চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৫ নং ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকায় একটি মাধ্যমিক স্কুলের ঘর রাতের আধাঁরে খুলে নিয়ে গেছে দূর্বৃত্তরা। বর্তমানে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান করছেন শিক্ষকরা। এতে করে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (১০ আগস্ট) রাতের আধাঁরে ওই এলাকার চেয়ারম্যানের অনুসারীরা তার নির্দেশে বিদ্যালয়টি খুলে নিয়েছে বলে পরিচালনা কমিটির সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ।
শনিবার থেকে ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা এখন উত্তপ্ত রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নিচে পাঠ গ্রহণ করছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনের জন্য বিক্ষোভ করেন।
রোববার (১২ আগস্ট) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যালয়টির কার্যক্রম ওই অবস্থায়ই রয়েছে। বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, তাদের সাথে কোনো ধরনের আলাপ না করেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সরকারের নির্দেশে তার লোকজন রাতের আঁধারে বিদ্যালয় ঘরটি খুলে নিয়ে গেছেন। শিক্ষার্থীদের এ দূর্ভোগের মধ্যে তারা পুনরায় বিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পক্ষথেকে প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ারুল আজিম হাইমচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার ৯ই আগষ্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে যাওয়ার পর সন্ত্রাসী প্রকৃতির কিছু লোকজন স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্কুলঘর খুলে নিয়ে যায়।। এতে করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রমের ও পাঠদান করার টুলটেবিল ও চেয়ার পড়ে থাকে খোলা আকাশের নিচে।
বিদ্যালয়ের কমিটির সদস্যরা ঘটনা স্থলে এসে জানতে পারে চেয়ারম্যানের লোকেরা বিদ্যালয়ের টিনসেট ঘরটি খুলে তার বাড়ীরকাছে নিয়ে রেখে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে এমজে এসকে এস এনএম জুনিয়ার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: আনোয়ারুল আজিম বলেন,এ বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে স্থাপিত হয়। গণশিক্ষার পক্ষ থেকে এ বিদ্যালয়টি নির্মান কাজ করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে ক্লাশ চলছে। পূর্বের চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন এ বিদ্যালয়টির জন্য এ ভবনটি লিখিত ভাবে দিয়ে যায়। এখানে শিক্ষার মান অত্যন্ত ভাল। ১৮ সালে ২৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। তার মধ্যে ২৫ জন পাস করেন। এ মধ্যে ৪ জন এ প্লাস অর্জন করেছে। জে এসসিতে শত ভাগ পাস।
এ ব্যাপারে সাবেক মেম্বার মো.আব্দুল হক জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টির এ কক্ষটি লিখিত ভাবে দিয়েছে। এলাকার শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করার প্রয়োজনে। এ কক্ষটি এক সময় গণশিক্ষার কার্য্যক্রম করার জন্য সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একে এম মির হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ক্লাশরুম হিসাবে ঘরটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে । সে ক্লাশ রুমটি স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সরকার খুলে নিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের হেড মাস্টার আমাকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। আমি বিদ্যালয়ের ক্লাশ রুমটি খুলে নেয়ার বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ও ঘটনা স্থলে গিয়ে এ বিষয়ে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ৫ নম্বর হাইমচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন সরকার জানান, ‘৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার হারুন মাল আমাকে না জানিয়ে কাজটি করেছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। শুক্রবার স্কুলে ম্যানেজিং কমিটিকে বলেছি বিদ্যালয়ের ঘরটি স্থানীয় মেম্বাররা বিদ্যালয়ে দিয়ে আসার জন্য। আমি গত তিনদিন যাবত ঢাকায় আছি আগামীকাল পরিষদের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের ক্লাশ রুমটি যে জায়গায় ছিল, সেখানে পুনরায় স্থাপন করার জন্য মেম্বার শফিকুর রহমনকে দায়িত্ব দিয়েছি।’
প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম