ইগনাজ ফিলিপ সেমেলওয়েস বা ইগনাজ ফিলিপ সেমলভাইস ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান চিকিৎসক। তিনি হাত ধোয়া ব্যবস্থার প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত। মেডিকেলে সার্জারিতে এন্টিসেপ্টিক পদ্ধতি অনুসরণের পথিকৃৎ হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়।
ইগনাজের জন্ম ১৮১৮ সালের ১ জুলাই। জন্মসূত্রে তিনি হাঙ্গেরিয়ান।
১৮৪৬ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় এক হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। ১৮৫০ সাল নাগাদ ইউরোপে সন্তান জন্মদানের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।
সেখানকার শিশু পরিচর্যার ক্লিনিকগুলোতে মাঝে মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মা ও শিশুর মৃত্যু ঘটত। এই মৃত্যু তখন কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। সে সময় ফিলিপ গবেষণা করে দেখলেন,ডাক্তারদের হাতে রয়ে যাওয়া জীবাণু থেকেই শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
ডাক্তারদের হাতেই জীবাণু অন্যত্র সংক্রমিত হচ্ছে। তিনি নির্দেশ দিলেন, ডাক্তাররা যেন ক্লোরিন দিয়ে ভালোমতো হাত এবং সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ধুয়ে তারপর সন্তান প্রসব করান। এতে নাটকীয়ভাবে রোগীদের মৃত্যুহার কমে গেল। কিন্তু অন্য ডাক্তাররা ইগনাজের বিরোধিতা শুরু করলেন। তাদের মনে হল,যে ডাক্তাররা জীবন বাঁচান,তারাই রোগ ছড়িয়ে রোগীদের মারছেন-এমনটা কিছুতেই হতে পারে না।
ইগনাজের ধারণার বিপরীতে তীব্র প্রতিরোধ আসা শুরু করল। ডাক্তাররা বলেই বসলেন, ‘কোনো ডাক্তার হাত ধোবে না।’ তার হাত ধোয়ার পরামর্শে কান না দিয়ে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা শুরু করলেন সবাই। তার চাকরিও চলে যায়।
এ বৈপ্লবিক আবিষ্কারের মাত্র এক যুগের মাথায় ইগনাজ পুরো হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। প্রায়ই মাতাল হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের ‘কসাই, জানোয়ার, অশিক্ষিত গণ্ডমূর্খের দল’ বলে গালাগালি শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক মানসিক হাসপাতালে।
আর সেই হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি,তার অসুস্থতা এবং মৃত্যু তার ডান হাতের একটি ক্ষত সংক্রমণের ফলে হয়েছিল। সম্ভবত অসুস্থ হওয়ার আগে তার করা অপারেশনের ফলে এমনটি ঘটেছিল। তিনি সেই কারণেই মারা যান যার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন।
কয়েক দশক পর,তার ধারণাগুলো ‘জীবাণু তত্ত্ব’ অবদানের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিল। আধুনিক এন্টিসেপ্টিকের জনক জোসেফ লিস্টার বলেন, ‘আমি তার কৃতিত্বের প্রশংসা করি এবং এটি আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়, শেষ পর্যন্ত তাকে সম্মান জানানো হয়েছে।’
বার্তা কক্ষ , ৫ এপ্রিল ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur