Home / সারাদেশ / হেফাজতের তালিকাভুক্ত ব্লগাররাই জঙ্গিদের হিটলিস্টে
হেফাজতের তালিকাভুক্ত ব্লগাররাই জঙ্গিদের হিটলিস্টে

হেফাজতের তালিকাভুক্ত ব্লগাররাই জঙ্গিদের হিটলিস্টে

‎Friday, ‎22 ‎May, ‎2015   12:04:57 AM

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক :

জঙ্গিদের হিটলিস্টে রয়েছেন দেশের শতাধিক ব্লগার। একের পর এক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হেফাজতে ইসলামের ব্লগারদের তালিকা। আল্লাহ ও রাসুলকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিষোদ্গার করার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ৮৪ ব্লগারের তালিকা দিয়ে বিচার দাবি করেছিল হেফাজতে ইসলাম। তাদের দেওয়া তালিকার তিনজন আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ এরইমধ্যে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। এই তালিকার বাইরে থাকা আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকেও খুন করা হয়েছে। জঙ্গিদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে আসিফ মহিউদ্দিন নামের এক ব্লগার দেশ ছেড়েছেন। অন্য ব্লগাররাও রয়েছেন চরম আতঙ্কে। তবে ব্লগারদের কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে পুলিশের সাহায্য চান, তাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের একটি ধর্মীয় উগ্রপন্থী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের দায়ী করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও গোয়েন্দারা। ব্লগারদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত যারা ধরা পড়েছে, তাদের সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে ৮৪ ব্লগারের তালিকা দিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম, সেসব ব্লগার নয়টি ব্লগে লেখালেখি করতেন। এরমধ্যে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে নিহত অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগটি হেফাজতের তালিকার তিন নম্বরে ছিল। অন্য ব্লগগুলো হচ্ছে সামহোয়ার ইন ব্লগ, আমার ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, ধর্মকারী ব্লগ, নবযুগ ব্লগ, সচলায়তন ব্লগ, চুতরাপাতা ব্লগ ও মতিকণ্ঠ ব্লগ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হেফাজতে ইসলামের তালিকার ৮৪ ব্লগারের অনেকেরই ছদ্মনাম রয়েছে। সেসব ব্লগার হলেন, আরিফুর রহমান, মনির হাসান, বৃত্তবন্ধি, সবাক, শয়তান, মনজুরুল হক, ক খ গ, রাসেল, নাস্তিকের ধর্মকতা, দূরের পাখি, আরিফুল হক তুইন, তিতি আনা, নাজিম উদ্দিন, আলমগীর কুমকুম, ফরহাদ উদদিন স্বপন, দুস্যবনহুর, ফারহানা আহমেদ, ঘনাদা, রাহান, অন্যকেউ, পাপী ০০৭, হোরাস, প্রশ্নোত্তর, ভালমানুষ, ভণ্ডপীর, বৈকুণ্ঠ, সত্যান্বেষী, পড়ুয়া, হাল্ক (সানাউল), বিপ্লব ০০৭, রাস্তার ছেলে, ঘাতক, বিশাল বিডি, সাহোশি ৬, লাইট হাউজ, মমতা জাহান, রাতমজুর, কৌশিক, মেঘদূত, স্বপ্নকথক, প্রায়পাস, আহমেদ মোস্তফা কামাল, লুকার, নুহান, সোজাকথা, ট্রানজিস্টার, দিওয়ান, রিসাত, আমি এবং আঁধার, অরণ্যদেব, কেল্টুদা, আমি রোধের ছেলে, ভিন্নচিন্তা, আউটসাইডার, প্রণব আচার্য্য, আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, অন্য আজাদ, অনন্ত বিজয় দাস, আশীষ চ্যাটার্জি, অভিজিত রায়, বিপ্লব কান্তি দে, দাঁড়িপাল্লা ধমাধম (নিতাই ভট্টাচার্য), ইব্রাহীম খলিল সবাগ, (সুমন সওদাগর) কৈশীক, আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রাজিব হায়দার শোভন (থাবাবাবা), রতন (সন্যাসী), সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার (সৌম্য), আল্লামা শয়তান (বিপ্লব), শুভজিদ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ ও সুসান্ত দাস গুপ্ত, সৈয়দ কামরান মির্জা, তাহসিন, তন্ময় এবং তালুকদার ও জোবায়ের সন্ধি।

এই তালিকায় থাকা রাজীব হায়দার (থাবা বাবা) খুন হন ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। পরে জঙ্গি হামলার শিকার হন আসিফ মহিউদ্দিন। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়ে বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন থেকে দেশের বাইরে চলে যান। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশের বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় খুন হন অভিজিৎ রায়। এর এক মাসের মাথায় ৩০ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে। তিনি ৮৪ জনের তালিকায় না থাকলেও সিলেটে খুন হওয়া অনন্ত বিজয় দাশ ছিলেন এ তালিকায়। তাকে একই কায়দায় গত ১২ মে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাকে হত্যার পরও আনসার বাংলা-৮ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিদের কাজই হচ্ছে মতাদর্শ-বিরোধীদের হত্যা করা। তিনি নাস্তিক হোন, আর মসজিদের ইমাম হোন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে গত রবিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্লগারদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনও ব্লগার পুলিশের কাছে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে কোনও আবেদন জানায়নি জানিয়ে আইজিপি বলেন, ব্লগাররা নিরাপত্তা চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

ব্লগারদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনেরাও। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ১৯টি মানবাধিকার সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘হিউম্যান রাইটস ফোরাম'(এইচআরএফবি) একের পর এক ব্লগার হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্লগারদের হত্যার পুনরাবৃত্তি সত্ত্বেও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকরি কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ব্লগারদের হত্যাকাণ্ড দেশে প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার আন্দোলনের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকৃত নাম বা ছদ্মনাম কোনওটাই প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্লগার বলেন, একের পর এক ব্লগারদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। তবে এ হামলা তাদের আদর্শের ক্ষেত্রে কোনও বাধা হবে না বলে মনে করেন তিনি। তবে একটি স্বাধীন দেশে অযাচিত নিরাপত্তাহীনতার কারণে ব্যক্তিগতভাবে অপ্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে আমাদের। যা কারও কাম্য ছিল না।

নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কেন যাচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ব্লগার বলেন, থানায় নিরাপত্তা চাইতে গিয়ে আবার হিতে বিপরীত হয় কি না, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। যেখানে প্রকাশ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর খুনিরা চলে গেল, সেখানে তাদের আইনগত ব্যবস্থা নিয়েও সন্দিহান আমরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া তালিকা ও ব্লগার হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, আল্লাহ ও রাসুল (সা.) এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তিকারী ও বিদ্বেষপূর্ণ লেখালেখির জন্য রাষ্ট্রীয় আইনে সরকারের কাছে বিচার চেয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্লগারদের তালিকা দিয়েছিলেন। অন্যকোনও উদ্দেশ্য তাদের নেই। তাছাড়া হেফাজতে ইসলাম সব ধরনের নৃশংসতা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের বিরোধী। তাদের দেওয়া তালিকাটি মন্ত্রণালয় থেকেও ফাঁস হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫

 

নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।