Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
ভোট

ফরিদগঞ্জে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

এবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলে দোয়া করবো, না পারলে শুধু বদদোয়া দিয়ে বাড়ি ফিরে যাব। ফরিদগঞ্জের চরদুঃখিয়া পুর্ব ইউনিয়নের একলাশপুর গ্রামের ফজলুর রহমান (৭৫) ক্ষোভের সাথে একথা বলেছেন ফজলুর রহমান।

আগামী ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকল শ্রেণি পেশার ভোটারদের কথা। আবার প্রার্থীদেরও আশা এবং প্রত্যাশা অবাধ ও সুষ্ঠুভোটের। তবে এবার অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহনে সরকারি প্রশাসন রয়েছে কঠোর অবস্থানে।

উপজেলা নির্বাচনন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা ছাড়া ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে এবার ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে ৭৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ১২৫  জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ও ৪শ ৯৩ জন সাধারণ সদস্য অংশ গ্রহণ করছেন। ভোট গ্রহনের কে›ন্দ্র ১শ ২২ ,ভোট গ্রহনের কক্ষ ৭শ ৭২টি । ১৩টি ইউনিয়নের পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৪০ হাজার৯৭৩ জন, মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৪১ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৪শ ১৪ জন। ১৩ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্মার পদে লড়ছেন পুরুষ ও মহিলা সহ মোট ৬ শ ৯১ জন প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটার ও প্রার্থীদের প্রত্যাশা মিটাতে এবং প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি ঠেকাতে  থানা পুলিশ প্রতিটি ইউনিয়নে বিট পুলিশিং এর ব্যানারে সভা করা ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে টহল অব্যাহত রেখেছে। সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে এই পর্যন্ত কোন সংঘর্ষ ও কাঁদা ছোড়াছুড়ির ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় নি। বরং উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের সকল প্রার্থী সুষ্ঠু ভোটের জন্য একজোট হয়েছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে হামলা মামলা ঠেকানো যাচ্ছে না।  

এই পর্যন্ত বিভিন্ন হামলা আর ভাংচুরের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। যাতে নামে বেনামে এবং একটি ইউনিয়নের ঘটনায় অন্য ইউনিয়নের প্রার্থীর লোকজনকেও মামলায় আসামী করা হয়েছে। উক্ত মামলার তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে চাঁদপুরের ডিবি পুলিশের কাছে। এ কারণে ফরিদগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নে সাধারণ ভোটারদের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ম ধাপে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে চমক দেখা যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের সুপারিশ করা সকল প্রার্থীরাই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

তবে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তৃনমূলের সুপারিশ উপেক্ষিত হওয়ায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এলাকার ভোটারদের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে বাধ্য হয়েছেন।

১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী ২২ প্রার্থী নিজেদেরকে  বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়ে উক্ত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই চাঁদপুর জেলা আওয়ালীগ  ওই ২২ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করলেও ওই বহিষ্কারাদেশ বিদ্র্হোী প্রার্থীরা কোন পাত্তাই দিচেছ না। ফলে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ১৩ প্রার্থীর জন্য বিদ্রোহীরাই মূলত নৌকা প্রতীকের জয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে বিএনপির বিভিন্ন পদে থাকা ১৮জন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী।

আওয়ামীলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে দুরাবস্থা দেখা দেয়ায় বিএনপি নির্বাচন না করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। ইতিমধ্যেই আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহীদের পক্ষে ভোটের মাঠে না নামতে নিদের্শনা দিয়ে, দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নিদের্শনা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি।

বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মোঃ ইউনুছ বলেন, যে নৌকা গনমানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে সেই নৌকাকে ভোট না দেয়ার জন্য তিনি  আহবান জানান।

তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করেছে । তবে  বিএনপির প্রাথীর্রা দলীয় পরিচয় নয়, তারা মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করছে বলে এই বিএনপি নেতা দাবি করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী নেই এগুলো হলো গোবিন্দপুর দক্ষিণ, রূপসা উত্তর ও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন।

 সরেজমিন গিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়ন ছাড়া আর ১১ টি ইউনিয়নেই ত্রিমুখী ভোটের লড়াই  হবে।

এদিকে বিভিন্ন  ভয়-ভীতির কারণে ভোটারগণ প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও  তারা বলছেন, ভোটের দিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখলে তারা ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাবেন।

বিভিন্ন ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটারগন  জানান,  এবারের নির্বাচনে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিতে চান। ফলে ভোটের মাঠে এবার অন্যরকম লড়াই হবে। এর পাশপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে ভোটারগন আশংকা করছে।  

  তবে ভোট আদো অবাধ ও সুষ্টু হবে কিনা এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে অনেকেই  এখনো সন্দিহান রয়েছেন। যদিও প্রশাসন অদ্যবধি সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষনা দিয়ে আসছেন।  সরকারি প্রশাসন অবাধ সুষ্টু ও নিরপেক্ষ ভাবে ভোট গ্রহনের কথা বারবার বললেও মূলত ৫ জানুয়ারী ভোটারগন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না এ নিয়ে সন্দীহান হয়ে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সাধারন ভোটাররা।

প্রতিবেদকঃ শিমুল হাছান, ৩ জানুয়ারি ২০২২