৫০ বছরে ক্রীড়ায় সাফল্য

৫০ বছর আগে অপার বিস্ময়ে এ বিশ্ব চাক্ষুস করেছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। লাল-সবুজের ঐশ্বর্যের,কৌলীন্যের অভূতপূর্ব সূর্যোদয়। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। ক্রিকেটের পরিভাষায় হাফ সেঞ্চুরি।

এ ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেছে। তুঙ্গস্পর্শী সফলতার পরতে পরতে রয়েছে বাঙালির মেধা-মননশীলতা,উদ্ভাবনী ক্ষমতা,সৃজনশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রত্যয়। যার বীজ রোপণ করা হয় নয় মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে।

৫০ বছরে খেলাধুলায় কতখানি এগিয়েছে বাংলাদেশ? যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ৫০ গুণ এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২৫ গুণ,যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি,সেখানে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সফলতার গল্প শোনাতে গেলে হোঁচট খেতে হয় বারবার।

কেন এমন হলো? একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৮৭ সালে ২১ বছর বয়সে নিয়াজ মোরশেদ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার বিরল সম্মানের অধিকারী হন। স্বাধীনতার ১৬ বছর পর দাবায় সেই বিস্ময়কর সাফল্য বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছিল।

নিয়াজের সেই শৃঙ্গস্পর্শী সাফল্যের ৩৪ বছর পরও বাংলাদেশ থমকে আছে মাত্র পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টারে। সেখানে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত পেয়েছে ৬৭ জন গ্র্যান্ডমাস্টার।

ক্রীড়ায় বাংলাদেশের সাফল্য কম নয়। কিন্তু সময়ের পাল্লায় তুললে নিতান্তই অপ্রতুল মনে হয় সব অর্জন। ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে খেলার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রবেশ, ১৯৯৭-এ আইসিসি ট্রফি জয়,প্রথম বিশ্বকাপে খেলা ১৯৯৯-তে,স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে ইতিহাস গড়া এবং সে ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের ২৬ জুন দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসাবে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া-সবই সাফল্যের মণিহারের এক একটি মুক্তা।

ফুটবলে নজরকাড়া সাফল্য ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতির টাইগার ট্রফি জয়। মোনেম মুন্নার নেতৃত্বে সেই হিরণ্ময় জয়ের স্মৃতি আজও ফুটবলপ্রেমীদের ভালো লাগার সম্পদ। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে প্রথম নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় বাংলাদেশ ১৯৯৯-তে কাঠমান্ডু এসএ গেমসে।

এর বাইরে অ্যাথলেটিক্স, শুটিং,আরচারিতে কোনো কোনো তারকা উদিত হয়েছেন। আবার মিলিয়েও গেছেন পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। গলফে সিদ্দিকুর রহমান ও আরচারিতে রোমান সানার উত্থান ছিল আশা জাগানিয়া। ক্রিকেটে যুবাদের হাত ধরে বাংলাদেশ প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আসরে শিরোপার স্বাদ পায় ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে।

কেন এ ছিটেফোঁটা সাফল্য, ধারাবাহিকতার ঘাটতি? বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষদর্শী,প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল হোসেন মাহমুদ খান এজন্য দায়ী করেন,লক্ষ্যহীনতা ও পরিকল্পনার অভাবকে।

তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মানেই এখনো পৌঁছতে পারেনি। তবে এতসব হতাশা ও হাহাকারের মাঝে ক্রীড়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে অর্জন টেস্ট দলের মর্যাদা পাওয়া।’

বার্তা কক্ষ ,
১৭ ডিসেম্বর ২০২১

Share