স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে গরিব শিশুদের ঈদের জামা উপহার

পেশায় উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম লাবুর নিজেরই সংসারে নিত্যদিন ‍টানাপোড়েন।

তবু সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবে মন পোড়ে তার। কিন্তু সামর্থ্যের ঘাটতি থাকায় কিছুই করা হয়ে ওঠেনা।

একসময় এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সমাজের হত-দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের শিক্ষার ভার বহনে মনস্থির করেন।

চালু করেন ‘ফুলকলি শিক্ষা নিকেতন’ নামে ব্যতিক্রমী পাঠশালা। এমনকি, এসব শিশুদের ঈদের নতুন পোশাক দিতে স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত বেঁচতে দ্বিধা করেননি লাবু।

কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. শাহজাহানের ছেলে রফিকুল ইসলাম লাবু। পেশায় উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারের একজন উদ্যোক্তা।

যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় লাবুকে। তারপরও সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে চালু করেছেন ফুলকলি শিক্ষা নিকেতন।

তার পাঠশালায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান করা হয়। এখানে শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি বিনামূল্যে জামা-কাপড় ও শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়।

ফুলকলি শিক্ষা নিকেতন সম্পর্কে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম লাবু বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এরপর আমি ভেঙে পড়ি। পরে দেখি সমাজে অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে যারা আমার চেয়ে বেশি দুঃখী। তাদের কথা চিন্তা করে ২০০৬ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি বাড়ির আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের (যাদের বয়স ৫-১৪ বছর) নিয়ে একটি পাঠশালা
চালু করি।

তিনি বলেন, যেসব শিশুরা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না, আমার ইচ্ছে ছিল তাদের অন্তত প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া। বর্তমানে আমার পাঠশালায় ৩১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি উপলব্ধি করলাম সমাজে সুবিধাবঞ্চিত যেসব শিশুরা রয়েছে তারা আমাদেরই সন্তান। লেখাপড়া না করে তারা খারাপ হয়ে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না।

এসব শিশুদের লেখাপড়ার খরচ সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি যা আয় করি তার থেকে জমিয়ে এখানে খরচ করি। তবে অনেকেই একাজে সাহায্য করতে ছুটে আসেন। কিন্তু যখন শুরু করেছিলাম তখন কেউ এগিয়ে আসেনি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত লাবু বলেন, কয়েক বছর আগে আমার এলাকার একজন ব্যবসায়ী সব শিশুকে ঈদের কাপড় দিতে চেয়েছিলেন। আমি শিশুদের ২৬ রোজায় পাঠশালায় আসতে বলি। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে ওই ব্যবসায়ী আসেননি। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সহায়তা পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে আমার স্ত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করে বাচ্চাদের ঈদের কাপড় দিয়েছি।

আদ্র কণ্ঠে লাবু বলেন, সেইদিন বাচ্চাদের সামনে ঈদের কাপড় ছাড়া উপস্থিত হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

পাঠশালায় কি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত আমি শিশুদের উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাক্ষরতা, বাংলা রিডিং পড়া, ছোটখাট যোগ ও বিয়োগ, স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা, বাল্যবিয়ে ও মাদকের কুফল এবং সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকি।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাজেদা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, লাবু ফুলকলি শিক্ষা নিকেতন চালু করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের একটি সুযোগ করে দিয়েছেন। এটি নিসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সমাজের বিত্তবান লোকদের যে কাজ করা দরকার। লাবু সে কাজটি করে দেখিয়েছেন। সমাজে যারা অর্থশালী রয়েছেন তাদের উচিত লাবুর এ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেরাও এধরনের কাজ শুরু করা।

তিনি মনে করেন, বিত্তবানরা নিজে না পারলেও লাবুর মতো যারা এ ধরনের কাজে এগিয়ে এসেছেন তাদের সহযোগিতা করা উচিত।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ৪:৪৪ পিএম,০১ জুলাই ২০১৬,শুক্রবার
এইউ

Share