের খোঁজে এসেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি পুড়ে যাওয়া স্টেশনারি দোকান ওয়াসিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক।
চারদিকে অন্ধকার দেখছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। কি হতে কি হয়ে গেল বুঝে আসছে না কিছুই। এক নিমিষেই যেন সব শেষ হয়ে গেল সবার। এভাবেই কেঁদে কেঁদে বলছিলেন নিহতের স্বজনেরা।
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ভবনগুলোতে ভয়াবহ আগুন লাগায় ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে। কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ঢামেক। নিখোঁজদের সন্ধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন শত শত স্বজনেরা।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) মো. তারেক হাসান ভুঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে ৬৫ জনের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ৫৭ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৩টি শিশুর লাশ। লাশগুলো শনাক্তের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে রাখা হচ্ছে। স্বজনেরা এসে শনাক্ত করতে পারলে তাদের নম্বরগুলো জানানো হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল জুলফিকার বলছেন, এক একটি ব্যাগে একাধিক লাশ থাকতে পারে। তিন বলছেন ভেতরে আরো অনেক লাশ থাকতে পারে।
এর আগে রাজধানীর চকবাজার এলাকার নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের ওই ভবনে বুধবার দিবাগত রাত ১০টা ১০ মিনিটে আগুন লাগে।
তবে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছে। ভবনটির ছাদেও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্ট্রেচারে করে ব্যাগ ভর্তি করে একের পর এক লাশ বের করে নিয়ে আসছেন। কতজন দগ্ধ হয়েছেন তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। অর্ধশতাধিক ঢাকা মেডিক্যাল বার্ন ইউনিটে ভর্তি। ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাথমিক ধারণা গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের শতাধিক কর্মীসহ অনেকেই এখানে কাজ করছেন। নগরবাসী, দেশবাসী সবার দোয়া চাচ্ছি, যাতে করে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হলো আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। যারা আহত হয়েছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর আমরা ঘটনার তদন্ত করব। কেন, কিভাবে আগুন লেগেছে সে সম্পর্কে জানাতে পারব।
আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমি বাসায় ছিলাম, আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে আমার ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এখানের অলিতে গলিতে বিভিন্ন ধরনের মালামাল ছিল। প্রায় সবই পুড়ে গেছে।
ভিডিও দেখুন-
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীর ৪৩/১ নবাবকাটরায় পাঁচতলা বাড়িতে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় হারাতে হয় ১২৩ জনকে। আহত হয় কয়েক শ মানুষ। আপনজন হারিয়ে নিঃস্ব হতে হয় অনেক পরিবারকে। মূলত কেমিক্যাল গোডাউনের আগুনেই ওই দিনের অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে। গোডাউনের অতি দাহ্য রাসায়নিক পদার্থের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। (কালের কন্ঠ)
বার্তা কক্ষ
২১ ফেব্রুয়ারি,২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur