কবিরুল ইসলাম কবির, হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) :
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে যৌতুকের জন্যে শেওলা আক্তার (২৬) নামে দু’সন্তানের জননীকে পিটিয়ে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনার (৩০) নামে এক পাষন্ড স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন।
ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শশুর জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) কে আটক করেছে থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পাষন্ড স্বামীসহ অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার ভোর রাতে উপজেলার রহমতপুর ছোট বটতলী গ্রামে স্বামী আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারের বাড়িতে। এ বিষয়ে শেওলা আক্তারের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারকে ১ নম্বর আসামী করে ৪ জনের বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার ২ নং আসামী আনারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) কে আটক করে।
শেওলা আক্তারের মা রহিমা বেগম জানান, হরিপুর উপজেলা রহমতপুর ছোট বটতলী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারের সাথে আনুমানিক ৬ বছর আগে আমার কন্যা শেওলা আক্তারের পরিবারের সম্মতিক্রমে বিয়ে হয়। বিয়েতে মেয়ে সুখের জন্য এক লক্ষাধিক টাকা যৌতুক বাবদ জামাইয়ের হাতে তুলে দিই। কিছু দিন ধরে আরো যৌতুকের নেওয়ার জন্য জামাই আনারসহ পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। মেয়ের নির্যাতনের বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাদের সুখের জন্যে কিছুদিন পূর্বে আনারকে আরো যৌতুক বাবদ টাকা দিই। টাকা পাওয়ার পর কয়েকদিন শারীরিক নির্যাতন বন্ধ থাকলেও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আনারসহ তার পরিবারের লোকজন আরো যৌতুক নেওয়ার জন্য আমার মেয়ে শেওলা আক্তারকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।
ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে আনোয়ার হোসেন তার পরিবারের ইন্ধনে আমার মেয়ে শেওলা আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করে পুনরায় যৌতুক নিয়ে আসতে বলে। এতে শেওলা আক্তার অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ভাগ্যে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। শেওলা আক্তারকে অতিরিক্তভাবে শারীরিক নির্যাতন করলে এক পর্যায় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এতে আনোয়ারসহ তাঁর পরিবারের লোকজন শেওলা আক্তারের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কোনো অবস্থায় শেওলা আক্তারের জ্ঞান না ফিরলে মারা গেছে ভেবে আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারসহ তার পরিবারের লোকজন শেওলা আক্তারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়।
শুক্রবার সকালে থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল এসে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
হরিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আক্তারুজ্জামান প্রধান ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শেওলা আক্তারের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
তিনি আরো বলেন, শুক্রবার সকালে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয় এবং ময়না তদন্ত করা জন্য শনিবার সকালে লাশ ঠাকুরগাঁও মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট এলেই বুঝা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
মামলার তদন্তকারী এসআই নির্মল দেব শর্ম্মা বলেন, শেওলা আক্তারের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আনারের বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে তাৎক্ষণিক আটক করা হয়েছে এবং অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ০৩:০১ অপরাহ্ন, ২০ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, শনিবার ০৪ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur