প্রিয় চাচাজান,
পত্রে আমার সালাম গ্রহণ করিবেন, আশা করি পরিবারের সকলকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করিতেছেন! আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালই আছি। আপনি জানেন কাজকর্মের মহা ব্যস্ততার কারণে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিবার বাসনাটুকু থাকিলেও সময় করিয়া উঠিতে পারি না।
আপনার পুত্র অর্থাৎ আমার ভাই রবিন কেমন আছে তাহা জানাইতে ভুলিবেন না যেন। সুমি আপা নিশ্চয়ই স্বামী সংসার নিয়া সুখেই রহিয়াছেন প্রত্যাশা করিতেছি। বিবাহযোগ্যা বোন ঝুমিও নিশ্চয়ই বহাল তবিয়তেই আছে?
চাচাজান স্মরণ করিয়া দেখেন তো আপনার স্মৃতিতে আসে কিনা, ঝুমিকে আমার এক অপদার্থ বন্ধু সাগর পছন্দ করিয়াছিল! অপদার্থ বলিতেছি কারণ আপনি নিজেই ওকে অপদার্থ বলিয়া গালি দিয়াছিলেন, আরও কত বাজে কথা কহিয়াছিলেন…. রবিন ভাইতো পারে না ওর গলা কাইটা বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসাইয়া দেয়… ওর অপরাধ ছিল ও ঝুমিকে পছন্দ করিতো.. প্রেমপত্র দিতে যাইয়া ধরা খাইবার পরবর্তী মুহূর্তে আপনার আর রবিন ভাইয়ের আগমন! এক প্রেমপত্র দিতে যাইয়া সাগর-ঝুমি’র চারহাত যখন একসাথে, উহা তখন এতটাই খারাপ হিসাবে আবির্ভূত হইয়াছে যে আপনারা তাহার বাড়িতে যাইয়া চৌদগুষ্টির ঠিকানা করিয়া আসিয়াছিলেন…
চাচাজান সুমি আপু কহিয়াছিল সাগরের মত ছেলে তাহার নিজের ভাই হইলে তিনি কাইটা সাগরে ভাসায় দিতেন! আহা আমি ইহা ভাবিয়া খুবই তৃপ্ত হইয়াছিলাম যে- আমার চাচাজান, ভাই ও বোনেরা কতটাই না কঠোর, সকলে এরকম হইলে সকল অরাজকতা দেশ হইতে পলায়ন করিত!
চাচাজান কথা তাহা নয় কথা হইলো গিয়া, বহুল প্রচারিত ও প্রকাশিত একখান ছবি নিয়া রবিন ভাই সামাজিক মাধ্যমে কহিল, “এটা একটা পবিত্র দৃশ্য” আহা ভাই তো এমনই হওয়া উচিত। অন্যদিকে সুমি আপু কহিল, “এই ছবিখানা আমাদের দেখাইয়া দেয় কিভাবে সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করিয়া ভালবাসার জয় হয়।”
ফেইসবুক নামে যেই বুক আছে ওখানে আপনি নিশ্চয়ই একইভাবে কহিতেন, ঠিক কিনা চাচাজান! অন্যের মেয়ে, অন্যের বোনের সকল কিছুই ঠিকঠাক, বেঠিক শুধু আমার বন্ধু সাগর ও ঝুমি’র প্রেমপত্রখানা! জুকারবার্গ এর এই বইখান প্রায়শই আমাদের নিজস্ব সত্যিকারের চিন্তা চেতনার বাইরের জিনিস আমাদের দিয়া উপস্থাপন করায়! দেখেন না যে উদারতা নিজের বোনের জন্য বেঠিক তাহা অন্যের বোনের জন্য বেঠিকই হওয়ার কথা ছিল; তাহা কিন্তু হয় নাই, সব দোষ ওই ব্যাটা জুকারবার্গের!
চাচাজান আমি যারপরনাই বিস্মিত, ঠাহর করিতে পারি না কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক? পত্রে বোঝাইয়া কহিবেন এই আশা রাখিতেছি।
তবে গরীবের কানে ভুলেও আর কহিবেন না
“আমার বউ, আমার বউ!
তোমার বউ, আমার বউ”
বিশেষ দ্রষ্টব্য :
শেষ কথা চাচাজান, আপনাদের খালি ফেইসবুকেই দেখি, সম্পর্কগুলো ফিঁকে হইয়া যাইতেছে, ওই দুনিয়া হইতে বাহির হইয়া একটু বাস্তবেও ফিরিয়া আসিবেন, ইহাই কামনা প্রিয় চাচাজান আমার।
(আমার চাচার কাছে লেখা চিঠির সাথে কেহ সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার মিল খুঁজিয়া পাইলে তাহা ঘটনার কাকতাল মাত্র! এতে আমার ও আমার চাচাজানের কোনো দায় নেই)।
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)
(লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)