ফরিদগঞ্জে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে শিশুসন্তানকে বিক্রি করেছে বাবা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গ্রাম্য সালিসে বৈঠকের মাধ্যমে স্ত্রী নয়ন বেগমকে তালাক দিয়ে মাত্র ৯ মাসের শিশু সন্তান ইসরাত জাহান ইভাকে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে পাষণ্ড পিতা ইকবাল মুন্সী’র বিরুদ্ধে। এদিকে সন্তানকে ফিরে পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও দুই সপ্তাহেও সুরাহা পাননি শিশুটির গর্ভধারিনী মা।

থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসারা গ্রামের আব্বাস মুন্সির ছেলে ইকবাল মুন্সির সাথে একই উপজেলার পূর্ব দায়চারা গ্রামের মৃত শাহআলম মোল্লার মেয়ে নয়ন বেগমের সাথে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী-ইকবাল মুন্সি তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবীতে বিভিন্ন অজুহাতে একাধিকবার মারধর করে। এরই মধ্যে ইসরাত জাহান ইভা নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে বিগত বছরের ১৬ ডিসেম্বর গ্রাম্য শালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়ন বেগমের কাছ থেকে তালাক প্রদান পূর্বক খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখার অভিযোগ রয়েছে। পরে জোরপূর্বক ৯ মাসের শিশু ইসরাত জাহান ইভাকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ইকবাল মুন্সির পরিবারের লোকজন।

নয়ন বেগম জানান, আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময়ে মারধর করতো। সুখের আশায় শালিসদের কাছে বিচার দিলেও উল্টো আমাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এমনকি তারা আমার সন্তানকেই কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়। পরে আমি জেনেছি, আমার সন্তানকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক গ্রামে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আমার স্বামী ইকবাল মুন্সি। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।

নয়ন বেগমের স্বামী ইকবাল মুন্সি মুঠোফোনে জানান, নয়ন বেগমের সাথে তার শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে তালাক হয়ে গেছে। আমাদের ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন, গ্রাম্য শালিস আশু, জামাল, আবু তাহের, ফারুক হোসেন ও বাবুল নামে ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তালাকের পরে শিশু সন্তানকে আমার জিম্মায় দেয়া হয়। সন্তান বিক্রির যে অভিযোগ থানায় করেছে, সেটি সঠিক নয়। আমি আমার এক সম্পর্কের খালাত বোনের কাছে সন্তানকে লালন পালন করার জন্য দিয়েছি।

এবিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন সোমবার দুপুরে জানান, শুনেছি শিশুটিকে পালক দেয়া হয়েছে, বিক্রির বিষয় আমি জানিনা।

সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সোমবার দুপুরে জানান, প্রথম শালিসে আমি থাকলেও পরের বৈঠকে ছিলাম না। শিশুটির মা শিশুটিকে নিবে না বলায়, তার বাবার কাছে হস্তান্তর করার হয়েছে বলে জেনেছি। পরবর্তীতে কি হয়েছে সেই বিষয়ে আমি জানি না।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মো. মাহফুজ সোমবার দুপুরে জানান, শিশুটির পিতাকে সংবাদ দিয়েছি আসার জন্য। সে আসলে শিশুটিকে উদ্ধার করা হবে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২২ জানুয়ারি ২০২৪

Share