শীর্ষ সংবাদ

হাজীগঞ্জে চুরির টাকা ভাগাভাগিতে ৩ বন্ধু গলা কাটলো অপর বন্ধুর

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ খোদাই বিলে গলাকাটা অবস্থায় আসাদুজ্জামান বকাউলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। আটক দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

হত্যার শিকার ও হত্যায় অভিযুক্তরা চুরির টাকা ভাগাভাগি করতে গিয়ে এ কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চাঁদপুর জেলা পুলিশ থেকে পাঠানো এক প্রেস বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

হত্যায় অভিযুক্ত আটককৃতরা হলেন, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই গ্রামের রবিউল্লাহর ছেলে সাদ্দাম হোসেন, একই জেলার তিতাস থানার শোলাকান্দি সরকার বাড়ির ছাদেক মিয়ার ছেলে মো. মুসা, একই উপজেলার জিয়াকান্দি বড় বাড়ির শাহজাহানের ছেলে আলাউদ্দিন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার খিলপাড়া খোদাই বিল থেকে রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ওই গ্রামের রফিকুল আলম বকাউলের ছেলে মো.আসাদুজ্জামান বকাউলের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয় (নং-১৮, তারিখ-২৪/১২/২০১৭)| গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে অভিযুক্ত মুসার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ অভিযুক্তদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানায, হত্যার পূর্বের রাত আনুমনাকি রাত ২ টার দিকে হাজীগঞ্জ রাজাপুর বাজারে লক্ষণ দেবনাথের দোকানে গিয়ে তার চারজন মিলে চুরি করে। উক্ত চুরির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তর্ক-বির্তকের একপর্যায়ে মো.আসাদুজ্জামান বকাউলকে তার সহযোগী সাদ্দাম হোসেন ও আলাউদ্দিন জোরপূর্বক মাটিতে চেপে ধরে। এ ফাঁকে অপর অভিযুক্ত মুসা আসাদুজ্জামানের গলায় চুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করে। পরে তারা তিনজন ঘটনাস্থলেই লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।

মামলার সূত্র ধরে পুলিশ বিষয়টি তদন্তের এক পর্যায়ে জানতে পারে আসাদের সাথে ঢাকায় চাকুরী করা ৩ যুবক রাতে সাদ্দামের সাথে আড্ডা দেয়। এ সূত্র ধরেই সামনে এগুতে থাকে তদন্তকারী কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, আসাদের সাথে আড্ডা দেয়া ৩ যুবকের মধ্যে খীলপাড়া জাহাঙ্গীরের শালা রয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বলে তার শালা সাদ্দাম সর্ম্পকে নিশ্চিত হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আবদুল মান্নান সাদ্দামের স্ত্রী রহিমা খাতুনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারে সাদ্দাম দাউদকান্দি থানায়ও একটি হত্যা মামলার আসামী। তাই সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়।কৌশলে তার তথ্য মতে পুলিশ হত্যা মামলার ৩ আসামীকে এক ঘর থেকে আটক করে।

আটকের পর আসাদকে কেন হত্যা করা হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান আসামী সাদ্দাম জানান, ‘গত ২১ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী আমার বোনের জামাই জাহাঙ্গীরের বাড়িতে বেড়াতে আসে। আমরা ৩ বন্ধু ২৩ ডিসেম্বর বেড়াতে আসি। রাতে আসাদের সাথে আমাদের দেখা হয়। তার সাথে আমরা ঢাকায় এক সাথে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকুরি করতাম। সেখান থেকে পরিচয়। আমরা রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম চুরি করব সে অনুযায়ী, আসাদ আমাদের বলেন, রাজাপুরা বাজারে লক্ষনের মুদি দোকানে চুরি করলে ৮/১০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। তার কথা মতো আমারা সাহেব বাজার থেকে ২টি চুরি কিনে রাজাপুরা বাজারের ওই দোকানে চুরি করি। আমাদের দেখে ফেলায় আমরা বাড়িতে চলে যায়। আসাদ চুরির মাল তাদের বাড়ীতে নিয়ে রাখে। রাতে আবার সে আমাদের কাছে যায়। আমরা এক সাথে ইয়াবা সেবন করি এবং আবারো চুরি করব বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

তখন আসাদ বলে, পাশের একটি বাড়িতে চুরি করবে। ওই বাড়ির মহিলার স্বামী বিদেশ থাকে। ঘরে অনেক স্বর্ণালংকার পাওয়া যাবে। সে তথ্য মতে তারা বাড়িতে চুরি করতে যায়। কিন্তু বাড়ী ভরা মানুষ দেখে সাদ্দাম চুরি করবেনা বলে চলে আসে। এ নিয়ে আসাদের সাথে তর্কা-তর্কি হয়। তখন সাদ্দাম বলে ৮/১০ লাখ টাকা হলেই চলবে। তখনই আসাদ বলে ওই দোকানে মাত্র ২’শ টাকা পাইছে। তখনই তারা আসাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তার পাশে জমিনে নিয়ে তাকে জবাই করে হত্যা করে।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. আবদুল মান্নান জানান, মুসা জবাই করে হত্যা করে, সাদ্দাম বুকে চাপ দিয়ে বসে এবং আলাউদ্দিন দুই পা ধরে রাখে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জাবেদুল ইসলাম মুঠোফোনে চাঁদপুর টাইমসে বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরবেলা অভিযুক্ত মুসার বাড়ি থেকে তিন জনকে আটক করা হয়। তাদেরকে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে এবং তারা সবাই ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ঘটনায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’

এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন পড়ুন- হাজীগঞ্জ খোদাই বিল থেকে যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share