Saturday, April 11, 2015 01:32:49 PM
বিনোদন ডেস্ক :
নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেছেন কলকাতার টিভি অভিনেত্রী দিশা গাঙ্গুলি। ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে তার নিজের বাড়ির দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে তার মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। এদিকে তার আত্মহত্যার খবরে তার এক অভিনেত্রী বান্ধবীও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ এই দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে। সঙ্গে এটাও ধারণা করা হচ্ছে দিশার সঙ্গে তার বান্ধবীর অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল।
দিশা ও তার বান্ধবীকে ঘিরে মিলছে সম্পর্কে জটিলতার সূত্র। সম্পর্কের টানাপোড়েনই কি দিশাকে ঠেলে দিল মৃত্যুর দিকে? এখন এমন প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একটি বাংলা টেলি সিরিয়ালেই বছরখানেক আগে দুজনের আলাপ। ঘনিষ্ঠতা এতই বাড়ে যে দিশার ফ্ল্যাটেই থাকতে থাকেন ওই অভিনেত্রী। ব্যাঙ্কেও ছিল জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট।
দিশা ও সুচন্দ্রা একই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। এ বিষয় থেকেই মূলত তাদের সম্পর্কের বিষয়টি ধারণা করছেন সবাই। অন্যদিকে মায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মায়ের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিশা উঠে গিয়েছিলেন পর্ণশ্রীতে নিজের ফ্ল্যাটে। সেখানেই আসতে থাকেন বরাহনগরের মেয়ে সুচন্দ্রা। তিনি নিজেও একজন অভিনেত্রী। দিশার সঙ্গে সম্পর্কের জেরেই তিনি তার পর্ণশ্রীর ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকা শুরু করেন। কিন্তু, এই সম্পর্কে আপত্তি ছিল দিশার মায়ের। ৬ মাস আগে নাইরোবি থেকে ফিরে সুচন্দ্রাকে ওই ফ্ল্যাট থেকে তাড়িয়ে দেন দিশার বাবা। কয়েকমাস আগে, ফের একটি সিরিয়ালে কাজের সুযোগে কাছাকাছি আসেন দিশা ও তার বান্ধবী।
গত ৩১ মার্চ কলকাতায় ফেরেন দিশার বাবা। সপরিবারে মন্দারমণি বেড়াতে যান তারা। সেখানেই ভিভানের সঙ্গে দিশার বিয়ের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়।
এরপর ৩ এপ্রিল এই নিয়ে একটি ঘরোয়া পার্টিও দেন তারা। ৫ এপ্রিল বাবা-মা নাইরোবি ফিরে গেলে, দিশা আবার তার বান্ধবীকে ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন। বিয়ের সম্পর্কে দিশা খুশি ছিলেন না এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে এখন। ঘটনার আগের দিন দিশার ফ্ল্যাটে আসেন ভিভান। সম্ভবত তখনই দিশা বুঝে যান পারিবারিক চাপে তার ইচ্ছেকে দাম দেওয়া আর কিছুতেই সম্ভব নয়।
বুধবার রাতে একটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখার পর, ভিভানের বাড়িতে ডিনার সেরেছিলেন দিশা। এ নিয়ে তার বান্ধবীর সঙ্গে ভিভানের ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এরপর নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে দিশার বান্ধবী তাদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টাও করেন।
এদিকে রাতে বাড়ি ফেরার পরেও ভিভানের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন দিশা। সকালে বারবার ফোনে সাড়া না পেয়েই দিশার বাড়ি ছুটে যান ভিভান। তারপর দুপুরে উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। দুটি সম্পর্কের টানাপোড়েনই কি দিশাকে ঠেলে দিল মৃত্যুর দিকে?
এক বাচ্চা মেয়ের খাওয়া পরা, পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন দিশা। ঘটনার দিন সে স্কুলে যাওয়ার পর্যন্ত কোনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পায়নি। সামাজিক ও পারিবারিক চাপের মুখে পড়ে আর কোনো রাস্তা দেখতে পাননি দিশা। তাই বোধহয় বাধ্য হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
দিশার এই রহস্যমৃত্যুর খবর শুনে অবাক অভিনেতা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়। ‘তুমি আসবে বলে’ সিরিয়ালে দিশার সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে ফাল্গুনী জানান, ‘ স্টার জলসার একটা পার্টি হয়েছিল ক’দিন আগেই। সেখানে ওকে একটু টেন্সড দেখাচ্ছিল।একটু কম কথা বলছিল খেয়াল করছিলাম। কিন্তু তার ফলে যে এরকম ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনা।’
এদিকে দুই বন্ধুর সম্পর্কে কোনো জটিলতার কথা মানেনি ওই পরিবার। বরানগরের কুঠিঘাট এলাকায় একটি আবাসনের ফ্ল্যাটেই বাস দিশার বান্ধবীর। বাবা পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মা গৃহবধু। পরিবারের লোকেরা জানাচ্ছেন বুধবার রাত দুটোয় সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরেছিলেন ওই অভিনেত্রী। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক পরিচিতের কাছে দিশার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েই অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়েপড়েন তিনি। নিজেই গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। দুপুর দুটোয় হাওড়া জিপিআর থেকে আসে তার আত্মহত্যার চেষ্টার খবর।
হাওড়া থেকে নিয়ে এসে গড়িয়ায় একটি নার্সিংহোমে ওই অভিনেত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে। দিশার মৃত্যুতে তিনি যে গভীরভাবে আহত হয়েছেন, তা মেনে নিচ্ছেন পরিবারের লোকেরা। তবে, সম্পর্কে জটিলতার কথা মানতে চাননি তারা। দিশার বাড়িতে তার বান্ধবীর একটানা থাকার কথাও স্বীকার করেনি পরিবার।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015