সেই শাকিলা এই শাকিলা

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক: বৃহস্পতিবার,২৭ আগস্ট ২০১৫  ১১ : ৫৯ অপরাহ্ন

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। উচ্চ আদালতের এ আইনজীবী জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে (এসএইচবি) অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারান্তরীণ। একসময় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদচারণ ছিল তার। সেই সংস্কৃতিমনস্ক ও আধুনিক শাকিলা ফারজানা জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় তার সহকর্মী, পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতদের অনেকেই অবাক হয়েছেন। র‌্যাব (RAB) বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই বিএনপি নেত্রী শাকিলা ফারজানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তার পরিবার ও সহকর্মীদের মতে, পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন শাকিলা। তার মতো উচ্চশিক্ষিত নারী জঙ্গি অর্থায়নের মতো ন্যক্কারজনক কাজে জড়িত হতে পারেন না। র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যারিস্টার শাকিলার বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তিনি হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়ন করছেন এ ডকুমেন্টও রয়েছে র্যাবের হাতে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১৮ আগস্ট জঙ্গি সংগঠন হামজা ব্রিগেডকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা জোগান দেওয়ার অভিযোগে শাকিলাসহ তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। বুধবার তারা এ মামলায় জবানবন্দি দেন।’

জানা যায়, ১৯৭৭ সালে জন্ম নেওয়া শাকিলা ফারজানার লেখাপড়া শুরু চট্টগ্রামের সেন্ট মেরিজ স্কুলে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ও এলএলবি শেষ করে চট্টগ্রাম আদালতে দুই বছর আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যান শাকিলা। সিটি ইউনিভার্সিটি লন্ডন থেকে বার অ্যাট ল পাস করে ২০০৪ থেকে ঢাকা উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে মনোনিবেশ করেন।

ছাত্রজীবনে শাকিলা ফারজানা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও উচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করার পর থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। শাকিলা নব্বই দশকের মাঝামাঝি বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই সময়টায় তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করতেন। শাকিলা দুই সন্তানের জননী। তার স্বামী বাহাউদ্দিন বাহাদুর একজন ব্যবসায়ী।

শাকিলার চাচা সৈয়দ নেছার উদ্দিন বলেন, ‘শাকিলা ফারজানাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’

শাকিলার সহকর্মী ব্যারিস্টার ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার বলেন, ‘কাজে কর্মে মনে হয়েছে শাকিলা ফারজানা সহজ সরল নারী। তিনি জঙ্গি সংগঠনে জড়িত, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

শাকিলা ফারজানার আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন বলেন, ‘জঙ্গি অর্থায়ন করলে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরম পূরণ করে ব্যাংকে টাকা জমা করবে না। ডনের ব্যাংক হিসেবে যে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে তা হেফাজতে ইসলাম নেতাদের মামলার খরচের টাকা।’

শাকিলা ফারজানার বাবা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের রাজনীতি শুরু হয় ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৬৮ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অবশ্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদুল আলম তখন যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সাকার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন ওয়াহিদুল আলম। তিনি যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন জাতীয় যুব সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়ারম্যান।

১৯৮৫ সালে হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওয়াহিদ। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি হাটহাজারী আসন থেকে টানা চারবার (বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ) এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে হুইপ নির্বাচিত হন ওয়াহিদুল আলম। একই সময়ে তিনি গাইবান্ধার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।  (বাংলাদেশ প্রতিদিন)

Share