Home / ইসলাম / সুস্থ থাকার ১০ ইসলামি শিষ্টাচার
সুস্থ

সুস্থ থাকার ১০ ইসলামি শিষ্টাচার

সুস্থতা আল্লাহ তাআলার বড় নিয়ামত। তিনি যাকে যতটুকু সময়সীমা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সে তার এক মুহূর্ত আগে বা পরে মারা যাবে না। কিন্তু সুস্থতা বা অসুস্থতা ব্যক্তির দৈনন্দিন অভ্যাসের ওপর কিছুটা নির্ভরশীল। তাই সুস্থ থাকার জন্য অনেক মানুষ অনেক কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এখানে ইসলামের আলোকে সুস্থ থাকার বিশেষ ১০টি আমলের কথা আলোচনা করা হলো:

ভোরে শয্যা ত্যাগ
ফজরের সময় ঘুম থেকে জাগলে এবং ফরজের পরে না ঘুমালে যেমন সুস্থ থাকা যায়, তেমনি নামাজের মাধ্যমে দিনটি শুরুও করা যায়। ফজরের পরের সময়টি বরকতময়। এ সময় মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঘুমাতেন না। হজরত ফাতেমা (রা.) বলেন, একদা মহানবী (সা.) আমার ঘরে এসে আমাকে ভোরবেলায় ঘুমন্ত দেখে বললেন, ‘মামণি ওঠো, তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক সংগ্রহ করো। অলসদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। কেননা, আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত রিজিক বণ্টন করে থাকেন।’ (তারগিব)

মেসওয়াক করা
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার প্রধান মাধ্যম হলো মেসওয়াক করা। যদি কেউ সঠিকভাবে মেসওয়াক করে, তবে তার পাশের লোকজন মুখের গন্ধের কারণে কষ্ট পান না। তাই মহানবী (সা.) প্রতিটি সালাতে অজুর আগে মেসওয়াক করতেন। তিনি বলেন, ‘মেসওয়াক মুখ পরিষ্কার ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।’ (ইবন মাজাহ)

পরিমিত পানাহার করা
পরিমিত পানাহার সুস্থ দেহের জন্য অপরিহার্য। একেবারেই স্বল্প অথবা অতিভোজন উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই মহানবী (সা.) পরিমিত পানাহার করতেন। বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) পেটকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাদ্য, এক ভাগ পানীয় এবং এক ভাগ শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য ফাঁকা রাখতেন। (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুমিন খায় এক পেটে আর কাফির খায় সাত পেটে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়ায় যেসব লোক ভূরিভোজ করে, তারাই হবে কিয়ামতের দিন অধিক ক্ষুধার্ত।’ (ইবন মাজাহ)

শরীরচর্চা করা
শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর পানাহারের পাশাপাশি শরীরচর্চা করাও আবশ্যক। এ জন্য প্রাচীনকাল থেকেই শারীরিক ব্যায়াম, সাঁতার ও কুস্তির প্রচলন ছিল। সাহাবিদের যুগেও এর প্রচলন ছিল। মহানবী (সা.) বলেন, ‘দুর্বল মুমিন অপেক্ষা শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়।’ (মুসলিম)। এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি করাও একটি শরীরচর্চা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.)-এর চেয়ে দ্রুতগতিতে আর কাউকে হাঁটতে দেখিনি।’ (তিরমিজি)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ইমানের অঙ্গ। পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন। অপরিচ্ছন্নতার কারণে নানাবিধ রোগ ছড়ায়। তাই দেহ-মন পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয় মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি। তা হলো—খতনা করা, নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা, গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা এবং বগলের লোম ওপড়ানো।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা তোমাদের আশপাশ পরিষ্কার রাখো।’ (তিরমিজি)

তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা
তাহাজ্জুদের নামাজ যেমন আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করে, তেমনি তা বান্দার শারীরিক রোগ দূর করে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায়ে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। কেননা, এটি তোমাদের আগের নেককারদের আমল। তাহাজ্জুদের সালাত আল্লাহর নৈকট্যলাভ ও গুনাহ থেকে বাঁচার উপায়, মন্দ কাজের কাফফারা এবং শারীরিক রোগের প্রতিষেধক।’ (তিরমিজি)

বিশেষ ঔষধি খাবার গ্রহণ
সুস্থ থাকার জন্য মহানবী (সা.) নিজে বেশ কিছু ঔষধি খাবার গ্রহণ করার পাশাপাশি সাহাবিদেরও সে ব্যাপারে নির্দেশ দিতেন। তা হলো খেজুর, জমজমের পানি, জয়তুন তেল, মধু ও কালিজিরা। খেজুরের ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা খেজুর দিয়ে ইফতার করো। কারণ তা বরকতময় খাবার।’ (তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই জমজমের পানি বরকতপূর্ণ। এটি তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগের নিরাময়কারী।’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ‘মধু ও কালিজিরা মৃত্যু ছাড়া সব রোগের ওষুধ।’ আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা জয়তুন তেল খাও এবং তা মালিশ করো। কারণ তা বরকতময় বৃক্ষ থেকে উৎপন্ন।’ (তিরমিজি)

রাগ প্রশমিত করা
রাগ ব্যক্তিজীবনে একটি খারাপ গুণ। এর মাধ্যমে মানুষ তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। রাগে ফেটে পড়ে কেউ কেউ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সুস্থ থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কুস্তিতে জয়লাভ করে, সে শক্তিশালী নয়; বরং যে ক্রোধকে দমন করে, সে-ই অধিক শক্তিশালী।’ (বুখারি)। রাগ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাগান্বিত হবে, তখন সে যেন বসে পড়ে। এতেও রাগ প্রশমিত না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (আবু দাউদ)। তাই রাগ না জমিয়ে ক্ষমা করাই শ্রেয়। মুমিনদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যারা কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকেন এবং রাগান্বিত হলে ক্ষমা করেন।’ (সুরা আশ-শুরা: ৩৭)

সদালাপী ও হাসিখুশি থাকাসুস্থতার জন্য হাসিখুশি থাকার বিকল্প নেই। মহানবী (সা.) নিজে অত্যন্ত সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল চেহারার অধিকারী ছিলেন। যদি কেউ মনমরা হয়ে চিন্তিত অবস্থায় থাকে, তাতে সে অসুস্থ হতে পারে। সাহাবিরা বলেন, ‘আমরা মহানবী (সা.)-এর চেয়ে হাসিখুশি আর কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুমিন সদালাপী হয়। যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয় না এবং অন্যরাও তার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা প্রদর্শন করে না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এশার পর ঘুমানো
রাত জেগে কাজ করা অথবা লেখাপড়া করা কোনোটিই ইসলামসম্মত নয়। ইসলামের সুন্নত পদ্ধতি হলো, এশার নামাজের পর ঘুমাতে হবে এবং ফজরের পর না ঘুমিয়ে কাজ করতে হবে। সাহাবিরা বলেন, ‘মহানবী (সা.) মাগরিবের নামাজ শেষে রাতের খাবার খেতেন এবং এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়তেন।’ (তিরমিজি)

প্রত্যেকেই আজীবন সুস্থ থাকতে চায়। কিন্তু অনেকে সুস্থ থাকার কৌশল জানে না অথবা জানলেও তা সঠিকভাবে মানে না। তাই এসব শিষ্টাচার পালন করলে সুস্থ থাকার পাশাপাশি নেকি লাভেরও মাধ্যম।

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়