Friday, 22 May, 2015 11:54:32 PM
স্পোটর্স প্রতিবেদক :
নিজের ক্রিকেটীয় প্রতিভার প্রমাণ রেখেছিলন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতেই, গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সাদা পোষাকে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই জুবায়ের হোসেন লিখন জানিয়ে দিয়েছিলেন বল হাতে, স্পিনের ভেল্কিতে তারকা হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার। এখন পর্যন্ত খেছেন ৩টি টেস্ট; ঝুলিতে ভরেছেন ১১ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৯৬/৫। অন্যদিকে, ২টি একদিনের ম্যাচ খেলে তার উইকেট সংখ্যা ৪টি।
এক বছর আগেও নেট বোলার হিসেবে জাতীয় দলের নেটে নিয়মিত বোলিং করেছেন সাকিব-তামিদের। আর এখন তিনি জাতীয় দলের বিশেষ করে টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। পাকিস্তান সিরিজে দলে থাকলেও খেলা হয়নি তার। অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা জাগলেও গোড়ালি ফুলে যাওয়ায় লিখন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ওই সিরিজে বাংলাদেশের দর্শকরা অতিথি পাকিস্তান দলের স্পিনার ইয়াসির শাহর লেগ স্পিনের কারুকাজ দেখে হতাশায় পুড়েছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা হয়েছেন পরাস্ত। ইয়াসির শাহকে সফল হতে দেখে দর্শকরা হা-হুতাশ করেছেন এই ভেবে যে জুবায়ের হোসেন লিখনকে কেন খেলানো হল না।
পাকিস্তানের পর এবার ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজের পালা। আগামী ১০ জুন থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত এক টেস্ট ও ৩টি ওয়ানডের সিরিজ। এই সিরিজ সামনে রেখে ঘোষিত বাংলাদেশের ২৩ সদস্যের প্রাথমিক দলে রয়েছেন লিখন। হয়তো ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের মূল স্কোয়াডে জায়গাও হতে পারে তার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তা পরিষ্কারও হয়ে যাবে; লিখন থাকছেন নাকি থাকছেন না।
অনেক দিন আগের কথা; লিখন বলেছিলেন, ‘জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে অনেক ভাল লাগছে। নেট বোলিং করতে আসার আগে আমি বয়সভিত্তিক দলে খেলেছি। অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছি; সেখানে ভাল করেছি। আমার লক্ষ্য ছিল, জাতীয় দলে খেলব। এটা পূরণ হয়েছে। এখন কেবল নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করতে চাই।’ জাতীয় দলে সেই পাকাপোক্ত জায়গা তৈরি করে নেওয়ার ক্ষেত্রটিতেই এখনো সংগ্রাম করছেন জুবায়ের হোসেন লিখন। আর সেই সংগ্রামে জিততে নিজেকে নিখুঁত ভাবে গড়ে তুলছেন কঠোর অনুশীলনে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে স্পিনারদের আসা-যাওয়া এখন অতি সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে! কারণ, ভাল পারফরম্যান্স দেখনো স্পিনারই রয়েছেন এক ঝাঁক। তাই চলছে তুমুল প্রতিযোগিতা। তবে লিখন কিন্তু এখনই বাতিলের খাতায় চলে যাননি। হয়তো বা তার অভিজ্ঞতা কম বলেই দলে একটু কম সুযোগ পাচ্ছেন। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের ভাষ্যমতে, জুবায়ের হোসেন তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। সে দলের সঙ্গে থেকে শিখছে। ভবিষ্যতে দারুণ কিছু হয়তো করবে।
জুবায়ের হোসেন লিখন লেগ স্পিনার বলেই হয়তো বা এত কথা উঠছে। লেগ স্পিনার রান দেবে; আবার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু দেবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের খেলাতে হবে। তবে এটাও ঠিক যে লেগ স্পিনাররা প্রচুর রান দেন বলেই তাদেরকে নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি অনেক সময় জুয়া খেলার মতো হয়ে যায়। বাংলাদেশ জুবায়েরকে নিয়ে সেই রকম জুয়া খেলবে কিনা, তা একটি প্রশ্ন বটে। কেননা, মাত্র ৭ মাস হয়েছে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলেছেন তিনি। তবে এত কিছু নিয়ে ভাবছেন না জুবায়ের হোসেন লিখন।
তিনি বলেছেন, ‘ম্যাচ খেলতে পারলে আমার জন্য অবশ্যই ভাল হতো; তারপরও খুব বেশি সমস্যা নেই। অনুশীলন যেভাবে হচ্ছে, তাতে করে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। অনুশীলনেই আমি আমার কাজগুলো ঠিক মতো করছি। ম্যাচের মতো করে ফিল্ডার সাজিয়ে বোলিং করছি। পাকিস্তানের স্পিন কোচ মুস্তাক আহমেদ আমাকে এমনই পরামর্শ দিয়েছিলেন।’
নিজেকে নিখুঁত করতে বদ্ধপরিকর লিখন; ‘এখন আমি তরুণ, আমার সামনে অনেক সময় আছে। আমি নিজের স্ট্র্যান্থ নিয়ে আরও বেশি কাজ করছি।’-এমন সব কথা আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টিতে বলে গেছেন লিখন। আসলে কেমন পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘আমার ভেরিয়েশন দুটি বলের। একটা ফ্লিপার, অন্যটি গুগলি। এই দুটি আরও নিখুঁত ভাবে করতে চাই। এগুলো নিয়ে কাজ করছি। লেগ স্পিনারের একটু সময় লাগে। আমি তাড়াহুড়া করছি না। আমি নিজেকে অনেক যোগ্য করেই দলে নিয়মিত হতে চাই। জানি, এটা অনেক কঠিন। দলে অনেক পারফরমার আছে। দৃঢ় বিশ্বাস রাখি, আমি একাদশে সুযোগ পাবই।’
সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন গত বছর ডিসেম্বরের ১ তারিখে; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি তার। অবশ্য ম্যাচ না খেলতে পারলেও হতাশ নন লিখন। তিনি স্থানীয় কোচ সোহেল ও জাতীয় দলের স্পিন কোচ রুহান কালপাগের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে না পারলেও হতাশ নন লিখন। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি খেলার অনেক চান্স ছিল। ম্যাচের দিন সকালে উঠে দেখি গোড়ালি ফুলে গেছে। তাই দুর্ভাগ্যবশত খেলা হয়নি। হতাশ হলে তো হবে না; সামনে অনেক সময় আছে। দেখা যাক, আল্লাহ কপালে কি রাখছেন!’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী। আমি তরুণ; আস্তে আস্তে যখন অনেক ম্যাচ খেলব, তখন অভিজ্ঞতা হবে। ক্রিকেটের ভাষায় একটা কথা আছে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। চেষ্টা থাকবে নিজেকে ডে বাই ডে ইমপ্রুভ করার। সময় অনেক আছে, অনুশীলন করছি; এর মধ্যে চেষ্টা থাকবে নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে আলাদা ভাবে কাজ করার।’
পাকিস্তান সিরিজ চলাকালে নাস্তার টেবিলে পাকিস্তানের কোচ মুস্তাক আহমেদের সঙ্গে স্পিন বোলিং নিয়ে নানা কথা বার্তা হয়েছে জুবায়ের হোসেন লিখনের। মুস্তাক আহমেদ তার বোলিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বলে জানালেন জুবায়ের হোসেন লিখন। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘মুস্তাক ভাই আমার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমার বোলিং অ্যাকশন আমি দেখেছি। সব কিছু ঠিক আছে। তুমি তরুণ, এখনো তোমার অনেক বয়স আছে। যত ম্যাচ খেলবে তত অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। মূল বিষয়টা হচ্ছে, ভয় পাওয়া চলবে না। লেগ স্পিনাররা ভয় পেলে সফল হতে পারে না। তারা রান বেশি দেবে এটাই স্বাভাবিক। তুমি যদি চিন্তা কর রান আটকাবে, তাহলে ভাল বোলিং করতে পারবে না। তোমার চিন্তা থাকবে তুমি যেভাবেই হোক ব্যাটসম্যানদের আউট করবে। সবসময় এই চিন্তাটাই থাকতে হবে।’
মুস্তাক আহমেদ ছাড়াও পাকিস্তানের লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহর কাছ থেকেও জুবায়ের হোসেন লিখন তার বোলিং সম্পর্কে প্রশংসা পেয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘খুলনাতে আমার বোলিং নিয়ে তার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। ও (ইয়াসির শাহ) আমাকে বলেছে, আমার গুগলিতে একটু সমস্যা আছে। এটা নিয়ে আরও একটু কাজ করতে বলেছে। এ ছাড়া আমার গ্রিপটা দেখছিল; আমি বল কিভাবে গ্রিপ করি।’
ভারতের বিপক্ষে মূল একাদশ সুযোগ পাবেন কি পাবেন না, তা সময়ই উত্তর জানা যাবে। তবে প্রিয় পাঠক, তৈরি থাকতে পারেন আগামীতে এক নিখুঁত লেগ স্পিনারকে দেখার জন্য। কেননা, জুবায়ের হোসেন লিখন দৃঢ় প্রত্যয়ী-তিনি নিুখঁত হয়েই মাঠে আসবেন।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।