Home / শীর্ষ সংবাদ / ৮ বছরে দেশে ইলিশ উত্পাদন দ্বিগুণ

৮ বছরে দেশে ইলিশ উত্পাদন দ্বিগুণ

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে,গত ৮ বছরে আমাদের ইলিশ উত্পাদন দ্বিগুণ। ২০০৭-০৮ অর্থ বত্সরে ইলিশ উত্পাদিত হইয়েছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৪ লাখ ৯৬ হাজার টনে উন্নীত হয়। ।

যখন ইলিশ উত্পাদনকারী সকল দেশে ইলিশের উত্পাদন কমছে,তখন আমাদের এ সাফল্য আশাব্যঞ্জক। মূলত মা ইলিশ সংরক্ষণ, জাটকা নিধনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ,ইলিশ রপ্তানিতে সাময়িক বিরতি,নদীর মোহনায় ইলিশের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা,চার জেলার পরিবর্তে ২২ টি জেলায় সরকারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ইত্যাদি কারণে ধরা এ সাফল্য। এক্ষেত্রে মত্স্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘জাটকা সংরক্ষণ,বিকল্প কর্মসংস্থান ও গবেষণা’ প্রকল্পটির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ । ইহা আমাদের জাতীয় গৌরবও বটে। কেননা পৃথিবীর ইলিশের ৬৫ শতাংশই উত্পাদিত হয় বাংলাদেশে। প্রতিবেশি ভারতে ১৫, মিয়ানমারে ১০ এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ উত্পাদিত হয় আরব সাগর এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী বিভিন্ন দেশে। শুধু তাহাই নহে, এ মাছ স্বাদে,ঘ্রাণে ও পুষ্টিগুণে অনন্য। ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসাবে ওমেগা-৩ পুষ্টিগুণের দিক হইতে স্যামন মাছের পরেই রহিয়াছে ইলিশ। ইহা হার্টের রোগ, ক্যান্সার, রাতকানা, হাঁপানি, বাত, অবসাদ ইত্যাদি দূরীকরণে সহায়ক।

ত্বকের যত্ন ও শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনেও ইহা কার্যকর। তাই ইলিশের এত খ্যাতি ও নাম। ইহা আমাদের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসাবেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু ইলিশের প্রজননসহ জীবনচক্র ব্যতিক্রম। সমুদ্রের লোনাপানিতে বড় হইলেও মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য স্বাদু বা মিঠা পানিতে তথা নদীর মোহনায় স্রোতের তোড়ে পানি যেখানে ঘোলা হয়, সেখানে চলে আসে।

কিন্তু মা ইলিশ বা ডিম ফুটিয়া বাহির হওয়া ইলিশ ছানারা যখন ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর মোহনায় ঘোরাফেরা করে,তখনই অনেক জেলের জালে তাহারা ধরা পড়ে। এভাবে ইলিশের উত্পাদন ব্যাহত হয়েছে একসময়। তবে বর্তমানে সরকারের উপর্যুক্ত কর্মসূচি ও গণমাধ্যমের কল্যাণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বহুলাংশে দূর হয়েছে। এসকল প্রতিবন্ধকতা ইলিশের উত্পাদন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্তর্নিহিত কারণ ।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে স্বাদু পানির মত্স্য উত্পাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানের অধিকারী। আবার ইলিশ উত্পাদনে শীর্ষস্থানীয় দেশ। এ সকল অর্জন ধরে রাখতে হলে মত্স্য গবেষণার প্রতি আমাদের আরো গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। বিশেষত স্বতন্ত্র ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং মেঘনা ও দৌলতদিয়া ঘাটকে ইলিশ প্রক্রিয়াকরণ জোন হিসাবে ঘোষণা করার বিষয়টি দেখা দরকার । জাটকা সংরক্ষণে পর্যাপ্ত পরিদর্শন ও অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখাও প্রয়োজন । এখনও ইলিশ মাছ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আবাদ করা সম্ভব হয় নাই। তবে অদূর ভবিষ্যতে মৎস্য বিজ্ঞানীরা সফল হবেন বলে আমরা আশা করা যায়।

চাঁদপুর নদীগবেষণা কেন্দ্রের ইলিশ গবেষক ড.আনিছূর রহমান বৃহস্পতিবার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ মে.টনে ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে ।

প্রসঙ্গত,চাঁদপুরের নৌ-সীমানায় চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১ শ’কি.মি ও পদ্মার অংশে ২০ কি.মি.নদীতে ৬০% ইলিশের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে বলে নদী গবেষণা চাঁদপুরের মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন। ফলে মৎস্য বিভাগ চাঁদপুরকে ইলিশের অভয়াশ্রম ও মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপসহ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।
২০০৩ সাল থেকে ইলিশের অভয়াশ্রম ও মা ইলিশ রক্ষার পদক্ষেপগুলো ক্রমেই জোরদার করা হচ্ছে। তাই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে অনেক গুণ। পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানে প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে।

দেশের মৎস্য বিভাগ ইতোমধ্যে ৫ টি নদী ও উপকূলীয় অঞ্চলকে অভয়াশ্রম বা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন । সেগুলো হলো চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনানদীর অববাহিকায় ১শ’ কি.মি,ভোলার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কি.মি.ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলীয়া নদীর প্রায় ১শ’ কি.মি.এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া ভেদরগঞ্জ উপজেলার অংশে পদ্মায় ২০ কি.মি।

এদিকে বরিশালের হিজলা থেকে ২২ কি.মি নতুন একটি এলাকাকে মৎস্য বিভাগ অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি চট্রগ্রাম এর মিরসরাই এলাকায় ভোলার তমুদ্দিন,পটুয়াখালীর কলাপাড়া,কক্সবাজার এলাকার কুতুবদিয়া এলাকাও ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রজনন মৌসুেেম এসব অভয়াশ্রম মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। তাই প্রতিবছরই আমাদের দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:১০ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮,বৃহস্পতিবার
এজি

Leave a Reply