চাঁদপুরে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার স্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি মেলার সময়সীমা কমিয়ে আনার দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে।
মাসব্যাপি শহরে তীব্র যানজট, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি, শহরের স্থায়ী ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি, বিজয় মেলায় নি¤œমানের পণ্য বেশি দামে বিক্রি প্রভৃতি কারণে দীর্ঘমেয়াদী মেলা চান না শহরবাসী।
জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গত কয়েক বছর ধরেই মেলার সময়সীমা কমিয়ে আনার জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছেন বিজয় মেলার প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্যোক্তা, সর্বোচ্চ ফোরাম স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, উদযাপন পরিষদ ও বিভিন্ন উপ-পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
মাসব্যাপি বিজয় মেলায় গত কয়েক বছর ধরে মেলার প্রধান আয়োজন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ সবচেয়ে অবহেলিত কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিদিন খ্যাতিমান, খেতাবপ্রাপ্ত কিংবা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাচ্ছে না। তখন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকেই কয়েকজনকে দিনের পর দিন প্রায় একই স্মৃতিচারণ করতে হয়। এ কারণে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সবচেয়ে কম দর্শক উপস্থিতি থাকে। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের এই দূরাবস্থা দেখে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিদিন স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান রাখা হয় না। এছাড়া স্টল বাড়াতে যেয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, তথ্য ও স্মৃতিসংরক্ষণ স্টল সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালে ব্যবহৃত পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র গায়েব হয়ে গেছে।
এখন মেলার প্রধান আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর মাঠজুড়ে দোকানে দোকানে কেনাবেচা। শুরুতে অল্প কিছু দোকানপাট থাকলেও এখন মানুষ হাটার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। দোকানে ভরপুর থাকে বিজয় মেলার মাঠ। এ কারণে খোদ আয়োজকদের অনেকেই এখন বিজয় মেলাকে ‘বাণিজ্য মেলা’ বলে অভিহিত করছেন। সাধারণ মানুষ এবং অন্য জেলা থেকে আগত লোকজন তো একে বাণিজ্য মেলাই মনে করে থাকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রচার, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের গৌরবগাঁথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়। ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুরমুক্ত দিবসে শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে মেলা শেষ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সময়সীমা বাড়ানোয় মেলার জৌলুস হারিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
বিজয় মেলার সময়সীমা কমিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন খোদ বিজয় মেলার কর্মকর্তাবৃন্দ। বিশেষ করে বিজয় মেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা অ্যাড. সেলিম আকবর ও অ্যাড. বদিউজ্জমান কিরন গত কয়েক বছর ধরে বিজয় মেলার সময়সীমা কমিয়ে আনতে মেলার সাধারণ সভাসহ বিভিন্ন ফোরামে প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তাদের এই সময়োপযোগী প্রস্তাবে একমত পোষণ করে আসছেন বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. সলিম উল্যা সেলিম, সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. আবদুল লতিফ শেখ, সাবেক মহাসচিব শহীদ পাটওয়ারীসহ বিভিন্ন উপ-কমিটির অনেক নেতৃবৃন্দ।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় প্রসঙ্গক্রমে অনেক আলোচকও বিজয় মেলার স্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি সময়সীমা কমিয়ে আনার দাবি তুলেছেন। সভায় উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বিজয় মেলার স্থান বহাল রাখার পক্ষে মত দিলেও প্রয়োজনে সময়সীমা কমিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদিকে বিজয় মেলার স্থান পরিবর্তন চেয়ে গত কয়েক দিন ধরে চাঁদপুরের অসংখ্য মানুষ ফেইসবুকে মতামত ব্যক্ত করে আসছেন। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সফিকুল ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে ‘হাসান আলী স্কুল মাঠে কি বিজয় মেলা হওয়া উচিৎ’- এমন একটি প্রশ্ন করলে তাতে চাঁদপুরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষ ‘না’সূচক জবাব দিয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরছে।
করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১ : ১৩ পিএম, ১০ নভেম্বর, ২০১৭ শুক্রবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur