Home / সারাদেশ / ’ ২০৩৮ সালের মধ্যে দেশে তামাক চাষ ও সিগারেট উৎপাদন নিষিদ্ধ’
smok

’ ২০৩৮ সালের মধ্যে দেশে তামাক চাষ ও সিগারেট উৎপাদন নিষিদ্ধ’

আগামী দুই বছর পর দেশে আর বিড়ি থাকবে না বলে গত বছরই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিড়ির সঙ্গে জর্দা, গুল, খাম্বিয়া ও সাদাপাতাও একই সময় নিষিদ্ধ করা হবে। অর্থাৎ, আগামী দুই বছর পর দেশে কেউ বিড়ি, জর্দা, গুল উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারবে না।

পাশাপাশি সরকার দেশে তামাক চাষ, সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে। ২০৩৮ সালের মধ্যে দেশে তামাক চাষ ও সিগারেট উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে এ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সিগারেট উৎপাদন বন্ধের কার্যক্রম ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করবে সরকার। আর বাংলাদেশে বৃহৎ সিগারেট উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানিতে (বিএটিসি) থাকা সরকারের ১০.৮৫ শতাংশ শেয়ারও আর রাখতে আগ্রহী নয় সরকার। এই শেয়ারও বিক্রি করে দেওয়া হবে।

এসব তথ্য জানিয়ে গত ১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে প্রাসঙ্গিকভাবে সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আরেকটি পুরনো শিল্পকেও বিলুপ্ত করা এখন সময়ের দাবি। আখ চাষ করে চিনি উৎপাদনের দিন অনেক আগেই বিভিন্ন দেশে শেষ হয়ে গেছে।’

চিঠিতে এক মাসের মধ্যে মতামত চেয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের মতামত আগামী এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে চাই। অতঃপর আমরা এ বিষয়ে একটি সভা করব মে মাসের শুরুতে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হবে, আগামী বাজেটেই আমরা আমাদের বিশ বছরমেয়াদি কার্যক্রম শুরু করব এবং কার্যক্রমটির প্রচারণা ব্যাপকভাবে শুরু করব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে আগামী ২০৪১ সালে এ দেশে তামাক আর উৎপাদিত হবে না এবং তামাকজাত পণ্যও আর থাকবে না, এইটি খুবই কঠোর এবং উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত। কিন্তু জনস্বার্থে এটি অত্যন্ত মূল্যবান ও জরুরি সিদ্ধান্ত।’

প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। এর মধ্যে শুরুতেই জোর দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে তামাক চাষ বন্ধ করার বিষয়ে। যেসব এলাকায় তামাক চাষ হয়, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ডাল, বিট, তুলা, ফল, সবজি চাষ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তামাক পণ্য ব্যবহার ও তামাক চাষে বিএটিসি চাষিদের যে সহায়তা দেয়, তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

‘তামাক ও সিগারেট উৎপাদন বন্ধকরণ’ শিরোনামে লেখা চিঠিতে বিড়ির সঙ্গে জর্দা, গুল, খাম্বিয়া ও সাদাপাতা নিষিদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তামাক পণ্য শিল্পের মধ্যে সিগারেট হলো মুখ্য শিল্প। বিড়ি, জর্দা, খাম্বিয়া এগুলো ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য পণ্য। বিড়িকে তিন বছরের মধ্যে নিষিদ্ধ করার একটি কঠোর সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে বিড়ি শিল্প নিয়েছে। সম্ভবত জর্দ্দা, খাম্বিয়া, সাদাপাতা ইত্যাদির বাজারও এই সময়ে বন্ধ করা যেতে পারে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিএটিসির ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সিগারেট উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের শেয়ার ১০.৮৫ শতাংশ। এর মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৭.০৬ শতাংশ, সাধারণ বীমা করপোরেশনের ২.৮২ শতাংশ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্টের নামে ০.৬৪ শতাংশ ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের নামে রয়েছে ০.৩৩ শতাংশ।

তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বিএটিসিতে সরকারের শেয়ার থাকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে প্রভাবশালী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যাদের তামাক চাষ বন্ধ কিংবা তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তারাই বিএটিসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা সম্প্রসারণে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করে থাকেন। ফলে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিএটিসির সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, তাদের ৯ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চারজন সচিব, একজন অতিরিক্ত সচিব ও একজন সাবেক সচিব রয়েছেন।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, অন্তত চারটি কারণে সরকারের নেওয়া এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তামাক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ধরে রাখা সম্ভব নয়। তখন মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) বাস্তবায়নের শর্ত রয়েছে। এ ছাড়া সরকার ঘোষিত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।