চিকিৎসাজনিত কারণে’ দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে লন্ডনে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার ফেরার নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ জানা নেই কারোর-ই। কানাঘুষা চলছে, আর হয়ত দেশেই ফিরবেন না খালেদা জিয়া। এ নিয়েও ধূম্রজাল আছে, চলছে রাজনীতিও।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার চোখের চিকিত্সা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর হাঁটুর ফলোআপ চিকিত্সার শিডিউল আছে। অতঃপর দেশে ফেরার দিনক্ষণ নির্ধারণ হতে পারে। তবে দেশে তার দীর্ঘ অনুপস্থিতির ফলে বিএনপির কর্মকাণ্ড, সাংগঠনিক পুনর্গঠনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ঝুলে পড়েছে অনেকগুলো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। কর্মকাণ্ড নেই অঙ্গ সংগঠনগুলোর। কেন্দ্রের অধিকাংশ নেতাই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বিশ্রামে অথবা দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে তৃণমূলেও। মাঠ পর্যায়ে যে গতি এসেছিল তা থিতু হয়ে গেছে।
সারাদেশে জেলা সম্মেলন ও নতুন কমিটি ঘোষণার কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অঙ্গ সংগঠনগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর পুনর্গঠন হচ্ছে না। ঢাকা মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটির পুনর্গঠনের মেয়াদ ছয় মাস আগে শেষ হলেও তা আটকে আছে। মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কোনো ইস্যু নেই। কোনো কাজ নেই। বেগম জিয়া দেশে থাকতে তারা যেটুকু সভা-সেমিনার করতো তাও বন্ধ করে দিয়েছে।
নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সময় এক মাস বাড়ালেও সাড়া কম। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ফাঁকা। রিজভী আহমেদসহ কয়েকজন ছাড়া এখন নেতা-কর্মীদের দেখা মেলে না। স্থায়ী কমিটির খালি পদসহ কেন্দ্রীয় কমিটি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর বিভিন্ন কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। এ তিন পদে গত পৌনে দুই বছরেও লোক নিয়োগ দিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকটা সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকসহ অর্ধশতাধিক পদ শূন্য। জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তার ঢাকার অফিসের টেবিলে পড়ে আছে গত ছয় মাস ধরে।
গত বছর ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের আদলে বিএনপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক উপ-কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে আরো কয়েকশ’ নেতাকে পদায়ন করা হবে।
এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির পদবঞ্চিত কয়েকশ নেতা উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার কাছে সিভি জমা দেন। এর পর কেটে গেছে দেড় বছর। তারও কোনো খবর নেই।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র মতে, গত ১৫ জুলাই লন্ডন যাওয়ার আগে ১৩ জুলাই দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তৃণমূল পুনর্গঠনের ত্বরিত গতিতে শেষ করার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির লক্ষ্য পূরণেরও নির্দেশ দেন ।
তিনি সেই বৈঠকে বলেন, দেশে ফিরে দল পুনর্গঠন নিয়ে আর কোনো অজুহাত বা কথা শুনতে চান না। যে সব জেলার কমিটি হয়নি সেখানে সম্মেলন করে নতুন কমিটির তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।
বেগম জিয়া জানান, তিনি লন্ডন থেকে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার পর গণসংযোগ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চান।
এ দিকে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে কেবল বিভিন্ন ইস্যুতে ব্রিফিং, বিবৃতি ও আলোচনা সভা-সেমিনার জাতীয় অনুষ্ঠান হয়েছে। এ সব বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ফোনে আলাপ করে নিয়েছেন বেগম জিয়ার সঙ্গে। তার নির্দেশে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কাজে অংশ নেন নেতারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়া বিদেশে অবস্থান করলেও দেশের রাজনীতি ও সংগঠনের খোঁজখবর রাখছেন প্রতিনিয়তই।
এ দিকে নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা বিলম্ব হবে। শুধু চিকিত্সাই নয়, মামলার কারণেও খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা আরো বিলম্বিত হতে পারে। দেশে থাকলে বেশ কয়েকটি মামলা দ্রুত শুনানি হতে পারে। যে কারণে তিনি একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেশে ফিরতে চান।
ইতোমধ্যে সংলাপের বিস্তারিত প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হলেও তারা এটি ইসির সামনে তুলে ধরবেন। সংশ্লিষ্ট একজন নেতা বলেন, চেয়ারপার্সন দেশের বাইরে থাকায় দলের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করে এ সংলাপের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত যে, চোখ ও পায়ের চিকিত্সার জন্য গেল ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্য যান বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় উঠেছেন তিনি। বাসায় তারেকের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান রয়েছেন। এ ছাড়া ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিরা রহমানও সেখানে রয়েছেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১২ : ২০ পিএম, ০৮ অক্টোবর, ২০১৭ রোববার
এইউ