Thursday, 28 May, 2015 05:08:47 AM
চাঁদপুর টাইমস, ঢাকা:
বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বহুল প্রতীক্ষিত ইলেক্ট্রনিক জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড এখনও নাগরিকের হাতে তুলে দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষণা দিয়েও বারবার পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে এ প্রকল্প নিয়ে নাগরিকদের মনেও হতাশা জাগছে।
গত ২৩ মে সোমবার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে স্মার্টকার্ড প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। স্মার্টকার্ড এখনো ভোটার হওয়া নাগরিকেকদের হাতে পৌঁছে দিতে না পারা ও প্রকল্পের অগ্রগতি দেখে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ওপর হতাশা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে সময় মতো কাজ করতে না পারায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইসি কর্মকর্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চার নির্বাচন কমিশনার এ প্রকল্প সম্পর্কে কোনো কিছু মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি তারা বলেন এ প্রকল্পের অগ্রগতি বা অন্য কোনো বিষয় থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), সচিব ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বলতে পারবেন। আমরা এ প্রকল্প সম্পর্কে কিছু জানি না। এটা আমাদের আওতায় নেই।
দেশে বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটার। তাদের সবার হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার মতো এখনো কোনো আশা দিতে পারেননি এনআইডি সংশ্লিষ্টরা। ২০১১ সালের এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে। বাকি আছে মাত্র এক বছর। এখনও স্মার্টকার্ড প্রস্তুতের মেশিনটি কোথায় স্থাপন করা হবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে এর মধ্যে ভোটাদের হাতে কার্ডটি পৌঁছাতে পারবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এছাড়া, গত বছর জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে ৫০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয় । ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তাদের হাতে স্মার্টকার্ড তো দূরের কথা জাতীয় পরিচয়পত্রও পৌঁছাতে পারেনি ইসি। তাদেরকে স্মার্টকার্ড নাকি সাধারণ কাগজে লেমেনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে এ নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তারা।
একদিকে কারণে নতুন ভোটার হওয়া নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ১৫,১৬ এবং ১৭ বছর বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের আওতায় আনার লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুলাইয়ের শেষে দিকে বা আগস্টের প্রথম দিকে এ তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে কোন ধরনের কার্ড দেয়া হবে এ বিষয়ও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি।
তবে ইসি সূত্রে জানা যায়, যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ এর মধ্যে তাদের কোন ধরনের কার্ড দেয়া হবে এ বিষয়ে ইসি একটি প্রকল্প হাতে নিতে চাচ্ছে। সে অনুযায়ী তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্রই দেয়া হবে বলে জানা যায়।
স্মার্টকার্ডের অগ্রগতির নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, ‘স্মার্টকার্ডের প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি দেখে হতাশ। এনআইডি কর্তৃপক্ষের কাজের থেকে কথা বেশি বলেন। এখন পর্যন্ত স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করার মেশিন বসাতে পারেননি। অথচ তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলতে শোনা গেছে, রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো দিনে ভোটার হওয়া নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়া হবে। কিন্তু বৈঠকে তাদের কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছে, সহসাই স্মার্টকার্ডের বিতরণ সম্ভব নয়।’
অন্যদিকে স্মার্টকার্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। এটা আমাদের আওতায় না। এনআইডি বিভাগ ও পিডি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
ইসির কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সী নাগরিকদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়। পরিচয়পত্রগুলো সাধারণ কাগজে লেমিনেটিং করে দেয়া হয়। এই কার্ডে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং বারকোডে থাকে। কিন্তু কার্ডটির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় ছিল কমিশনের। এই পরিচয়পত্রটি নিয়ে অসাধু চক্রের নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে জালিয়াতি করা সহজ হতো।
এ ধরনের ঘটনা বিবেচনা করে, ভুয়া পরিচয়পত্র প্রতিরোধে কমিশন নাগরিকদের ইউনিক নম্বর সংবলিত উন্নতমানের ‘স্মার্টকার্ড’ দেয়ার উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ থেকে পরিচয়পত্রের উপকরণ আমদানি করে দেশে মুদ্রণের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু তখনও কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি স্মার্টকার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ফ্রান্সের ওবার্থ টেকনোলজিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ইসি।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত বছরের ২৬ মার্চ অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্ড বিতরণ হবে বলে জানানো হয়। এ উদ্যোগটিতে ব্যর্থ হলেও বর্ষবরণ উৎসব পহেলা বৈশাখে কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাও আলোর মুখ দেখতে পারেনি।
সে সময় স্মার্টকার্ড বিতরণ প্রসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেছিলেন, ‘সব পর্যায়ের ভোটার নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো দিনে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কমিশন এগুলো বিতরণ করতে চায়।’
পহেলা বৈশাখে বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘স্মার্টকার্ড গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বা আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এগুলো বিতরণের সিদ্ধান্ত ছিল। নানা সমস্যার কারণে এ সময়ও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আসন্ন পহেলা বৈশাখে প্রতীকী হিসেবে প্রথম ধাপে ১০ হাজার জন ভোটারকে এ কার্ড দেয়া হবে।’
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ সাংবাদিকদের ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছিলেন, আগামী স্বাধীনতা দিবসে ভোটারদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এদিনে সবার হাতে একসঙ্গে এ কার্ড তুলে দিতে না পারলেও প্রথম পর্যায়ে সীমিত পরিসরে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু করা হবে।’
এদিকে ফ্রান্সের কোম্পানির সঙ্গে কার্ড সরবরাহ চুক্তির ৬ মাস হতে চললো কিন্তু স্মার্টকার্ড নিয়ে কোনো সাড়া শব্দ নেই কমিশনের। ঠিক কবে থেকে ভোটারদের প্রতীক্ষিত এই উন্নতমানের কার্ড তাদের হাতে পৌঁছাবে এ সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না।
এতকিছুর পরও স্মার্টকার্ড নাগরিকদের হাতে কবে পৌঁছাবে এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মোহাম্মদ সালেহের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নানা সমস্যার কারণে উন্নতমানের স্মার্টকার্ড সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে তিন সিটি নির্বাচন চলে আসায় সেদিকে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছিল। ফলে কার্যক্রমের গতি একটু কমে গেছে। দিন-তারিখ বলতে পারছি না।’ তবে এ বছরের যে কোনো দিন থেকে স্মার্টকার্ড নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
স্মার্টকার্ড যদি দেয়া শুরুও হয় তারপরও সবার হাতে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় অপক্ষো করতে হবে। আদৌ সবার হাতে পৌঁছাবে কি না, স্মার্টকার্ড নিয়ে ইসির এই আনস্মার্ট কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এএস/ডিএইচ/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur