নির্বাচনের মাধমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে যার নাম গনতন্ত্র । কিন্ত অামাদের দেশে ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে এ প্রক্রিয়াটিকে কুলষিত করে ফেলা হচ্ছে।
নির্বাচনে সুক্ষ্ম ভোট কারচুপির কিছুরুপ পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো-
(১) যেমন মদনা একটি কেন্দ্র।এই কেন্দ্রটি “ক”” দল অধ্যুষিত। সুষ্ঠু ভোট হলে ৮০% ভোট “”ক”” দলের হরিণ মার্কা পাবে। এখন অাসুন এ কেন্দ্রে যারা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ভোটেের দিন দায়িত্ব পালনে দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা হরিণ মার্কা বিরোধিমত পোষণ কারি। তারা তখন চিন্তা করবেন ভোট যত কম কাষ্ট হয়, ততো ভাল । অার তা করার জন্য ভোট দিতে অাসা ভোটার কে নিয়ম মেনে নাম, বাবার নাম সহ ১৪ গোষ্ঠির ইতিহাস জিজ্ঞেস করে প্রকৃত ভোটার কিনা নিশ্চিত হবে।
তারপর পোলিং এজেন্টদের বলবে উনি সঠিক ভোটার ঠিক অাছে কিনা? স্বাভাবিক অবস্হায় একটি ভোট সম্পন্ন করতে যদি ১ মিনিট লাগে, অার বিভিন্ন প্রশ্নের কারণে তখন লাগবে ২ মিঃ। এ প্রশ্নের কারণে ভোট ধীরগতিতে হওয়ায় ভোটারদের লাইনও দির্ঘ হতে থাকবে। যার ফলে অনেকে বিরক্ত হয়ে লাইন ছেড়ে চলে যাবে। গরম কাল হলেতো কথাই নেই । দীর্ঘ লাইনের খবরটি সবাই যখন শুণবে, তখন অনেকে ভোট দেওয়ার জন্য অাসতে চাইলেও অাগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
তখন দেখা যায় ঐ কেন্দ্রে স্বাভাবিক ভোট হলে ১০ হাজার ভোটের মধ্যে ৮ হাজার ভোট কাস্ট হত, কিন্ত ধীরগতিতে ভোট হওয়ায় তার স্হলে ৫০০০ ভোট কাস্ট হলেঅ। তাহলে হরিণ কমপক্ষে ২৪০০ ভোট কম পেল। এই কারচুপি কিভাবে প্রমাণ করবেন, প্রমাণ করা যাবে না। এটি সুক্ষ কারচুপির অন্যতম অপকৌশল।
ঠিক একই কেন্দ্রে ভোট গ্রহন কর্মকর্তা গণ যদি হরিণ মার্কার প্রতি সহানুভুতিশিল হন, তাহলে তখন তারা শুধু ভোটারের সাথে ছবির মিল দেখে নামটি জিজ্ঞেস করেই অন্য কোন প্রশ্ন ব্যতিত দ্রুত ব্যালট পেপারটা দিয়ে দিবেন। তাহলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম সময় ভোটটা সম্পন্ন হয়ে গেল। দ্রুদ ভোট সম্পন্ন হওয়ায় তখন ভোটারদের লাইনও অার দির্ঘ হয়না। লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছেনা সংবাদ শুনে , যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া বিরক্তি মনে করে না অাসা ভোাটারেরা তখন ভোট দিতে অনায়াসে কেন্দ্রে চলে অাসে। দেখা গেল এ অবস্হায় দশহাজা্র ভোটের মধ্যে নয় হাজার ভোট কাস্টিং হলো।
এতে সমীকরণ দঁড়ান একই কেন্দ্রে ভোট গ্রহন কর্মকর্তাদের ভোট গ্রহণ পদ্ধতির কৌশলের কারণে ভোটের হিসাব দুই রকম হয়ে গোল
(২) শরিষা বাড়ি কেন্দ্র কলসী মার্কা অধ্যুষিত। এ কেন্দ্রে বিপুল ভোটারের উপস্হিতিতি দেখা গেল। নির্বিঘ্নে ভোট হলে কলসী মার্কা ৮০% ভোট পাবে, কিন্ত হরিণ মার্কার উদ্দেশ্য হল যে ভাবে হউক কেন্দ্রে ভোট কাষ্টিং যেন কম হয়। হরিণ মার্কা পক্ষের লোক কৌশল হিসাবে কয়েকটি ককটেল বিস্ফারণ ঘটিয়ে অাতংক সৃষ্টি করলেসাধারণ ভোটারেরা ভয়ে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়।চলে যাওয়া ভোটার গুলির মধ্যে পরে শান্তি পূর্ণ ভোট হলেও ১ ভাগের বেশী অাসে না।
অথবা হরিণ মার্কা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক গন্ডগোল বাধিয়ে দিলো। অার তখন অাইনশৃংখলা বাহিনী এসে লাঠিপেটা করে পরিস্হিতিতি স্বাভাবিক করে ।কিন্ত ভোট দিতে অাসা ভোটার গন যার যার মত চলে যায়। কেন্দ্র ফাঁকা। কিছুক্ষণ ভোটগ্রহন বন্ধ থাকার পরে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও চলে যাওয়া ভোটার এবং ভোট দিতে অাসা ইচ্ছুক সাধারণ ভোটারেরা গন্ডগোল হতে পারে চিন্তা করে ঝুঁকি মনে করে অার ভোট দিতে অাসেনা। যারফলে স্বাভাবিক অবস্হায় যে ভোট কাষ্টিং হত, গন্ডগোল হওয়ায় তার অর্ধেক অথবা অর্ধেকের কিছুটা বেশী কাষ্টিং হল।ফলে যারা গন্ডগোল লাগালো তাদের উদ্দেশ্য সফল। এটাও একধরনের সুক্ষ্ম কারচুপি।
এ কারচুপি থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো, যে কেন্দ্রে গন্ডগোল হয়ে ভোট গ্রহণ বিঘ্নিত হওয়ার পর পুনরায় ভোট গ্রহণ না করে পরবর্তি তারিখে ঐ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা।
(৩)সংখালঘু অধ্যুষিত, পাড়া বা গ্রামে ভোটার, এজেন্ট হতে পারে, বা কোন চিহ্নিত ব্যাক্তি কেন্দ্রে উপস্হিত থাকলে প্রতিপক্ষের ভোাট কর্মে বাঁধা সৃষ্টি সহ তাদের বিপক্ষে ভোট দিবে চিন্তা করে প্রভাবশালি, ক্ষমতাবান, ক্যাডার কর্তৃক নির্বাচনের পূর্বদিন কেন্দ্রে না অাসার জন্য তাদের কে নানা ভাবে হুমকি প্রদানসহ ওই সব পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন ভাবে মহড়া প্রদর্শন করে ভীতিসঞ্চারের মাধ্যমে ভোটারদের কে ভীত করা। এধরনের কর্মকান্ড একটা নিরীহ জনগোষ্ঠিকে নির্বাচনে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখে। যাকে বলে পরোক্ষ কারচুপি।
(৪)কিছু অন্ধ সমর্থক নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোট গণণা কালে এক মার্কার ভোট অন্য মার্কার ভিতর ডুকিয়ে গণে ফেলে।তবে বিষয়টি উপস্হিত পোলিং এজেন্ট অত্যন্ত ট্যালেন্ট হলে করা অসম্ভব হয়।
(৫)অাবার দেখা যায় কেন্দ্রটিতে ৮০% লোক কলসী মার্কার হয়। তাহলে দেখা যায় ওই কেন্দ্রে নিয়োজিত হরিণ মার্কার পোলিং এজেন্টরা অনেক দুর্বল বা তারা কলসী মার্কা সাপোর্ট করে, কৌশলগত কারণে হরিণের এজেন্ট হয়েছে, অথবা হরিণের এজেন্ট বিরোধী হলে ও তাদের যে কোন ভাবে ম্যানেজ করে অনুপস্হিত ভোটারদের ভোট গুলি জাল ভোটের মাধ্যমে অনায়েসে কলসি মার্কার পক্ষের লোকেরা দিয়ে দেয় । অাবার অনেক সময় এভাবে ও সমঝোতা হয় যে ৫ ভোট কলসীতে সীল দিবে অার একটা হরিণ অর্থাৎ ৫/১। এটাকে বলে সমঝোতার কারচুপি।
(৬) অাইনশৃংখলা বাহিনী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, সবাই সমঝোতার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে সীল মেরে যে ভোট হয় তাহাকে বলে সরাসরি কিংবা নির্লজ্জ কারচুপি।
আশা করি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এ ধরনের কারচুপি থেকে মুক্ত থাকবে।
লেখক : খন্দকার ইসমাইল
উপ-পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
২৯ নভেম্বর, ২০১৮
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur