কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সালিশ বৈঠকের নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী, চার সন্তানের জননী আসমা আক্তারকে প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় বাদল সরকার (৪৫) নামের আরো এক জনকে গ্রেফতার করেছে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ।
শুক্রবার(১৫ সেপেটম্বর) বিকালে দাউদকান্দির বড় গোয়ালী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে ওই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
এরই মধ্যে ২ জনকে আটক করা হলেও নির্যাতনকারী মিন্টুকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত ৩১ জুলাই জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের বেকিসাত পাড়া গ্রামে এ নির্যযাতনের ঘটনা ঘটে।
নির্যাতিতা আসমা আক্তার ওই গ্রামের সামছু ব্যাপারীর পুত্র প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী।
এ ঘটনায় আসমার বোন নারগিস আক্তার বাদী হয়ে গত ৩ আগস্ট ৫ জনকে আসামি করে দাউদকান্দি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করে।
জানা যায়, প্রবাসী কবির হোসেনের স্ত্রী আসমা আক্তার ৪ সন্তানের জননী।
ঘটনার রাতে পরকীয়ায় জড়িত অভিযোগে পার্শ্ববর্তী বারপাড়া গ্রামের আলম নামে এক ব্যক্তিকে ডেকে এনে জোর করে আসমার ঘরে আটকে রাখা হয়। আটক দু’জনের উপর রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন চালিয়েছেন প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল, বাবুল, মিন্টু, মোস্তাক ও অপর এক ভাই খোকনের স্ত্রী শিল্পী।
পরদিন সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারের উপস্থিতিতে সামাজিক বিচারের আয়োজন করা হয়। এসময় সালিশ বৈঠক চলাকালে প্রতিবেশি মিন্টু মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাঠি নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমার উপর নির্যাতন চালায়।
এছাড়াও বেধরক পেটানো হয় আটক আলমকেও।
তাদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় ৩ আগস্ট আসমার বোন বাদী হয়ে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসামি প্রবাসী কবিরের ভাই সাইফুল ও একই গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে বাবুলকে আটক করে।
মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছে একই গ্রামের মোবারকের ছেলে মিন্টু, বারেক মিয়ার ছেলে মোস্তাক ও নির্যাতিতা আসমার জাঁ শিল্পী।
এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বারপাড়া উনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার বলেন, বিষয়টা তাদের পারিবারিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনার প্রধান আসামি সাইফুলসহ অপর আসামি বাবুলকে আটক করা হয়েছে, নির্যাতনকারী মিন্টুকে আটক করতে অভিযান চলছে।
এ ব্যাপারে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলম বলেন, ‘উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নে গ্রাম্য সালিশের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় আসমা আক্তারকে প্রকাশ্যে প্রহারের ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদারকে এ সংক্রান্তে কৈফিয়ত তলব করা হলে জবাব পাওয়া যায়। যা অসন্তোষজনক মনে হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টিতে অধিকতর সঠিক তথ্যের জন্য একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে; মূল আসামিসহ ২ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরাও শিঘ্রই ধৃত হবে।’
সামগ্রিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করি সবাই বিচারের সম্মুখীন হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয় ও এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
প্রতিবেদক:জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল