সৎবাবার যৌন লালসার ফল শিনা : দাবি ইন্দ্রাণীর 

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক :

কে কার বাবা? কে কার প্রেয়সী? কার প্রথমপক্ষের স্বামী কার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন? বোরা ও মুখোপাধ্যায় পরিবারে যে বহু বছর ধরে সাপ লুডোর খেলা চলেছিল তা পরিষ্কার। সেই ক্রমতালিকা সাজাতেই এখন ব্যস্ত মুম্বই পুলিশ।

একদিকে শিনা বোরা মৃত্যুরহস্যে জট এখনও কাটেনি। অন্যদিকে, বোরা ও মুখোপাধ্যায় বাড়ির বংশতালিকা সাজাতে হিমশিম খাচ্ছে মুম্বই পুলিশ।

প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। আর ততই তাজ্জব হয়ে যাচ্ছে দেশবাসী। এর উপর যোগ হয়েছে মিখাইলের নয়া বয়ান।

তাঁর অভিযোগ, যেদিন শিনাকে খুন করা হয়েছিল, সেদিন তাঁকেও খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে পানীয়তে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। যদিও কোনওরকমে মিখাইল সেখান থেকে পালিয়ে যান।

এবার সম্ভবত হাইসোসাইটির এই চর্চিত মামলার সবথেকে নিকৃষ্টতম অভিযোগটি প্রকাশ্যে এল। সৌজন্য ক্যাচ নিউজ় নামে একটি সংবাদমাধ্যম। মুম্বই পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা এমন এক দাবি করেছে যা গোটা ঘটনাটিকেই নয়া মাত্রা দিচ্ছে।

কী সেই দাবি ?

ক্যাচ নিউজ়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিনা বোরাকে নিজের বোন বলে চালাতে চাওয়া খুব একটা ভুল নয় ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের। কারণ, শিনা একদিকে যেমন তাঁর মেয়ে তেমন তাঁর বোনও বটে! মুম্বই পুলিশের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দ্রাণীর সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তাঁর সৎবাবা উপেন্দ্র কুমার বোরা।

ওই অবৈধ যৌনাচারের ফলই নাকি শিনা বোরা! জেরার সময় এমনই নাকি জানিয়েছেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গেছে। এদিকে, প্রায় একই কথা শোনা গেছে ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন সহকর্মী তথা প্রখ্যাত সাংবাদিক বীর সংভির গলায়।

গতকাল একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তিনি দাবি করেন, ছোটোবেলায় সৎবাবা তাঁকে একাধিকবার যৌনহেনস্থা করেছিলেন বলে দাবি করতেন ইন্দ্রাণী। এই তথ্য গোটা ঘটনাটিকেই নতুন মাত্রা দিয়েছে। খানিক সমাধানের পথে থাকা অঙ্ক ফের নতুন করে কষতে হচ্ছে মুম্বই পুলিশকে।

গুয়াহাটি থেকে মেলা খবর অনুযায়ী, ইন্দ্রাণীর ছেলেবেলাতেই তাঁর বাবা ছেড়ে চলে যান। এরপর ইন্দ্রাণীর মা দুর্গা রানি বোরা বিয়ে করেন সম্পর্কে তাঁর দেওর উপেন্দ্র কুমার বোরাকে। ইন্দ্রাণীর স্কুল সূত্রে জানা গেছে, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো ছিলেন না তিনি। তার কারণ কী সৎবাবার যৌন লালসার শিকার হওয়া ? প্রশ্ন উঠছে।

আরও প্রশ্ন উঠছে শিনা বোরার বার্থ সার্টিফিকেটকে ঘিরে। সেখানে বাবা ও মা হিসেবে নাম রয়েছে উপেন্দ্র কুমার ও দুর্গা রানি বোরার। ১৯৮৯ সালে শিনার জন্ম হলেও সেই সার্টিফিকেট তৈরি হয় ২০০৪ সালে। কেন ? জবাব নেই কোনও । তবে এটুকু পরিষ্কার, এই রহস্য এখনই সমাধান হওয়ার নয়। আরও অনেক কিছু সামনে আসার বাকি। তার জন্য পুলিশের ভরসা শিনা বোরার ভাই মিখাইল বোরা। আজ ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অন্যদিকে, রায়গড় থেকে উদ্ধার শিনার হাড় পরীক্ষার জন্য পাঠাবে পুলিশ।

অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন শিনা ? রহস্য সমাধানে ভরসা মিখাইল

শিনা বোরার খুনের ঘটনায় রহস্য ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। উঠে আসছে একের পর এক বিস্ময়কর তথ্য। আর সেই তথ্য ঘিরেই ক্রমশ জটিল হচ্ছে এই হত্যা মামলা। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গেছে, খুনের সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন শিনা বোরা। জানা গেছে, সেই তথ্য খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা। অন্যদিকে, শিনার হত্যা রহস্যে নয়া তথ্য পেয়েছে মুম্বই পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। সূত্রের খবর, পুলিশ ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের গাড়ির ড্রাইভার শ্যাম মানব মনোহর রাইকে জেরা করে জানতে পেরেছে শিনাকে খুন করেছেন ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খান্না। সঞ্জীব খান্নাকে আজ বোম্বে হাইকোর্টে পেশ করা হয়।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শিনা যে অন্তঃসত্ত্বা, সে কথা জানতেন মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। মাকে এই কথা জানিয়েছিলেন শিনা নিজেই। এমনকী, শিনার সন্তানের বাবাকেও চিনতেন ইন্দ্রাণী। তাঁর সঙ্গে শিনা থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। অসমর্থিত একটি সূত্রে অবশ্য জানা গেছে, পিটার মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের ছেলে রাহুল শিনার বয়ফ্রেন্ড হলেও এই সন্তানের বাবা সে নয়। শিনার হত্যা রহস্যের সঙ্গে এই ঘটনার যোগ থাকতে পারে বলেও মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।

এ বিষয়ে রহস্যের জট খোলার জন্য পুলিশ অনেকাংশেই শিনার ভাই মিখাইল বোরার উপর নির্ভর করছে। আজ মুম্বই আসছেন মিখাইল। ইতিমধ্যে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনাও দিয়েছেন তিনি।

শিনা হত্যা রহস্যের জট খুলতে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও তাঁর গাড়িচালককে। সূত্রের খবর, ইন্দ্রাণীর ড্রাইভারের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকে শিনার একটি ছবি মেলে। জেরায় শ্যাম রাই জানায়, সঞ্জীব খান্না গাড়ির মধ্যেই শ্বাসরোধ করে শিনাকে খুন করেন। পরে ইন্দ্রাণী ও সঞ্জীব দু’জনে মিলে তাঁর দেহটি একটা ব্যাগের মধ্যে ভরে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দেহটি পুড়িয়ে দেয়। যদিও কখন, কোথায় খুন করা হয়েছে বা সেই সময়ে কেউ তা দেখতে পেল না কেন, এমনই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

হাইপ্রোফাইল এসকর্ট ছিলেন ইন্দ্রাণী ? আরও জটিল হচ্ছে শিনা মৃত্যুরহস্য

 স্টার ইন্ডিয়ার CEO পিটার মুখোপাধ্যায়কে বিয়ের পর থেকে মুম্বইয়ের প্রভাবশালী মহলে দ্রুত উত্থান ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের। বরাবরই তাঁর চলাফেরা ছিল সমাজের উঁচুতলায়। কলকাতায় তাঁর পরিচিতদের একাংশের দাবি, সমাজের উচ্চস্তরের দিকে ইন্দ্রাণীর ঝোঁক ছিল বরাবর। ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, পুরুষদের আকর্ষণ করারও সহজাত ক্ষমতা ছিল তাঁর মধ্যে। বিভিন্ন পেজ থ্রি পার্টিগুলিতে ইন্দ্রাণীর সঙ্গ পাওয়ার জন্য ভিড় পড়ে যেত। এ হেন ইন্দ্রাণী যখন প্রথম মুম্বইতে আসেন, তখন কিন্তু ছাপোষা ভাব ছেড়ে বেরোতে পারেননি। কিন্তু, মুহূর্তের মধ্যে ধূমকেতুর মতো উত্থানে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন এই উচ্চাকাঙ্খী। মিডিয়া জগতে তাঁর উত্থানই ইন্দ্রাণীর অতীত নিয়ে সবার মধ্যেই কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। এমন কোনও রহস্য কি ছিল তাঁর অতীতে ? যা ঢাকতে মেয়ে শিনাকে নিশানা করেন ইন্দ্রাণী ? মিখাইল ইতিমধ্যেই বলেছেন, শিনার পর নিশানা ছিলেন তিনি। কিন্তু, কেন ? কী এমন জানতেন তাঁরা ?

ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়

১৯৯৩ সালে সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে আলাপ ইন্দ্রাণীর। তখন ইন্দ্রাণী থাকতেন কলকাতার মিডলটন স্ট্রিটে। আলাপের কিছুদিনের মধ্যে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের এক মেয়েও আছে। বিচ্ছেদের পর সেই মেয়ে বিধিকে নিয়ে মুম্বই চলে যান ইন্দ্রাণী। যাকে দত্তক নেন মিডিয়া কর্তা পিটার মুখোপাধ্যায়। কিন্তু, শিনা কিংবা মিখাইলের প্রকৃত পরিচয় কোনওদিনও পিটারকে জানতে দেননি ইন্দ্রাণী। কিন্তু, কেন ? সঞ্জীব খান্নার ঘনিষ্ঠদেরও দাবি, ইন্দ্রাণীর যে আগেরপক্ষের ২টি সন্তান রয়েছে, তা তাঁরাও জানতেন না। এখানেই প্রশ্ন, কী এমন তথ্য শিনা-মিখাইল জানতেন, যে তাঁদের গুয়াহাটিতে দাদু দিদার বাড়িতে আলাদা রেখে দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী।

বস্তুত ইন্দ্রাণীর অতীত নিয়ে খুব একটা স্পষ্ট কেউই জানতেন না। ২০০০ সালে পিটারের সঙ্গে পরিচয়ের পরও ইন্দ্রাণী শুধুমাত্র সঞ্জীব খান্নার কথাই জানিয়েছিলেন। তাঁর আগের সিদ্ধার্থ দাস কিংবা শিনা-মিখাইলের বাবার বিষয়ে কিছুই বলেননি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শিনা হওয়ার সময় ইন্দ্রাণীর বিয়ে হয়নি। এরপর সিদ্ধার্থ দাসের সঙ্গে বিয়ে এবং তাও ভেঙে যায়। তারপর জীবনে আসেন সঞ্জীব খান্না এবং পরবর্তীকালে পিটার মুখোপাধ্যায়।

Share