Home / উপজেলা সংবাদ / ১০ বছরেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কার্যালয় নেই
১০ বছরেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কার্যালয় নেই

১০ বছরেও ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কার্যালয় নেই

১০ বছর পেরিয়ে গেলেও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। ‘গ’ শ্রেণির এই পৌরসভাটিতে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা প্রকট। বেশির ভাগ এলাকায় পাকা রাস্তা, সড়কবাতি ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও নেই। এতে পৌরসভার বাসিন্দারা প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

পৌরসভাটি নাগরিকের কাছ থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রেও তেমন সফল নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রশাসক ও মেয়র হিসেবে মঞ্জিল হোসেন এর দায়িত্ব পালন করছেন। এবার তিনিও মেয়র প্রার্থী।

পৌরবাসীর অভিযোগ, মেয়রের উদাসীনতার কারণেই তাঁরা এত দিন ধরে সেবাবঞ্চিত রয়েছেন।

পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটির মোট জনসংখ্যা ৩৪ হাজার ৬১১ জন। পৌরসভায় এ পর্যন্ত বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মঞ্জিল হোসেন প্রশাসক হিসেবে একবার ও নির্বাচনের মাধ্যমে দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

পৌর কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে ফরিদগঞ্জ বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ভবন ভাড়া নিয়ে চলছে এর দাপ্তরিক কাজ। ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে এখানে বিশুদ্ধ পানি, ড্রেনেজ, সড়কবাতি, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা থাকার কথা।

কিন্তু এখানে এগুলোর কোনো ব্যবস্থা নেই। কাঁচা রাস্তা আছে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার, পাকা রাস্তা মাত্র ৫ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ও ইট বিছানো রাস্তা আছে ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাহান পাটওয়ারী বলেন, এটি নামেই পৌরসভা। এখানে রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন নেই। খাওয়ার পানির কোনো ব্যবস্থা আজও করা হয়নি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার সময় বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ থাকে। পৌরসভার অন্তত ৮০ ভাগ নাগরিক তেমন কোনো সেবা পান না।

পৌরসভার সচিব এ কে এম খোরশেদ আলম বলেন, এই পৌরসভার নাগরিকেরা কর দেন না। তাই তাঁরা সেবাও পান না। প্রতিবছর ৬০ লাখ টাকা এডিবি থেকে থোক বরাদ্দ আসে। তা দিয়ে কিছু রাস্তাঘাট সংস্কার হয়, কিছু পানির কল বসানো হয়। এ ছাড়া ওই টাকা দিয়ে মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেওয়া হয় এবং দাপ্তরিক খরচ চলে। পৌরসভায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩১ টাকা কর ধার্য করা হয়। কিন্তু আদায় হয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার ৭৭০ টাকা। পৌরসভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য কর ধার্য হয় ১৪ লাখ ১০২ টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৩১ টাকা।

পৌরবাসীর অভিযোগ, বহিষ্কৃত নেতা হওয়ার কারণে বিএনপি এবং বিরোধী দলের হওয়াতে আওয়ামী লীগ—কোনো আমলেই মঞ্জিল হোসেন সরকারের তেমন সহযোগিতা পান না।

মেয়র মঞ্জিল হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় ও পৌরসভাটি আয়তনে বড় হওয়ায় এখানে সেভাবে নাগরিক সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রিফিউজি কলোনিতে ঢোকারই কোনো পথ নেই। সেখানে প্রায় ৪০০ লোকের বাস। কলোনিতে যেতে কারও বাড়ির ভেতর দিয়ে অথবা দেয়াল পেরিয়ে বা নোংরা ডোবার পানি ডিঙিয়ে যেতে হয়। কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে মাথায় করে বের করতে হয়।

কলোনির বাসিন্দা মনা মিয়া বলেন, ‘৫০ বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছি। পৌরসভার কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। রাতে অন্ধকারে থাকি। বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই।’

পৌরসচিব খোরশেদ আলম বলেন, পৌরসভা ‘ক’ কিংবা ‘গ’ শ্রেণির যেটাই হোক, সবখানেই একই সেবা পাবে। আর তা নাগরিকদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ থেকেই নিশ্চিত হতে পারে। পৌরসভায় দায়িত্বে থাকা মেয়রের আন্তরিক চেষ্টাতেই এ বিষয়ে সফলতা আসতে পারে। (প্রথম আলো)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ১২:২০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ