চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার দেশগাঁও-গ্রামে একটি প্রভাবশালী পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে একই বাড়ির একাধিক পরিবারের সদস্যরা। প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকি ও নানা হয়রানির কারণে বাড়ির জমি জমার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা যায়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং দক্ষিণ গন্তব্যপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডস্থ দেশগাঁও গ্রামের পূর্ব আটিয়া বাড়ির আলী আহমদ মাস্টার ও তার ছেলে এসপি মোস্তফা কামাল, প্রফেসর হেলাল উদ্দিন গংরা দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়ির অন্যান্য পরিবারদের বেশ কয়েক শতাংস বাড়ি এবং ফসলী জমি কোন কাগজপত্র ছাড়াই জোরপূর্বক ভাবে জবর দখল করে ভোগ করে আসছে। তাদের কারণে বাড়ির অসহায় পরিবার গুলো তাদের জমি ভাগ বাটোয়ারার কোন মীমাংসা করতে পারছে না বলে একাধিক পরিবারের অভিযোগ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ মোস্তফা কামাল হবিগঞ্জের সাবেক এসপি হওয়ার কারণেই ক্ষমতার জোরে প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক দখল করে তাদের সম্পত্তি ভোগ করে আসছেন।
ওই বাড়ির মুক্তিযুদ্ধা হাবিবুর রহমান, বন্দে আলী আটিয়া গং, সুফিয়া বেগম রানী, আবুল খায়ের কালু, আব্দুল হক আটিয়া গংরাসহ ওই বাড়ির ১১৬৪ দাগের ৩ একর ২৫ শতাংস জমি নিয়ে তাদের সাথে একই বাড়ির আলী আহমদ মাস্টার গংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আলী আহমদ মাস্টারের ছেলে সাবেক এসপি মোস্তফা কামাল, পুলিশের চাকরি করার প্রভাব খাটিয়ে তাদের সাথে এ রকম জোর জুলুম ও জবর দখল করে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রকৃত কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও, তারা ক্ষমতার বলে ওই বাড়ির বিভিন্ন অংশে জমি জবরদখল করে রেখেছেন। যখনই ওই বাড়ির সম্পত্তি বিরোধ মীমাংসার জন্য ভাগবাটোয়ারা শুরু হয়। তখনই তারা বাড়ির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
এমনকি এসব ঝামেলার সময় তাদের কাছে জমির প্রকৃত কাগজপত্র চাইলে, তারা কখনোই তা দেখাতে বা উপস্থাপন করতে রাজী হয়নি।
ওই বাড়ির বাবুল আটিয়া, রুহুল আমিন, শাহজাহান, জাহাঙ্গীর আটিয়া, নূর হোসেন, রহিমা বেগম, জাহানারা বেগম, সুফিয়া বেগম, জাহানারা বেগমসহ একাধিক পরিবারের অভিযোগ, ওই প্রভাবশালীর পরিবারটির কারণে তারা তাদের বাড়ির জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়টি মীমাংসা করতে পারছেন না। যখনই তারা বাড়িতে জমির ভাগ বাটোয়ারা মীমাংসা করতে যান, তখনই অভিযুক্ত পরিবারটি তাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ ও মামলা-হামলাসহ বিভিন্নভাবে তাদেরকে হয়রানি করে আসছেন।
১০নং দক্ষিণ গন্তব্যপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মনির হোসেন আঁটিয়া বলেন, আলী আহমদ মাস্টারের ছেলে হবিগঞ্জ জেলার সাবেক এসপি মোস্তফা কামাল ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওই বাড়ির সবকটি পরিবারদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জোর জুলুম করে চলেছেন। ওই পরিবারটির সীমাহীন অন্যায় অত্যাচারে আঁটিয়া বাড়ির প্রত্যেকটি পরিবার নিরুপায় হয়ে পড়েছে। আমরা এমন প্রভাবশালী পরিবারের মিথ্যে হয়রানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ বিষয়ে ১০নং দক্ষিণ গন্তব্যপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বাচ্চুর সাথে কথা হলে তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ থাকায়, তাদের জমির ভাগ বাটোয়ারা করার জন্যই আলী আহম্মদ মাষ্টারদের পরিবারের সাথে একমত পোষণ করে একটা সালিশ নামা করা হয়। সেই সালিশ নামা হওয়ার পর ওই বাড়ির ভাগবাটোয়ারার জন্য সার্ভেয়ার দিয়ে জমির মাপ শুরু করেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আলী আহমদ মাস্টার গংরা সেই মাপে আপত্তি প্রকাশ করেন। তাদের প্রকৃত কাগজপত্র চাইলে তারা সে কাগজ দেখাতে রাজি হয়নি। যার কারণেই মূলত ওই বাড়ির পরিবারের জমি সংক্রান্ত বিরোধটি মিমাংসা হয়নি।
ভুক্তভোগীদের মত একই অভিযোগ জানালেন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ বিল্লাল হোসেন।
তিনি বলেন, এই বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মেপে যার যার সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে তাদের প্রকৃত কাগজপত্র চাইলে তারা তা দেখাতে নারাজ। তাদের একটাই কথা তারা তাদের কাগজপত্র থানা পুলিশ ছাড়া কাউকে দেখাবে না। এ জন্যই মূলত ওই বাড়ির লোকজন জমির বিরোধ সমাধান করতে পারছেনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলী আহমদ মাস্টার গংদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। যদিও বৃদ্ধ আলী আহমদ মাস্টার ঘরে ছিলেন কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
প্রতিবেদকঃকবির হোসেন মিজি,১৭ এপ্রিল ২০২১