Home / চাঁদপুর / ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস

মো. আবুল বাসার ||   আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫, রোববার

 

৫ অক্টোবর সোমবার বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এ দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যায় হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মোহাম্মদ হোসেনের সভাপতিত্তে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ, মাধ্যমিক, প্রাথমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষকগণকে নিয়ে সকাল ৮/৩০ মিঃ হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে জমায়েত হয়ে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু করে শপথ চত্বর হয়ে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শেষ হবে। বিকাল ৩টায় বিশ্ব শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য নিয়ে চাঁদপুর রোটারী ভবনে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

র‌্যালি ও সেমিনারকে সফল করার জন্য হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হোসেনকে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন কমিটি গঠন করা। সভায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কলেজ শিক্ষক শিক্ষকগণকে আজ ৫ অক্টোবর সকাল ৮/৩০ মিনিটে হাসান আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য র‌্যালিতে অংশ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পটভূমি ঃ ১৯৬৬ সালে ৫ অক্টোবর প্যারিসে শিক্ষকের মর্যাদা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সম্মেলনে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে একটি যৌথ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। উক্ত সুপারিশমালায় শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নেয়াসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, দায়িত্ব ও অধিকার, চাকুরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, শিক্ষাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ১৯৯৪ সাল থেকে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করে আসছে। প্রতি তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত আইএলও ইউনেস্কো যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের জন্য একটি সুপারিশমালা গৃহীত হয়।

মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষণ-শিখনেও পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হচ্ছে। এইসব পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও আধুনিক শিক্ষণ-শিখনের সাথে শিক্ষকদের অভিযোজনের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক দশক ধরে সবার জন্য শিক্ষা অর্জনে যেসব টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে মানসম্মত শিক্ষা উন্নয়নে সামনের দিনগুলোতে শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ২০১৪ সালের ইউনেস্কো গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্টে সকল শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষর জন্য শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষতার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন, পেশাগত-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সচেতন শিক্ষকের বিষয়টিকে এই রিপোর্ট গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে। এসকল প্রেক্ষাপটে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য গৃহীত নতুন লক্ষ্যমাত্রা মানসম্মত শিক্ষার জন্য পেশাদার ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের ওপর বিশষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য নেয়া হয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ ভর্তি, ২৬১৯২টি বিদ্যালয়ের ১,০৪,০০০ জন শিক্ষককে জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে আসা। এতোসব উদ্যোগের পরেও সবাইকে মানসম্মত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে আর্থিক ও অবকাঠমোগত সীমাবদ্ধতাও অনেকাংশে দায়ী। মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের জন্য শিক্ষকদের দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে তোলার অপ্রতুলতা রয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হলেও তার আশানুরূপ বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই না। এ বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো কাজ করলেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য যেতে হবে আরো অনেক দূর।

[এ বাস্তবতার আলোকে এবার বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “Empowering Teachers, Building Sustainable Societies” যার বাংলা ভাষান্তর করা হয়েছে “ টেকসই সমাজ গঠন, শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন ” আগামী প্রজন্ম যাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে সেই শিক্ষকদের দক্ষতা এবং মর্যাদাসহ ক্ষমতায়ন তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণে অধিক বিনিয়োগের উপর এবারের প্রতিপাদ্যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটি জাতিকে সুশিক্ষিত করে সঠিক পথপ্রদর্শনের মাধ্যমে প্রত্যাশিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারেন শুধু শিক্ষকরাই। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত এবং নিবেদিত শিক্ষক।

এখনও বাংলাদেশে শিক্ষকতা পেশাটি তেমন জনপ্রিয় না হওয়ায় অনেক কৃতি শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে এই পেশায় আসতে চায় না। অথচ মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে পেশাগত দক্ষতা সম্পন্ন বিপুল সংখ্যক শিক্ষক প্রয়োজন। ইউনেস্কো ইন্সিষ্টিটিউট ফর স্টেটিসটিকস্্ অনুসারে মানসম্মত শিক্ষকের স্বল্পতার কারণে অনেক দেশে সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যহত হচ্ছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধুমাত্র শিক্ষকদের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের কথাই বলে না, বরং আগামী প্রজন্মের মানসম্মত শিক্ষার কথা চিন্তা করে শিক্ষকতা পেশাকে আরও আকর্ষণীয় এবং শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণেরর কথাও বলে। শিক্ষকদের দক্ষতা ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিক্ষার মানন্নোয়ন ঘটবে।

বাংলাদেশে গণসাক্ষরতা অভিযান ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন এবং সহযোগী সংগঠনসমুহের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করে আসছে। এ বছরও এসময়ে দিবসটি উদযাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গণসাক্ষরতা অভিযান সমন্বয়ক হিসেবে সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও অন্যান্য পেশাজীবী সংস্থার সাথে সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, সংবাদপত্রে গণআহ্বান প্রকাশ, র‌্যালী, মানববন্ধন ও উপকরণ তৈরি ইত্যাদি কর্মসূচি আয়োজন করবে।

কর্মসূচি আয়োজনের উদ্দেশ্য
* শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত অর্থায়নের বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
* “সবার জন্য শিক্ষা”-এর লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা পালন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ ও রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

লেখক পরিচিতি : সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও প্রধান শিক্ষক হাসানআলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

 আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০১৫, রোববারচাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫