সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও জেলা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অবস্থান এবং একাধিক ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
ক্রসফায়ার থেকে নিজের জীবন বাঁচাতে জেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা এখন গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। তারা দূরে আত্মগোপনে গিয়ে যে যেখানে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে।
তবে এদের মধ্যে অনেকেই আবার মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অনেকটা আগে ভাগে থেকেই তাবলিগ জামাতে গিয়ে অথবা দাড়ি-টুপি পড়ে ধর্মীয় কাজে মনোযোগী হয়েছে।
জীবীকার প্রয়োজনে কেউ কেউ বেঁছে নিয়েছে ছোটÑখাট ব্যবসা। এছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদক সেবনকারীরাও বেশ আতঙ্কে রয়েছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে জানা গেছে।
গ্রেফতার আর ‘ক্রসফায়ার’ থেকে বাঁচতে তাদের অনেকেই এখন মাদকসেবন ছেড়ে দিচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয়ে মাদক ব্যবসায়িদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারপিপিএম।
জেলা পুলিশ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত আঠারো দিনের ব্যবধানে চাঁদপুর সদর সহ ৪ উপজেলায় ৪টি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ক্রসফায়ারে ৪জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার মাদক বিক্রেতারা আরো বেশী আতঙ্কিত হয়ে পরেছে। সর্বশেষ ৬জুন চাঁদপুর সদর উপজেলাতেও ‘ক্রসফায়ারে’ ইউনুছ মিজি নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়।
পুলিশ জানায় ইউনুছ মিজি দীর্ঘদিন ধরে পুরাণবাজারে মাদক বিক্রি করে আসছিলো। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে থানায় ৮টি মাদকের মামলা রয়েছে। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় গত কয়েক বছর ধরে ইউনুছ মিজি মাদক বিক্রি ছেড়ে দিয়েছে।
তবে ‘ক্রসফায়ারে’ ইউনুছ মিজির মৃত্যুর খবরে পুরাণবাজার এলাকা জুড়ে এখনো থম থমে ভাব বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর ও সচেতন মানুষের মতে, চাঁদপুর সদরে ইউনুছের চেয়েও আরো বড় বড় মাদক ব্যবসায়ি এবং তাদের গডফাদার রয়েছে। তাদের দাবি ওইসকল বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের গডফাদারদেরকেও আটক করে ক্রস ফায়ারে দেয়া হোক।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী চাঁদপুর শহরের প্রতিটি এলাকা ভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ি ও সরবরাহকারী রয়েছেন ১৫/২০ জন। এ কারণে এক-দু’জন ক্রসফায়ার দিলে হবে না। এর পাশাপশি মাদক আমদানির যে সব রুট রয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও একমাস ধরে এই অভিযান চললেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে আছেন আরো একাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি। নতুন নতুন মাদক বিক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান কামনা করেন পর্যবেক্ষক মহল।
প্রসঙ্গত, গত চাঁদপুর জেলা পুলিশের আওতাধিন সকল থানা, ফাঁড়ি ও ডিবি পুলিশের পৃথক অভিযানে গত ১৮ দিনে ’ক্রস ফায়ারে’ ৪ মাদক কারবারী নিহত হয়েছে। এছাড়াও এই অভিযানে ১১০ জনকে আটক, ৭৫টি মামলা দায়ের এবং তাদের কাছ থেকে অ¯্রসহ বিপুল পরিমানে নিষিদ্ধ ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা পুলিশের মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম এর তত্ত্ববধানে জেলার সকল থানা, পুলিশ ফাড়ি এবং জেলা গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ সদস্যরা এই অভিযানে অংশ নেয়।
অভিযানে ২০ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত পুলিশের সাথে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে কচুয়া উপজেলার মাদক ব্যবসায়ী ৫টি মাদক মামলার আসামী বুলবুল, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৭ মাদক মামলার আসামী সেলিম, ফরিদগঞ্জের ১০টি মাদক মামলার আসামী আবু সাইদ ওরফে লাল বাদশা এবং চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারে ইউনুছ নিহত হয়। পৃথক এই চারটি বন্ধুক যুদ্ধে আহত হয়েছে ১৮জন পুলিশ সদস্য।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম