চাঁদপুরে দিন দিনই বেপরোয়া হয়ে উঠছে সিএনজি স্কুটার। বেপরোয়া এবং দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা।
গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে সিএনজি স্কুটারের ৪০/৫০টি ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত জন।
এদের মধ্যে কয়েকজ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউবা আবার চাঁদপুর, কুমিল্লা, এবং ঢাকার বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এছাড়া গুরুতরব আহত হয়ে কারো হাত কারো পা, কারো চোখ হারিয়ে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কেউ কেউ পঙ্গুগুত্ববরণ করে অসহায় জীবনযাপন করছেন।
শনিবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) শনিবার দুপুরে চাঁদপুর- ফরিদগঞ্জ সড়কের ছোবহান বেকার মাহমুদ বাড়ির সামনে দু’টি বেপরোয়া সিএনজি স্কুটারের মুখোমুখি সংর্ঘষে বাবুল মিজি (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের ডান চোখ উপরে যায়।
একই সাথে তার কোমড় এবং হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন। এই ঘটনায় আরো ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বেপরোয়া এমন সিএনজি স্কুটার দুর্ঘটনায় চোখ হারানো বৃদ্ধ ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের চান মিয়ার পুত্র। এই ঘটনায় অপর জন গুরুতর আহত হলেন, শরীয়তপুর জেলার দক্ষিন তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত ছেরাজল হকের পুত্র ইমাম হোসেন খান (৪৫)।
এছাড়াও স্কুটারে থাকা আরো ৪ জন যাত্রী কম বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষনিক তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী হৃদয়, জুয়েল ও সামি জানান, আহতরা ফরিদগঞ্জ থেকে একটি সিএনজি স্কুটারে করে চাঁদপুরের দিকে আসছিলেন। তাদের বহনকারী সিএনজি স্কুটারটি ছোবহানপুর বেকার মাহমুদ বাড়ির সামনে পৌঁছলে হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বেপরোয়া সিএনজি স্কুটার মুখোমুখি সংঘর্ষ লিপ্ত হয়। এতে করে বৃদ্ধ বাবুল মিজির ডান চোখটি উপরে যায়। এছাড়াও অন্যান্য যাত্রীরা শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তাক্ত জখম হয়ে গুরুতর আহত হয়ে পড়লে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুদ্ধের অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্মরত চিকিৎসক তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষনিক তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন।
এদিকে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে সিএনজি স্কুটারটি দ্রুত পালিয়ে যায় এবং গাড়িটির কোনো নম্বর না থাকায় সেটিকে চিহ্নিতও করতে পারেনি কেউ।
এছাড়াও জেলার বিভিন্নস্থানে এমন বেপরোয়া অটোবাইক ও সিএনজি স্কুটারের অসংখ্য ছোট-বড় দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। আর ওইসব দুর্ঘটনায় অনেকেই আহত এবং নিহত হয়েছেন।
এছাড়াও চলতি মাসে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ, শাহরস্তি, হাজীগঞ্জ, মতলব, কচুয়া, হাইমচর, চান্দ্রা, বাবুরহাট, বহরিয়া, রঘুনাথপুর, ঘোষের হাট, ধানুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০/৫০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
যেসব চালক এসব দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন বা ঘটান, যাচাই করলে দেখা যায় তাদের মধ্যে অধিকাংশ চালকই অনভিজ্ঞ এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক। অথবা কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই কিংবা গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই। তাই তারা এসব ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে খুব সহজেই পার পেয়ে যান। আবার কোনো কোনো চালক দুর্ঘটনায় মানুষ মেরে নির্দিষ্ট জরিমানা দিয়ে অপরাধ থেকে মুক্তি পেয়ে যান।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে অবৈধ গাড়ির চালক অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, নম্বরবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্স বিহীন চালকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরো জোরালো অভিযান চালানো দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি