Home / জাতীয় / ১শ’ বছর পর এ প্রথম বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি
Tiger-sondurbhan

১শ’ বছর পর এ প্রথম বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি

একবিংশ শতাব্দী যুক্তি নয়, প্রযুক্তির সময়। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার সময় মানুষ যত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি ততই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানান কারণে প্রকৃতির নানান অনুষঙ্গ আজ হুমকির মুখে।

সাগরের দৈত্য তিমি থেকে ডাঙ্গার বাঘ পর্যন্ত এই হুমকির বাইরে নয়। প্রতিবছরই নতুন নতুন পরিসংখ্যানে বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার সংবাদ জানা যাচ্ছে। আর যখনই কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়, তখনই তোরজোর শুরু হয়ে যায় সেই প্রাণীটি রক্ষায়।

সম্প্রতি গবেষকরা এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছেন যে, অবিশ্বাস্যভাবে গত একশ বছরের মধ্যে এই প্রথম প্রাকৃতিকভাবেই বাঘের সংখ্যা বাড়ছে।

২০১০ সালে যেখানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল ৩২০০, ২০১৬ সালের শুরুতে সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৮৯০। ছয় বছরে প্রকৃতির হিসেবে এই বৃদ্ধির সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও, সার্বিক বিচারে এই বৃদ্ধির সংখ্যা আশাব্যাঞ্জক।

কারণ আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বিভিন্ন কারণে বাঘ হত্যার মতো ঘটনা খুবই সাধারণ। শুধু মানুষের হাতে বাঘ হত্যাই কারণ নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃহত বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাঘের জন্মহার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এত কারণ থাকার পরেও যে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে এটা সত্যিই আশাপ্রদ সংবাদ।

ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেশন(ডব্লিউডব্লিউএফ) সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জিনেত হ্যামলির মতে, ‘বিশ্বের অন্যতম একটি প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি ভালো অগ্রগতি। সরকার, স্থানীয় সম্প্রদায়, দাতাগোষ্ঠি এবং বেসরকারি সংস্থাদের নিয়ে বাঘ রক্ষায় এখনই আমাদের এগিয়ে আসা উচিত।

২০২২ সালের মধ্যে যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে চাই তাহলে আরও অনেক কাজ করা দরকার এবং সেই কাজের জন্য চাই বিনিয়োগ।’

গত ২০১২ সালে বাঘ প্রধান অঞ্চলগুলোর সরকার প্রধানেরা একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুন হবার কথা। বলা হচ্ছে, প্রাকৃতিক উপায়ে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সংবাদের প্রেক্ষিতে বাঘ প্রধান অঞ্চলগুলোর সরকার প্রধানরা পুনরায় আলোচনায় বসতে পারে, বাঘ সম্পর্কে সম্ভাব্য কর্মসূচী নির্ধারণে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, বাঘ হত্যার পরিমান আফ্রিকায় কমে গেলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এখনও আশঙ্কাজনক হারে বাঘ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বাঘকে কেন্দ্র করে এশিয়ায় গড়ে উঠেছে বিশাল কালোবাজার, যেখানে অনেকগুলো দেশের সিন্ডিকেট জড়িত।

প্রাপ্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আছে ১০৬টি বাঘ। পর্যায়ক্রমে ভূটানে ১০৩, ভারতে ২২২৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৭১, মালয়েশিয়ায় ২৫০, নেপালে ১৯৮, রাশিয়ায় ৪৩৩, থাইল্যান্ডে ১৮৯টি বাঘ আছে। জিনেক হ্যামলির মতে, এই পরিসংখ্যান বেশ ইতিবাচক এবং রাশিয়া, ভারত, নেপাল এভং ভূটান সরকার বাঘ রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে একটি বাঘিনী ও তার সন্তানকে হত্যার দায়ে তিনজন ব্যক্তিকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সরকার।

তবে বিশ্বের প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূমি হলো বাঘেদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। তাই বিভিন্ন প্রাণী অধিকার সংস্থা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বাঘ সংরক্ষণের উপর জোর দেয়া হয়েছে বারংবার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশে যে সংখ্যক বাঘ থাকা দরকার তার চেয়ে ৭৫ শতাংশ কম রয়েছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতা রক্ষার জন্য হলেও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। (বাংলামেইল)

: আপডেট ২:৫০ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ