Home / খেলাধুলা / ১০ উইকেটে হারতে ১২ ওভার লাগল না বাংলাদেশের
১০ উইকেটে হারতে ১২ ওভার লাগল না বাংলাদেশের

১০ উইকেটে হারতে ১২ ওভার লাগল না বাংলাদেশের

কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হয়ে গেলে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে দলের আত্মপ্রসাদে ভোগা ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল কী আজ সেই আত্মপ্রসাদের শিকার? নইলে টানা দুই ম্যাচে দলের ব্যাটিং অর্ডারে কীভাবে এমন মড়ক লাগে!

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে তবু দুইশোর্ধ্ব স্কোর গড়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। এই ম্যাচেও একপর্যায়ে ২৩ রানের ব্যবধানে পড়েছে ৫ উইকেট! কিন্তু আজকের মড়কের সঙ্গে সেই মড়কের তুলনার প্রশ্নই ওঠে না। ৮২ রান তুলতেই নেই ১০ উইকেট! মামুলি এই স্কোর তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই ১১.৫ ওভারের মধ্যে তুলে নেওয়া জয়ে দিনেশ চান্ডিমালের দল উঠে গেছে ফাইনালে। ৩৩ রানে উপুল থারাঙ্গা এবং ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন দানুস্কা গুনাতিলোকা। শনিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে এই শ্রীলঙ্কারই মুখোমুখি হবে মাশরাফির দল।

ওয়ানডেতে এ নিয়ে ‘ডজন’সংখ্যক ম্যাচে ১০ উইকেটে হারের মুখ দেখল বাংলাদেশ। বলের হিসাবেও হারটা লজ্জার। ২২৯ বল হাতে রেখে জিতেছে চান্ডিমালের দল। বলের হিসাবে ওয়ানডেতে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের হার। এর আগে ২০০৭ সালে কুইন্সটাউনে বাংলাদেশের বিপক্ষে পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৬৪ বল হাতে রেখে ১০ উইকেটে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড।

অথচ এই ম্যাচের আগে প্রশ্ন উঠেছিল, বাংলাদেশ দল ফাইনালে কাকে নেবে? শ্রীলঙ্কা না জিম্বাবুয়ে? এ দুটি দলের ফাইনালে ওঠার সমীকরণটা যে ঝুলে ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। স্বাগতিক শিবির থেকেও রব উঠেছিল, ম্যাচটা নিজেদের জন্য আনুষ্ঠানিকতার হলেও শ্রীলঙ্কাকে এতটুকু ছাড় দেওয়া হবে না। কিন্তু সেই ছাড় না দেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো দলকে লজ্জায় ডুবিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা!

ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানের লজ্জা। এই সংস্করণে প্রায় চার বছর পর আবারও এক শ’র নিচে অলআউট হওয়ার লজ্জা। ঘরের মাঠেও প্রায় চার বছর পর এক শ’র নিচে অলআউট হলো বাংলাদেশ। অথচ দুই-একজন ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে গেলেই কিন্তু ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারত। মুশফিক ও সাব্বির কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। এই দুজন ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি!

সর্বোচ্চ ২৬ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাব্বিরের স্কোর ১০! এ ছাড়া বাকিদের স্কোর মোবাইল ফোন নম্বরের মতো। অথচ এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে এতটুকু ছাড় না দেওয়ার প্রত্যয় ছিল বাংলাদেশ দলের। কিন্তু মাশরাফিদের ফাইনাল নিশ্চিত বলেই হয়তো ব্যাটিং অর্ডার এমন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল!

সেই ভেঙে পড়ার শুরুটা এনামুলের হাত ধরে। তৃতীয় ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই সুরঙ্গা লাকমলের বলে প্লেড অন হয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে মোটেও ভালো করতে পারলেন না এনামুল। দ্বিতীয় উইকেটে সাকিব–তামিমের জুটি টিকেছে মাত্র ১৩ বল! ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রানআউট হন সাকিব (৮)। এরপর ৩৪ রানের মধ্যে তামিম ও মাহমুদউল্লাহকে হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব আউট হওয়ার এক বল পরই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে গুনাতিলোকার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন তামিম (৫)। ১১তম ওভারে সুরঙ্গা লাকমলের বাউন্সার হুক করতে গিয়ে ফাইন লেগে দুশ্মন্ত চামারার তালুবন্দী হন মাহমুদউল্লাহ (৭)।

চরম বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে মুশফিক–সাব্বিরের ব্যাটে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু অস্থিরতার পরিচয় দিয়ে দ্রুতই ফিরে যান সাব্বির। ১৭তম ওভারে থিসারা পেরেরাকে মিড অনে তুলে মারতে গিয়ে শেহান মাদুশঙ্কার তালুবন্দী হন। তার অাগে পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে গড়েছেন বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৩ রানের জুটি। মুশফিক তখন এক প্রান্তে নিঃসঙ্গ শেরপা। তাঁর ধৈর্যে কুলোয়নি। দলীয় ৭৯ রানে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনিও। ১১ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছে শেষ ৫ উইকেট!

বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার আজ এতটাই ভঙ্গুর ছিল যে ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর গড়ার শঙ্কা পেয়ে বসেছিল। তা না হলেও শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পঞ্চম সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম তিনটি সর্বনিম্ন স্কোরই স্বাগতিকদের!

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩ : ৪০ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার
এএস