চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বাড়ির সম্পর্কিত ছোট ভাইয়ের বউকে ‘টিপ্পনি ও শরীরে হাত’ দেয়ার কথিত অযুহাত তুলে তিন সন্তানের জনক এক ভাসুরেরর মাথা ন্যাড়াপূর্বক বেদম প্রহার করে অজ্ঞান করার ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় দিকে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭নং পশ্চিম বড়কূল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নাটেহরা গ্রামের গাজী বাড়িতে শালিস বৈঠকের নামে তার উপর এ বর্বরতা চালানো হয়।
শালিসে প্রথম সিদ্ধান্ত হয় মালেক গাজীকে ৫০টি জুতার বাড়ি, ২৫ হাত নাকে খড় দেয়া ও পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়া। পরে মাতাব্বরদের সিদ্ধান্ত বাদী পক্ষের কিঞ্চিৎ না মানায় পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২৫টি জুতার বাড়ি ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়া।
এসময় ইউপি সদস্য মুসলিম নিজেই লাঠি দিয়েই মালেক গাজীকে বেধড়ক মারধর করেন। এক পর্যায়ে মালেক গাজী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ইউপি সদস্যের নির্দেশে মালেক গাজীল মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি সদস্য, স্থানীয় মাতাব্বর, গণ্যমান্যসহ শত শত লোকের উপস্থিতিতে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
ঘটনার রাতেই পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন সন্ধ্যায় নাটেহরা গ্রামের ছেনা গাজী বাড়ির মৃত নুরু গাজীর ছোট ছেলে তিন সন্তানের জনক মালেক গাজীকে একই বাড়ির চাচাতো ভাইয়ের বউকে অশ্লীল কথা বলায় ও দুইবার শরীরে হাত দেয়াকে কেন্দ্র করে ই্উপি সদস্য মুসলিম তাকে ধরে আনতে কয়েকজনকে নির্দেশ দেন।
ইউপি সদস্য মুসলিমের নির্দেশ পেয়ে স্থানীয় গ্রাম্য মাতাব্বর ছিদ্দিক মাঝি, এলাহি গাজীর ছেলে সোহেল গাজী, এস্কান্দার গাজীর ছেলে ফারুক গাজী ও তার সহযোগীদের নিয়ে ছেনা গাজী বাড়ির মালেক গাজীর বসত ঘর থেকে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে আসে শালিসস্থলে।
এরপর একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হয় শ্লীলতাহানির শালিস বৈঠক। এ ধরনের ঘটনা এই গ্রামে ঘটতে দেব না বলে হুঁশিয়ারি করে দেন ইউপি সদস্য মুসলিম।
মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মালেক গাজী বাদী হয়ে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে হাজীগঞ্জ থানা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই অভিযোগে ইউপি সদস্য মুসলিম গাজীকে নির্দেশ দাতা হিসেবে উল্লেখ করেছে। অভিযোগের আলোকে মঙ্গলবার বিকেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার এস আই মো. সামছুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অনেকটা দাম্ভিকতার সাথে ইউপি সদস্য মুসলিম গাজী উপস্থিত জনতাকে বলেন, ‘কেউ কিছুই দেখেননি, মুখে ক্লুপ এঁটে থাকবেন।’
পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ওই বাড়িতে ছুটে যান। এসময় একই এলাকার সচেতন ক’যুবক হাজীগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন।
শালিসে উপস্থিত ওই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাতাব্বর গণমাধ্যমকে জানান, শালিসের সিদ্ধান্ত মেম্বার একাই নিয়েছেন। তার ওপর কেউই কথা বলতে সাহস পায়নি। লাঠিপেটা অমানুষিক ও মাথা ন্যাড়া করে দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরই শালিস ডাকায় আমরা না থেকে পারিনি। বারবার নিষেধ করেছি মেম্বার সাহেবকে, কিন্তু কথা শুনেননি। মেম্বার এলাকার প্রভাবশালী তাই কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস করেননি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন জানান, ঘটনার পর রাতেই মালেক গাজীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রাতে পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় আসামি ধরতে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জড়িতরা পালিয়ে যায়।
ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, হাজীগঞ্জ