Saturday, 18 April, 2015 02:25:16 PM
চাঁদপুর টাইমস ডট কম
‘শামীমা আপার মার্কা, গিলাশ মার্কা’, ‘ভোট দিবেন কিসে গিলাশ মার্কাতে’। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী শামীমা আক্তারের নির্বাচনী প্রচারণায় বা গণসংযোগে যখন এভাবে শ্লোগান দেয়া হয়। তখন পাশ থেকে এক চায়ের দোকানদার বলে ওঠেন, ‘কি মার্কা বলল, লাশ! নির্বাচন কমিশন কি শেষ পর্যন্ত লাশকেও মার্কা বানাইছে’। তার পাশ থেকে একজন ভুল শুধরে দিয়ে বলে উঠেন, ‘আরে ভাই লাশ না গিলাশ (গ্লাস)।’ পরে চায়ের দোকানদার বলে উঠেন-‘ওই হলো, এবার যা মার্কা, শুনলে হাসি আসে!’
শুধু গ্লাস মার্কা নয়, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলরদের জন্য কেটলি, গ্লাস, মোড়া, পিঞ্জর, টিস্যু বক্স, পানপাতা, স্টিলের আলমারি, বয়াম, প্রেশার কুকার, হারমোনিয়াম, দোলনা, শিলপাটা, ঝুমঝুমি, ভ্যানিটি ব্যাগ ও টিয়া পাখি প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ভোটারদের কাছে হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে এসব প্রতীক নিয়ে ক্ষুব্ধ সংরক্ষিত আসনের নারী প্রার্থীরাও। তাদের অভিযোগ এ ধরনের প্রতীকের কারণে নারীদের আলাদা করে দেখা হচ্ছে। এসব প্রতীকের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে নারীদের গণ্ডি ঘরের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
শুধু নারী প্রার্থীরাই নন, এসব প্রতীক নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নারী সংগঠনগুলোও। তারা দাবি করেছে, নারী প্রার্থীদের হাস্যকর কিছু প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে করে নারীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে।
সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী শামীমা আক্তার এবার গ্লাস মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘এইটা একটা মার্কা হইল? দেশে কত ফুল, পাখি আছে, তা না দিয়া দিছে এইসব। ভোটারদের কাছে গেলে তারা বলে আপা আর কোনো মার্কা ছিল না।’
একই অভিযোগ উত্তরের সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী কাজী রহিমা খাতুনের। তার প্রতীক কেটলি। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রতীক হিসেবে আমি কেটলি চাইছিলাম কারণ আমি দেখলাম আর কোনো প্রতীক নেয়ার মত নয় ।এবার মুলা, বৈয়্যাম, ভ্যানিটি ব্যাগসহ যে প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে এগুলো মানুষের কাছে হাসির খেরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিন্তা করে প্রতীক নির্ধারণ করা উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনের।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবারই প্রথম সম্পূর্ণ আলাদা ৩৪ টি নতুন প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রতীক নির্ধারণ করে। এটি করতে গিয়ে ভোটারদের কাছে পরিচিত কিছু প্রতীক বাদ দিতে হয় কমিশনকে। এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত আরো ৩০টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়।
প্রতীক নিয়ে নারী সংগঠন মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিল-পাটা, ভ্যানিটি ব্যাগ, পান পাতা, কলস ইত্যাদি প্রতীক দিয়ে নারীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতেই সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের এমন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
সংরক্ষিত আসনের প্রতীক বরাদ্দ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘এই প্রথম আমরা সব নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রতীক নির্ধারণ করেছি। এ কারণে কিছু প্রতীক বাড়াতে হয়েছে। সংরক্ষিত পদের প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা আপত্তি তুলেছেন এটা আমাদের কানেও এসেছে। আসলে প্রতীক দেয়া হয় চিহ্নিত করার জন্য, কাউকে ঘরে ঢুকানো বা ছোট করার জন্য নয়।’
উল্লেখ, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য সংরক্ষিত ও অতিরিক্ত প্রতীকসহ মোট ১৮টি প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। এগুলো হল, কেটলি, গ্লাস, পানপাতা, পিঞ্জর, টিস্যু বক্স, বৈয়ম, মুলা, মোড়া, শিল-পাটা ও স্টিল আলমারি, ঝুমঝুমি, টিয়া পাখি, দোলনা, প্রেসার কুকার, ফ্রাইং প্যান, বাঁশি, ভ্যানিটি ব্যাগ ও হারমোনিয়াম।
চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ/২০১৫