হাজীগঞ্জে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানিয়ে ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ 

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মৃত আম্বর আলী বেপারীর ছেলে মো. ফজলুল হক (৬৮)। তারা সাত ভাই-বোন। এর মধ্যে তার বাবা, মা, বড় দুই ভাই ও এক বোন মারা গেছেন। ভাইদের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ১৯৭১ইং সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য তিনি ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পৃথিবীর মানচিত্রে বীরের বেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন হয় রাষ্ট্র। আল্লাহর অশেষ কৃপায় বেঁচে যান ফজলুল হক। এরপর স্বাধীন দেশের মুক্ত বাতাসে তিনি বাবা, মা, ভাই-বোনসহ জীবন-যাপন করেন। আজ পর্যন্ত তিনি বেঁচে আছেন। সরকারের দেয়া সম্মানি (মুক্তিযোদ্ধা ভাতা) তিনি নিয়মিত পাচ্ছেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়েই তার সুখের সংসার।

মো. ফজলুল হকের লাল মুক্তিবার্তা নং-০২০৫০৩০০৭৬,  বেসামরিক গেজেট নং-১১৪১, মুক্তিযোদ্ধা নম্বর- ০১১৩০০০১৪০২, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদপত্র নং- ৬৬৬৪২। জাতীয় পরিচয়পত্র নং- ৩৭০৯৫৬৩০৬২, জন্ম নিবন্ধন নম্বর- ১৯৫৩১৩১৪৯৫৫১০৩৮৯৬, ইউনিয়নের হোল্ডি নং-২৭৬, চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বিদ্যুৎ বিলের হিসাব নং- ০৩-১৪১-২১৫০।

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২০২০ইং সালে। তার বড় ভাই (তৃতীয়) মো. মজিবুল হক মারা যাওয়ার পর। সেই থেকে হয়রানি শুরু। যা আজও চলমান। মারা গেছেন মজিবুল হক, অথচ জীবিত ফজলুল হক মৃত হয়ে আজও সরকারি অফিসের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় চেয়ারম্যান, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কারণ, তিনি জীবিত নয়, মৃত। এই অভিযোগে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা।

কথা হয় ফজলুল হকের সাথে। তিনি বলেন, ২০২০ইং সালে ভাই মজিবুল হক মারা যান। এরপর তার ছেলে-মেয়েরা (ভাতিজা) তাকে (ফজলুল হক) মৃত দেখিয়ে ওয়ারিশ হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার জন্য আবেদন করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনিও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে দেখা করেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করেন। বর্তমানে তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে।

ভুক্তভোগী ফজলুল হক বলেন, আমি জীবিত প্রমাণে তদন্ত কমিটির কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট আমার সকল কাগজপত্রসহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়ন, ওয়ারিশ সনদ, জন্ম নিবন্ধণ, নাগরিক সনদ, টেক্স, ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ, বিদ্যুৎ বিল ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছি। এছাড়াও আমার ভাই মৃত মজিবুল হক থেকে ক্রয়কৃত সম্পত্তির দলিল, তার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রত্যয়ন এবং মেম্বারকে দেয়া ১৯৭৩ সালে রেল ডাকাতির চিঠি দিয়েছি।

মজিবুল হক নাকি ফজলুল হক, কে মারা গেছেন ? বিষয়টি জানতে কথা হয় তাদের ভাই (দ্বিতীয়) আব্দুল হকের সাথে। তিনি মজিবুল হকের ছোট, কিন্তু ফজলুল হকের বড় ভাই। আবার মজিবুল হক একদিকে তার বড় ভাই, অপর দিকে বেয়াই। কারণ, তার ছেলে মনির হোসেন ও মজিবুল হকের মেয়ে শিল্পী আক্তার স্বামী-স্ত্রী।

এ বিষয়ে আব্দুল হক জানান, মজিবুল হক (ভাই ও বেয়াই) মারা গেছেন, ফজলুল হক বেঁচে আছেন।

তাদের জেঠাতো ভাই সেকান্তর আলী (৮০) ও  চাচাতো ভাই সিরাজুল ইসলাম (৭০) এবং একই বাড়ির খোরশেদ আলমের (৪৫) সাথে কথা হলে তারা জানান, মজিবুল হক মারা গেছেন এবং ফজলুল হক বেঁচে আছেন।

স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, মজিবুল হক মারা গেছেন এবং ফজলুল হক বেঁচে আছেন। এ বিষয়ে আমি জীবিত ফজলুল হককে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন দিয়েছি। এ ছাড়াও তাদের পারিবারিক ওয়ারশি সনদ দিয়েছি। সেখানেও মৃত মজিবুল হক উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময়ে তিনি, ফজলুল হক বেঁচে থাকার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমরা এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা জানার লক্ষে তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। তদন্তকালীন সময়ে তাদের পারিবারিক ভাবে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তাই বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে।

প্রতিবেদক:জহিরুল ইসলাম জয়, ৩ এপ্রিল ২০২২

Share