অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়।
জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনেও বিষয়টি তোলেন দুই এমপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আলোচিত সেই ইউএনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে এবার আরও একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ স্ট্যাটাসের মাধ্যমে প্রিয় শত্রুকে ভালোবাসার অভিশাপ দিয়েছেন ইউএনও।
মঙ্গলবার সকালে নিজের ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেন তিনি। ইউএনও হোসনে আরা বেগম বীনা স্ট্যাটাসে লিখেছেন,‘আমার প্রিয় শত্রু, কেন জানি না বারবার তোমার টার্গেটে পরিণত হয়েছি। পৃথিবীর এত মানুষ থাকতে তোমার টার্গেট শুধুই আমি কেন জানি না? সেটা কি শুধুই ঈর্ষা না অন্যকিছু তা এখনও আবিষ্কার করতে পারিনি। মনে পড়ে না কখনও তোমার মন্দ চেয়েছি বা তোমাকে অভিশাপ দিয়েছি। তবে এবার আমি না একজন মায়ের ভেতরের আত্মার দাবি ‘আমার সব প্রিয় ফুল, পাখি, ঝরা পাতা, ইটের দেয়াল, ধুলিকনা… আমার প্রিয় যা কিছু সব তোমায় ভালোবাসার অভিশাপ দেক।’
৪ ফেব্রুয়ারি হোসনে আরা বেগম বীনাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউএনও হোসনে আরা বীনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘আমি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সাধারণত ফেসবুকে খুব একটা শেয়ার করি না। তবে আজ মনে হল এখন চুপ করে থাকাটাও অন্যায়। তাই আজ আর না, আজ আমি বলব। আমি হোসনে আরা বেগম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণগঞ্জ সদর। মাত্র ৯ মাস আগে আমি এ পদে যোগদান করি। আমার দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও কোনো সন্তান লাভ করতে পারিনি। কিন্তু পাঁচ মাস আগে আমি জানতে পারি, আমি দুই মাসের সন্তানসম্ভবা। এ ঘটনা আমার জীবনে সৃষ্টিকর্তার অপার রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিশ্বাস আমি প্রতিনিয়ত বুকে ধারণ করেছি। এ বিশ্বাস ও স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনাগত সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি আমার বাবুকে পেটে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের আংশিক নির্বাচন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করি। একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে অজুহাত, ফাঁকিবাজির বিষয়গুলোকে কখনই পুঁজি করিনি। যখন যে পদে কাজ করেছি চেষ্টা করেছি শতভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। সন্তানসম্ভবা হয়েও এর কোনো ব্যতিক্রম করিনি আমি।’
‘অথচ আমি সন্তানসম্ভবা হয়েছি শোনার পর থেকেই একজন বিশেষ কর্মকর্তা, যার নাম বলতেও আমার রুচি হচ্ছে না, বিভিন্ন মহলে আমাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেই আসছিল। আমার সন্তানসম্ভবা হওয়াটাকে সে বিভিন্ন মহলে আমার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অথচ সন্তান পেটে নিয়েই আমি অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুপ্রেরণাও পেয়েছি’ উল্লেখ করেন ইউএনও।
স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে সদর ইউএনও প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমার এই নিষ্পাপ সন্তানটার কি অপরাধ ছিল? নাকি মা হতে চাওয়াটা আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল, আমি জানি না। তবে জানি একজন সব দেখেন তিনি আমার নিষ্পাপ মাসুম সন্তানের ওপর এই জুলুমের বিচার করবেন। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোনো কর্তাব্যক্তির কাছে আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তা কে বলব তুমি এর বিচার করো। আর যারা আমাকে একটুও ভালোবাসেন আমার নিষ্পাপ সন্তানটার জন্য দোয়া করবেন। সুস্থ হয়ে গেলে কোনো কষ্টের কথাই আমার মনে থাকবে না।’ (জাগো নিউজ)
বার্তা কক্ষ
২০ ফেব্রুয়ারি,২০১৯