ডাঃ সাকলায়েন রাসেল
০১। প্রথমেই ভুলে যান সে আপনার বউ। কারণ বউ ভাবলেই নানা দাবী, অধিকার, স্বার্থের হিসাব নিকাশ চলে আসবে। আর হিসেব নিকেষ মানেই তুমি এটা কর নাই কেন। এটা দেও নাই ক্যান। ওটা কর নাই ক্যান ইত্যাদি। ধরে নিন, এতো বড় একটা লম্বা জীবন। এই জীবনে একা তো আর চলা যায় না। একজন সঙ্গী তো লাগেই। সেখেত্রে বউ হল আপনার উত্তম সঙ্গী। একেবারে রেজিস্ট্রি করে পাওয়া। তাই বউকে জীবন সঙ্গিনী ভাবুন। ঝামেলামুক্ত থাকুন। আর জানেন তো স্বামী শব্দটার মানেই প্রভু। তাই স্বামীগিরী বাদ দিন। বন্ধুত্বের সাধ নিন
০২। মনে রাখবেন সব বউ নিজের স্বাশুড়ীর চেয়ে হাজবেন্ডের শ্বাশুড়ীকে বেশি পছন্দ করে। এটাই নিয়ম। এটাই স্বাভাবিক। তাই বউয়ের স্বাশুড়ীর প্রতি স্বভাবজাত বাড়তি ভালোবাসাটা একটু রেখে ঢেকে প্রকাশ করুন। নিজ শ্বাশুড়ীর প্রতি দৃশ্যত বা প্রকাশ্য ভালোবাসায় অবতীর্ণ হোন।
০৩। আই লাভ ইউ। যারা ইয়ে করে বিয়ে করেছেন তাঁরা বিয়ের আগে হয়ত অনেক বার বলেছেন। ভাবছেন এখন ঘর সংসার করছেন আর কি দরকার আই লাভ ইউ বলার। এক দম ভুল ধারণা। সুযোগ পেলে মুখে ভালোবাসার জানান দিন। মনে রাখবেন ভালোবাসা অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন। বিয়ের পরে তা আরো কঠিন।
আপনি হয়ত ভাবছেন, আমি কত কেয়ার করি, এটা এনে দেই, সেটা এনে দেই। সব আবদার পূরণ করে দেই। এটাই তো ভালোবাসা! উঁহু, আপনি ভুল করছেন। ভালোবাসার প্রকাশ হওয়া চাই তিন ভাবে।
-অন্তরে
-কাজে
-মুখে
বউয়েরা অন্তরের চেয়ে কাজে, কাজের চেয়ে মুখের ভালোবাসাকে অধিক প্রাধান্য দেয়।
‘মেয়ে মাত্রই ভালোবাসা বিলাসী! তাঁরা কাউকে আই লাভ ইউ বলার আগ পর্যন্ত মনে করে ভালোবাসা সতেজ আছে। কাউকে আই লাভ বলা মাত্রই তাঁরা ধারণা করে নেয় ভালোবাসা বুঝি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল। বিয়ের পর তাঁরা আরো বেশি আতঙ্কে থাকে। এই বুঝি ভালোবাসা হারিয়ে গেল’।তাই নিয়মতি আই লাভ ইউ থেরাপী দিতে ভুলবেন না!
০৪। উৎসব সেলিব্রেট করতে ভুলবেন না যেন। মেয়েরা স্বভাবত উৎসব প্রেমী…বিয়ে বার্ষিকী….জন্মদিন…নববর্ষ, বসন্ত, ভ্যালেন্টাইনস ডেবিশেষ দিনগুলোতে বউকে সময় দিন, উপহার দিন।
০৫। সারপ্রাইজ দিন। মেয়েরা সারপ্রাইজ দিতে নয়, পেতে পছন্দ করে। বিয়ে বার্ষিকী বা জন্মদিনে তাই বউয়ের পছন্দের গিফট দিয়ে সারপ্রাইজ দিন।
০৬। বউয়ের পোষা প্রাণীটিকে বেশি ভালোবাসুন। এর মানে এই নয় যে তাঁর কুকুর বা বিড়ালকে বেশি ভালোবাসতে হবে। প্রত্যেক মেয়েরেই বিশেষ কিছু আপন মানুষ থাকে। এটা হতে পারে তাঁর ছোট ভাই, বাবা-মামা বা এজাতীয় কেউ। আপনি যদি সেই মানুষটার ভালোবাসা অর্জন করতে পারেন এবং তা ধরে রাখতে পারেন তবে নিশ্চিত থাকেন আপনার সাত খুন মাপ। বউ আপনাকে শুধু ভালোবাসবে না সম্মানও দেখাবে!
০৭। ফুল দিতে ভুলবেন না। ফুল ভালোবাসে না এমন মেয়ে নাই। যে মেয়ে ভালোবাসে না সেও প্রকাশ্যে ভালোবাসার অভিনয় করে। তাই বিশেষ দিন কিংবা যেকোন দিন ফুল হতে পারে সবচেয়ে বড় গিফট। বউয়ের পছন্দের ফুলের নাম জেনে নিবেন আগে ভাগেই।
০৮। বেতন যাই হোক মাস শেষে স্বামীর হাত থেকে বেতন পেতে সব মেয়েরই ভাল লাগে। এমনকি তিনি নিজেও যদি জব করেন তবুও। এর মধ্যে স্ত্রীরা এক ধরণের কর্তৃত্বের সুখ পান। তাই মাস শেষে বেতন তুলে দেয়া একটা বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে প্রেমের সম্পর্কে!
০৯। সব মানুষের একটা নিজস্ব জগত থাকে। সেখানে সে নিজের মত থাকতে চায়। বিচরণ করতে চায়। স্ত্রী বলে তাঁর সব কিছুর মালিক আপনি এমনটা না ভাবাই ভালো। তাঁর একান্ত বলে কিছু থাকবে না এ ভাবনাও ঠিক না। তাঁকে তাই তাঁর নিজস্ব জগতে স্বাধীনভাবে বিচরণের সুযোগ দেয়া উচিত।
১০। ভুলেও নিজ স্ত্রীর সামনে অন্য কোন মেয়ের গুণগান করবেন না। তা হলেই একেবারেই সর্বনাশ। তাই অন্যের স্ত্রী বা কোন মেয়ের গুণকীর্তন করা থেকে বিরত থাকুন।
১১। সব মেয়েই আলাদা। আপনার স্ত্রীও। তাই কোন ভাবেই আপনার স্ত্রীর সাথে অন্য মেয়ের তুলনা করবেন না। এ বিষয়টি সে মোটেও পছন্দ করবে না। বরং সব মেয়ে চায় তাঁর যা কিছু ভালো স্বামী সে অংশটাকে বেশি বেশি হাইলাইট করুক।
টিপসঃ মনে রাখবেন চাকরানী থেকে রাজরানী কোন পার্থক্য নাই। সবাই মেয়ে। আর মেয়ে হিসেবে সর্বদাই এদের মধ্যে একটা মিল থাকবেই!!
১২। দুলাভাই শালীর সম্পর্কটা চিরদিনেই জমজমাট।কিন্তু মনে রাখবেন মেয়েদের মধ্যে হিংসে প্রবণতা কিছুটা বেশি কাজ করে। এ হিংসের পরিধি আপন ছোট বোন পর্যন্ত বিস্তৃত। শালীর সাথে তাই বেশি ঢলাঢলি স্ত্রী ওয়াও বলে লাইক দিবে এমন মেয়ে এখনো জন্মায়নি। সো বি কেয়ারফুল এ্যাবাউট শালি! সব চলবে তবে একটু দূরুত্ব রেখে!
১৩।রান্নাটা মেয়েদের অন্যতম দূর্বল জায়গা। যে মেয়ে রাঁধতে জানেনা সেও অন্যের রান্না করার দৃশ্য ভালোবাসে। স্টার জলসার সিরিয়ালের পরই তাই রান্নার অনুষ্ঠান বেশি দেখে এদেশের মেয়েরা। রান্না যাই হোক না কেন প্রশংসা করতে ভুলবেন না।
১৪। সুযোগ পেলেই এদিক ওদিক ঘুরতে বের হবেন। ঘোরাঘুরি কিংবা শপিং এ যাওয়া মেয়েদের এক ধরণের হবি। আপনি এ হবিটাকে শ্রদ্ধা করে খুব সহজে তাঁর মন জয় করে নিতে পারেন।
১৫। স্ত্রীকে সময় দিন। অবশ্যই প্রতিদিন একটা নিদির্স্ট সময়। আপনার স্ত্রীকে আগেই জানান দিন। এই সময়টুকু আপনি শুধু তাকেই দিতে চান। এসময় তাঁর সামনে ফেসবুক, ইন্টারনেট ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে ফোনও ধরবেন না।
১৬। ভাল কথা, স্ত্রী যেমনই হোক উঠতে বসতে রূপের প্রশংসা করতে ভুলবেন না। প্রতিটা মানুষের কিছু একটা সুন্দর থাকবেই। হয় রঙ, নয়ত ফিগার, নয়ত অন্য কিছু। প্রয়োজনে বানিয়ে প্রশংসা করুন। ধরুন, আপনার স্ত্রী বেশ মোটা। তাঁকে বলুন যে, দেখ, মোটা বলেই তোমাকে এতো কিউট লাগে। তুমি যদি শুকিয়ে যাও তবে তোমার এ কিউটনেসটা আর থাকবে না! এভাবে চালিয়ে যান।প্রশংসার চাকা যেন কখনো না থামে।
১৭। ধরুণ উপরের সব পদ্ধতি পালন করলেন কিন্তু কাজ হলো না। তখন কি করবেন???
এক্ষেত্রে একটাই কাজ…পটানোর দরকার নাইরে বাবা। আপনি নিজেই বরং পটে যান…স্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় স্বার্থে এটা সবচেয়ে কার্যকরী এবং সহজ উপায়! মেয়েদের প্রথম পছন্দ কিন্তু এটাই !
জগতের সকল নারী সুখে থাক!
লেখকঃ চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মী,
উপদেস্টা সম্পাদক,
হেলথ নিউজ বিডি