দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে বেশ কয়েকদিনের ঝড় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের পাকা ও কাঁচা ধান এবং ভ্টুার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও মৌসুমের দেরিতে যারা ভুট্টার আবাদ করেছে সে সব কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। এ যেন পাকা ধানের মই। কৃষকের চোখে মুখে তাই হতাশার ছাপ। কষ্টের সোনালী ফসল কীভাবে ঘরে তুলবেন সে চিন্তায় দিশেহারা।
সম্প্রতি কয়েকদিনের ঝড় বৃষ্টিতে থাকায় নষ্ট হচ্ছে মাড়াই করা ধান। চোখের সামনে এ ক্ষতি তারা কিছুতেই মানতে পারছে না। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা নৌকা দিয়ে জমিতে গিয়ে ধান কেটে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এতে শ্রমিক ও পরিশ্রম দুটোই বেশি লাগছে।
তবে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি থাকলেও প্রকৃৃতিক কালো থাবায় মুখের হাঁসি হয়ে গেছে মলিন।
সম্প্রতি সরজমিনে সেচ প্রকল্পের ব্রাহ্মনচক, মরাধন, হানিরপাড়, তালতলী, মিঠুরকান্দি, অলিপুর, রুহিতারপাড়, কালীপুর, সুজাতপুর, কৃষ্ণপুর, ঠাকুরচর বিলে গিয়ে দেখা গেছে বৃষ্টির পানি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকরা পাকা ও আধা পাকা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও ছোট ঝিনাইয়া, তালতলী, বৈদ্যনাথ পুর, হরিনা, ঘাসির চর, নিশ্চিন্তপুর, সুজাতপুর এলাকার ভুট্টার ফলন সহ গাছ মরে গেছে। ফলে কৃষককে পুরোদমে লোকসান গুনতে হবে। এতে তারা বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এ মৌসুমে ১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে ভূট্টা এবং ৯ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তালতলী গ্রামের কৃষখ আব্দুল মান্নান বেপারী (৪৮) বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে নৌকা দিয়ে জমিতে ধান কেটে ডাঙ্গায় নিয়ে যাই। এতে আমাদের পরিশ্রম ও ব্যয় বেশি লাগছে।
ঘনিয়ারপাড় গ্রামের ভুট্টা চাষি রহিম উদ্দিন মোল্লা (৪০) জানান, দুলাল কান্দি বিলে তিনি ১শ ১০ শতক জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে পানি আটকিয়ে থাকার কারণে জমির ভুট্টা গাছ ও ফলন নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মরাধন বিলে কথা হয় আরিফ উল্যাহ মাষ্টারের সাথে। তিনি জানান তার ১৩ শতক জমিতে ধান হয়েছে মাত্র ১০ কেজি। অলিপুর নয়াকান্দি গ্রামের শাহালম লস্কর (৫৫) জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তারা বাধ্য হয়ে আধা পাকা ধান কাটছেন। তিনি জানান, ধান যদি না পাই গো-খাদ্য তো হবে।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা এসোসিয়েশন সাধারন সম্পাদক সরকার আলা উদ্দিন জানান, কালীপুর, উদ্দমদী পাম্প মেসিনগুলো দিন রাত পানি টানছে। তবে ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে পাম্প মেশিন বন্ধ থাকে। মেঘনা ধনাগোদা (পওর) বিভাগ উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অকারণে পাম্প মেশিন বন্ধ থাকে না। ঝড় বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ না থাকলে হয়তো বন্ধ থাকতে পারে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালা উদ্দিন বলেন, এ মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো বড় ধরনের প্রাকৃৃতিক দুর্যোগ না হলে উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে। তিনি জানান, এ মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার ৮শ ২৯ মেট্রিক টন। পক্ষান্তরে ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৩শ মেট্রিক টন।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, এ মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষক ঠিক মতো সোনালী ধান ঘরে তুলতে পারলে ন্যায্য মূল পাবে।
প্রতিবেদক : খান মোহাম্মদ কামাল