Home / কৃষি ও গবাদি / সাবধান : ভাড়াটিয়াবেশে অপহরণকারী চক্র সক্রিয়
girl-kidnapped

সাবধান : ভাড়াটিয়াবেশে অপহরণকারী চক্র সক্রিয়

রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ভাড়াটিয়াবেশে অপহরণকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। অভিযোগেরভিক্তিতে চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

এদিকে, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার পাশপাশি বাড়ি ভাড়া দেয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়াদের ভোটার আইডি কার্ডসহ আনুষাঙ্গিক পরিচিতি নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপহরণকারী চক্রগুলো সাধারণত বাড়িওয়ালের সঙ্গে প্রথমে সুসম্পর্ক তৈরি পর বিশ্বাস অর্জন করে সুযোগ বুঝে বাড়িওয়ালার সন্তানকে নিয়ে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুক্তিপন দাবি করে।

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ওই দিন ভোর থেকে দুপুর ১টা নাগাদ রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি বাড়ির মালিক কাজী সুলতানের চার বছরের ছেলে প্রহরকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই যখন শিশু প্রহরের খোঁজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল ঠিক সেই মুহূর্তে সুলতানের বাড়ির ভাড়াটিয়াদম্পতি রানা ও মারুফা খাতুনের বাসা থেকে চিৎকার শুনে সবাই ছুটে যায় সেদিকে। গিয়ে জানা যায়, তাদের তিনবছরের সন্তান জিলানিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

একই সঙ্গে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার দুই শিশু নিখোঁজের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বাড়িওয়ালা সুলতান এবং ভাড়াটিয়া রানা একসঙ্গে ছুটে যান স্থানীয় থানায়। সেখানে জানানোর পাশাপাশি ঘটনাটি র‌্যাবকেও জানান সুলতান। এরপর র‌্যাব ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে। ঘটনার ২৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করা হয় অপহৃত দুই শিশুকে। সেইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় চার অপহরণকারীকেও।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, অভিনব পন্থায় অপহরণের ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল। ভাড়াটিয়া রানা ও তার স্ত্রী মারুফা খাতুনসহ রানার বাবা-মাও ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় রানা ও স্ত্রী তাদের সন্তানকেও ব্যবহার করে। শেষ মুহূর্তে রানা-মারুফা দম্পতি নিজেদের সন্তান জিলানী এবং বাড়িওয়ালার সন্তান প্রহরকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রানার বিরুদ্ধে শুধু অপহরণই নয় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলাও আছে।

র‌্যাবঅধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, প্রথমে রানা ও তার স্ত্রী মারুফা বাড়িওয়ালার ছেলে প্রহরকে ফুসলিয়ে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা রানার বাবা-মায়ের কাছে বাড়িওয়ালার ছেলে প্রহর এবং তাদের নিজ সন্তান জিলানিকে তুলে দেয়া হয়। পরে এ দুই শিশুকে নিয়ে রানার বাবা-মা তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সরাইলে চলে যায়। সেখান থেকেই বাড়িওয়ালা সুলতানের কাছে ফোনের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

কিন্তু র‌্যাব ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান জানতে পারে। র‌্যাব-১ এর একটি অনুসন্ধান দল গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরো জানতে পারে যে; রানা, তার স্ত্রী, রানার বাবা ও মা এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত। পরে গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের পাশে এক মুচির কাছ থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত রানার স্ত্রী মারুফা খাতুন ও রানার বাবা আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রানার বাসায় অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মুক্তিপণের টাকা পাঠানোর জন্য যে বিকাশ নম্বর দেয়া হয়েছিল সেটি রানার নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এ ছাড়া রানার বিরুদ্ধে তিনটি ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলার কাগজপত্রও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। মূলহোতা রানাসহ তারা সহযোগীরা র‌্যাবের তৎপরতা টের পেয়ে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের পাশে এক মুচির কাছে নিজেদের তিন বছর বয়সি ছেলে জিলানীসহ অপহৃত প্রহরকে ফেলে পালিয়ে যায়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এনামুল হকের ঘর ভাড়া নেন জনৈক পলাশ নামে এক ব্যক্তি। এর একদিন পর অপহৃত হয় বাড়িওয়ালার ছেলে মেহেরাজ (৫)। পর দিন বিকেলে অপহরণকারী ফোনে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হলে গ্রেপ্তার হন পলাশ। পলাশ ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করেন।

তিনি পুলিশকে জানান, ওইদিন বিকেলে পাশের দোকানে চকলেট কিনে দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে অপহরণ করেন তিনি।

চলতি বছরের জুন মাসে মানিকগঞ্জ জেলা সদরের ডাউটিয়া গ্রামের সুমন ও তার স্ত্রী লিপি কাওয়ালিপাড়া বাজার এলাকায় আওয়াল মিয়ার বাসা ভাড়া নেন। বাসায় ওঠার পর সুমন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বাড়ির মালিকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর গত ৭ জুন বিকেলে সুমন ও লিপি তাদের বাড়ির মালিকের মেয়ে আশা (১০) ও আরিফা (৫) এবং অপর ভাড়াটিয়া আলী হোসেনের মেয়ে আঁখিকে (১১) সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যান। কয়েক ঘণ্টা ঘোরাফেরার পর মহিষাশী বাজার এলাকা থেকে ওই শিশুদের গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করলে আরিফা কান্নাকাটি শুরু করে। আরিফার কান্নাকাটিতে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা জড়ো হতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সুমন ও লিপি দম্পতি পালিয়ে যায়। পরে শিশুদের উদ্ধার করে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে জানান, কোনো অপহরণের ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের পরিবার যথাসময়ে পুলিশকে তথ্য দিলে অপরাধীদের ধরতে সহজ হয়।

তিনি জানান, বাড়ি ভাড়া দেয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়া সম্পর্কে কিংবা বাসায় গৃহপরিচারিকা, দারোয়ান, ড্রাইভার নিয়োগ দেয়ার পূর্বে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া উচিৎ। বিশেষ করে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা উচিৎ।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘অপহরণের পর অনেকে ভয়ে আমাদের জানান না, নিজেরাই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আপোষ করে ফেলেন। কিন্তু আমাদের জানালে আমরা অবশ্যই তাদের সাহায্য করবো। এ বিষয়ে র‌্যাব সহায়তা করার জন্য সবসময় প্রস্তুত।’

 

|| আপডেট: ০৭:০৬ অপরাহ্ন, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সোমবারচাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫