Home / জাতীয় / মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে
Hasina
ফাইল ছবি

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে

সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রচ্ছন্নভাবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে তাঁর সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। কাজেই আমরা কেবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি এ বিষয়টি দেখার জন্য।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সাবেক আমলাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যাঁরা আলোচনা করেন, মন্তব্য করেন, তাঁদের না হাইকোর্ট সম্পর্কে জ্ঞান আছে, না আপিল বিভাগের কোনো রায় সম্পর্কে ধারণা আছে। তাঁরা সেগুলো বেমালুম ভুলে যান।’

কোটা সংস্কার নিয়ে বিএনপি যখন কিছু বলে, তখন তা আমলে না নিলেও শিক্ষকদের ‘ভুল’ মানতে কষ্ট হয় বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন বলে, তখন আমি কিন্তু মনে করি না। যত বড় ব্যারিস্টার হোক, আর জ্ঞানীই হোক; তারা তো মিথ্যা কথা বলায় পারদর্শী। তারা তো বলবেই। তাদের কথায় কিছু আসে যায় না। আমাদের সমাজের যাঁরা শিক্ষিত, যাঁরা শিক্ষক; তাঁরা এ ধরনের ভুল কী করে করেন! আমি বলেছি যে আপিল বিভাগের নির্দেশ আছে, শূন্যস্থান মেধা তালিকা থেকে পূরণ হবে।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, কোটাই আর তিনি রাখবেন না। কিন্তু গত সপ্তাহে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ওই কোটা বহাল রাখতে হাইকোর্টের রায় আছে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

কোটা ‘বাতিলে’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মন্ত্রিপরিষদসচিবকে প্রধান করে ইতিমধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘোষণা’ অনুযায়ী কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।

গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যেমে কক্সবাজার জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা (জিটুপি) সরাসরি ব্যাংক হিসাবে জমা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা হঠাৎ দেখলাম, বাংলাদেশে খুব কোটাবিরোধী আন্দোলন।’

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বংশানুক্রমিকভাবে যাতে চাকরি পেতে পারে, সেই সুযোগ যাতে পেতে পারে, এভাবেই করে দিই। অন্তত রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যেন দায়িত্ব রাখতে পারে, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সাথে সাথে এটাও দেখতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী যারা, যুদ্ধাপরাধী যারা, তারা যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় না আসতে পারে, রাষ্ট্রীয় কোনো পজিশন না পায়, সেটাও দেখতে হবে।’

কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বিষয়ে রিট হওয়ার পর হাইকোর্ট হুকুম দিলেন, কোটা থাকবে, পদ শূন্য থাকবে। রিভিউয়ে বললেন, কোটা পূরণ করে শূন্য পদ থাকলে সেটা তালিকা থেকে নেওয়া যাবে।’

কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে এবং টেলিভিশন আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সাবেক আমলাদের কেউ কেউ কোটা সংস্কারের পক্ষে কথা বলায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ হয়, আমাদের জ্ঞানী, গুণী, শিক্ষিত… দেখি ইউনিভার্সিটির শিক্ষক টক শো করেন, সরকারি আমলা রিটায়ার্ড, তাঁরাও কথা বলেন এই কোটার বিরুদ্ধে।’

কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁরা ওই কথা কখনো বলেন না, এই ছাত্ররা আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, লুটপাট… এর চেয়ে গর্হিত কাজ শিক্ষার্থীর জন্য আর কী হতে পারে! সেটা নিয়ে তাঁরা কোনো উচ্চবাচ্য করেন না। আর দুঃখ লাগে, আপিল বিভাগের নির্দেশনার কথাও তাঁরা যেন জানেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অত্যন্ত মেধাবীরাই সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়। তিনি বলেন, ‘যারা পরীক্ষা দেয়, তারা কি মেধাবী না? তারা সকলেই মেধাবী। পিএসসি তো যথেষ্ট কঠিন। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ছাড়া ওই পরীক্ষা কেউ দিতে পারে না। অত্যন্ত মেধাবী হলে তারা পাস করতে পারে।’ কোটার সুযোগে কম মেধাবীরা সরকারি চাকরি পাচ্ছে বলে যাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন কী মেধাবী হয়ে গেল যে যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, পাস করছে, তারা মেধাবী না, এরা এ ধরনের কথা বলে কিভাবে?’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভর্নমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রম গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্সে গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকরা অংশ নেন। এ সময় আরো সাতটি জেলা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এই কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৭ লাখ ভাতাপ্রাপ্ত মানুষ প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোনে এসএসএম পাওয়ার পর সরাসরি ব্যাংক থেকে তাঁদের প্রাপ্ত ভাতা তুলতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে, তিনি যদি চান। তবে তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই। মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সচিব অপরূপ চৌধুরী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।

Leave a Reply