জাতীয় নির্বাচনের ব্যস্ততা শেষ করে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা দিতে উদ্যোগী হয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ঠিক হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ কাজ শুরু হবে। এ লক্ষ্যে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হচ্ছে সেখানে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার কাজ শুরু করতে চান তারা। সব ঠিক থাকলে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাই প্রথম এ সুযোগ পাবেন।
এক দশক আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার দাবিও আলোচনায় আসে।
এর মধ্যে সরকার ভোটারদের হাতে বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু করলেও নানা জাটিলতায় প্রবাসীদের ভোটার করার প্রক্রিয়া আটকে থাকে।
কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গতবছর এপ্রিলে ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এখনই সম্ভব না হলেও তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র যাতে দেওয়া যায়, সেই সুপারিশ আসে সেখানে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেসব দেশে পাসপোর্ট, ভিসা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘ঝামেলা কম’, সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে এনআইডি সেবা চালুর পরিকল্পনা সাজিয়েছেন তারা।
“প্রাথমিকভাবে সিঙ্গাপুরেই পাইলট প্রকল্পের প্ল্যান করেছি। ছোট দেশ, সেখানে বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা দিতে পারলে পরে অন্য দেশেও কাজ করতে পারব।”
তিনি বলেন, “আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুরে যাবে, তারা সেখানে গভার্নমেন্ট টু গভার্নমেন্ট আলোচনা করবে। সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেবে।”
স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ইসির অনুমোদন পেলে মধ্য ফেব্রুয়ারিতেই প্রতিনিধি দলটি সিঙ্গাপুরে যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেজিস্ট্রেশন কীভাবে করা যায়, কোথায় নিবন্ধন সেন্টার হবে, লোকবল কেমন লাগবে, পদ্ধতিগত কী কী জটিলতা থাকতে পারে – সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তারা প্রতিবেদন দেবে।
সিঙ্গাপুরের পাইলট প্রকল্প সফল হলে এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্মার্ট কার্ডই দিতে চাই।”
বর্তমানে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। ইতোমধ্যে তাদের অধিকাংশের হাতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মত ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর তখনকার দুই নির্বাচন কমিশনার প্রবাসীদের ভোটার করার ও ভোট নেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফর করেন।
এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে, যার লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় এনে তাদের ভোট দেওয়ার পথ তৈরি করা।
কিন্তু তা না হওয়ায় এবং দেশে না ফিরে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নানা সমস্যা ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে এখনও। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সপ্তদশ সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত। আর ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের হিসাব পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ৭৫ লাখের মত। (বিডি নিউজ)
বার্তা কক্ষ
১২ জানুয়ারি,২০১৯
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur