Home / সারাদেশ / হাটগুলোতে মিলছে প্রচুর গরু : দেখা নেই ক্রেতার
হাটগুলোতে মিলছে প্রচুর গরু

হাটগুলোতে মিলছে প্রচুর গরু : দেখা নেই ক্রেতার

আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। হাটগুলোতে দেখা মিলছে প্রচুর গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার। তবে পশুর সমাগম বেশ হলেও ক্রেতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে হাটগুলোতে।

এ সময়টাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন হাটে বড় বড় বেপারীরা গিয়ে ১০, ১৫ এমনকি ২০ ট্রাক পর্যন্ত পশু কিনে আনেন। কিন্তু গত কয়েকদিনে কোনো হাটেই এ ধরনের কোনো ক্রেতার খোঁজ মেলেনি। তাছাড়া স্থানীয় ক্রেতারও দেখা মিলছে না বলে জানাচ্ছেন বেপারীরা। তারা বলছেন, হাটে কোনো ক্রেতাই নেই বলতে গেলে।

শনিবার ১১ জুলাই দিনাজপুরের কাহারোল পশুর হাটে প্রচুর গরু উঠতে দেখা গেছে। বেপারীরা জানান, এই হাটে শুধু বলদ গরুই উঠে। হাটটি এতদিন অন্য স্থানে জমলেও এবার কাহারোল মহিলা কলেজ মাঠে বসেছে।

এই হাটে নোয়াখালী থেকে কবির নামে একজন বেপারী গেছেন গরু কিনতে। তিনি মোট ১৮টি বলদ গরু কিনেছেন। ৭০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত গরু কিনেছেন কবির। তিনি বলেন, এই হাটে ভালো বলদ গরু পাওয়া যায় বলে শুনে এসেছি। যে কয়টা পছন্দ হয়েছে তা কিনেছি।

হাটে গরু নিয়ে আসা এক বেপারী বলেন, নোয়াখালীর কবির ছাড়া হাটে কোনো বড় ক্রেতা নেই। অথচ শত শত বেপারী হাটে এসেছেন গরু নিয়ে। তারা গরু বিক্রি করতে না পেরে খুব হতাশ। এই হাটে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা দামের বলদ গরু উঠেছে।

দিনাজপুরের বিরল থেকে আটটি গরু নিয়ে হাটে আসা জমির আলী বলেন, ১০টায় হাটে এসেছি, এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, এর মধ্যে একটা পার্টিও এলো না অন্তত দাম জিজ্ঞেস করার জন্য।

শনিবার ১১ জুলাই বসে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর পশুর হাট। এই হাটে ছোট-বড় প্রচুর ষাঁড় গরু দেখা যায়। কেরানীগঞ্জের জামাল বেপারী জানান, হাটে প্রচুর গরু আছে কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। এই হাটটিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গরুগুলো একটু ফাঁকে ফাঁকে বাঁধা হয়েছে। এই হাটেও ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড়-দুই লাখ টাকা দামের গরু উঠেছে। বাইরের বেপারী নেই এবং স্থানীয় ক্রেতারাও নেই। হাটে শুধু যারা গরু বা পশু নিয়ে এসেছেন তারা ছাড়া কেনার ব্যপারী আছেন হাতে-গোনা দুই-চারজন।

স্থানীয় গরুর বেপারী দেলোয়ার জানান, ঢাকা-গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনে ফার্মে রেখে যেতে পারেন। কোরবানির দুই-একদিন আগে পৌঁছে দেয়া হবে। পৌঁছে দিতে ঢাকার ক্ষেত্রে দুই হাজার, গাজীপুর তিন হাজার, নোয়াখালী পাঁচ হাজার এবং চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে গরুপ্রতি ছয় হাজার টাকা লাগবে।

নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার পুঠিয়া পশুর হাটের বেপারীদের বেচাকেনার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তাদেরও একই অভিযোগ, ক্রেতা নেই। কিশোরগঞ্জের মানিক নামে একজন বেপারী ১০টি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন এই হাটে। সকাল ১০টায় হাটে আসার পর বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটিমাত্র ষাঁড় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। হাটে অন্য জেলার কোনো ক্রেতা বা বেপারী নেই। এছাড়া স্থানীয় লোকজনও হাটে আসছেন না।

মানিক বলেন, স্থানীয় কিছু বেপারী আছেন যারা পশু কেনার ক্ষেত্রে নানা চিন্তা-ভাবনা করছেন। পশু কিনে বিক্রি করা যাবে কি-না বা লাভ হবে কি-না, নানা ধরনের চিন্তা করছেন তারা। তারা শুধু হাট ঘুরছেন আর দেখছেন।

নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া পশুর হাট বসে রোববার ১২ জুলাই। এ হাটেও গরুর আমদানি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু হাটে শুধু বিক্রেতারই দেখা মেলে। ক্রেতার সংখ্যা বিক্রেতার চেয়ে নগন্য। ফলে গরু নিয়ে আসা বেপারীরা খুব ক্ষুব্ধ-হতাশ।

শিবপুরের আনিসুর রহমান পাঁচটি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন হাটে। তিনিও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন ক্রেতার আশায়। কিন্তু ক্রেতা নেই। আনিস বলেন, এভাবে কয়েক হাট ঘুরলে গরুর আনা-নেয়ার যে খরচ তাতে লাভের আশা করা যায় না।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে হাটে ক্রেতা কম। এছাড়া কিছুদিন আগে এই অঞ্চলে গরুর ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসের কারণে দাম কমে গেছে। গত বছরে যে গরু বিক্রি হতো ৪০-৪৫ হাজার টাকায়; সে গরু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। তাও আবার ক্রেতার সংখ্যা কম। এতে করে গরু ব্যবসায়ীরা তাদের সংসার কীভাবে চালাবেন তা নিয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত। এ হাটেও বাইরের কোনো পাইকার যাচ্ছে না।

হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হাট বসার বিষয়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও হাটে ক্রেতা কম।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে গেলে মাংস খাওয়া যাবে। আক্রান্ত গরুর মাংস খেলেও সেটি মানবদেহে প্রভাব ফেলবে না। কারণ ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাস ৬০-৬৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাঁচে থাকতে পারে না। আর আমরা রান্না করে খাই প্রায় ১৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল ও মানুষের আয়-রোজগার ঠিক রাখার জন্য হাটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। হাট মানেই জনসমাগম। যতটা সম্ভব সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কোরবানির গরু অনলাইনে কেনাবেচা করা যাবে। কাজেই হাটে জনসমাগম কমাতে হবে।

বার্তা কক্ষ, ১৪ জুলাই ২০২০