চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক:
নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লে. জে. আবু বেলাল মো. শফিউল হক। বুধবার এক নির্বাহী আদেশে তাকে সেনাপ্রধান প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)-এর পরিচালক মো. শাহিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তুন সেনাপ্রধানের জন্ম ১৯৫৮ সালে। তিনি ১৯৭৮ সালের ১৮ জুন সেনাবাহিনীর আর্মার্ড কোরে কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে একজন সেরা প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভকারী আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে দর্শনেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রিজিওনাল কানেকটিভিটির ওপর পিএইচডি করছেন। তিনি তার কর্মজীবনে ইরাকে ও ইথিওপিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। ইথিওপিয়ায় তিনি ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন।
জানা যায়, আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। তার বাবার নাম শফিউল হক এবং মায়ের নাম রওশনারা হক। তিনি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের ছোট ভাই। আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ও সোমা হক দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াকে ২০১২ সালের ২৫ জুন থেকে পরবর্তী তিন বছর মেয়াদের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগ দেয়া হয় এবং ওই দিনই তিনি লে. জেনারেল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীনের স্থলাভিষিক্ত হন। সেনাবাহিনীর তৎকালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়াকে সেনাপ্রধানের পদে ২০১২ সালের ৭ জুন নিয়োগপত্র দেয়া হয় এবং ওই দিনই আগের সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল মুবীনের চাকরির মেয়াদ ২০১২ সালের ১৫ জুন থেকে আরো ১০ দিন বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান হিসেবে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হলেও পরে এ মেয়াদ বৃদ্ধিরও নজির রয়েছে। বহুল আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ ২০০৫ সালের ১৫ জুন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তিন বছরের মেয়াদে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেলেও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ‘জনস্বার্থে’ তার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়।
সরকারিভাবে প্রকাশিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময় জারি করা প্রজ্ঞাপন ও আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে প্রথমেই ছিলেন সেনা সদরের চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম। তিনি চলতি বছরের ডিসেম্বরে অবসরে যাচ্ছেন। এরপর রয়েছেন সেনাপ্রধান হিসেবে গতকাল নিয়োগপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনোয়ার হোসেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী (বীর বিক্রম) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছেন আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লে. জেনারেল সাব্বির আহমেদ। সাব্বির আহমেদ সম্প্রতি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। এ বিষয়ে সরকারের উদার সহযোগিতা পান তিনি। জল্পনা-কল্পনা ছিল, চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো সমাপ্ত করার সুযোগ দিতে বর্তমান সেনাপ্রধানের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু গতকাল সে জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সেনাপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় না। অতীতে এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। জেনারেল মইনকে সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তার কয়েকজন জ্যেষ্ঠকে ডিঙ্গিয়ে। আগের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে অবসরকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
আগের ১৩ জন সেনাপ্রধান :
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আগের প্রধানদের মধ্যে প্রথম কে ছিলেন এ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ। অ্যাসিন্ট্যান্ট কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন লে. কর্নেল এম আব্দুর রব বীরউত্তম।
উইকিপিডিয়াতে কয়েকটি সূত্রের বরাতে এম আব্দুর রবকেই প্রথম সেনাপ্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্রধান।
জর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহর নিজেরও দাবি, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের পদ সৃষ্টি হয় ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল এবং তাকে ওই পদে প্রথম নিয়োগ দেয়া হয়।’ কেএম সফিউল্লাহ সেনাপ্রধান হিসেবে ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল) ১৯৭৫ সালের জুলাই থেকে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই সেনাবাহিনী প্রধানের পদ লেফটেন্যান্ট জেনারেলে উন্নীত হয়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এইচ এম এরশাদই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সেনাপ্রধানের পদে বহাল থাকেন।
১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতিকুর রহমান। এরপর ১৯৯৪ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূরুদ্দিন খান।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সালের জুন পর্যন্ত। আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে সরিয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল) মুস্তাফিজুর রহমান সেনাপ্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন ১৯৯৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর এবং ২০০০ সালের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত এ পদে বহাল থাকেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন ২০০২ সালের ১৬ জুন থেকে ২০০৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত। ২০০৫ সালের ১৫ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মইন-উ-আহমেদ।
তার সময়ে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা স্থায়ীভাবে জেনারেলে উন্নীত করা হয় এবং তিনি সে পদবি গ্রহণ করে ২০০৯ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
এদিন থেকেই জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়ার আগের সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন দেশের ১২তম সেনাপ্রধান হিসেবে তিন বছরের মেয়াদে নিয়োগ লাভ করেন।
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur