তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে তথ্য কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের মাধ্যমে যে কেউ যে কোনো তথ্য সরকারের কাছে চাইতে পারে।
তথ্য কমিশনের মাধ্যমে শুধু সে তথ্যই তিনি পাবেন না যেটা নন-ডিসক্লোজার আইটেম। এক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামের মামলার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে যেকোনো তথ্য পেতে হলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়, সে আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি মন্ত্রণালয়ে পাওয়া না যায় তাহলে তথ্য কমিশনে আবেদন করা যায়। ২০১৪ সালে তথ্য কমিশন গঠিত হবার পর থেকে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৩১টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বুধবার (১৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে করোনাকালীন দ্বিতীয় পর্যায়ের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ। বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, বিএফইউজের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ,সিইউজের সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটো প্রমুখ।
রোজিনা ইসলামের বিষয় সাংবাদিকদের আবেগতাড়িতভাবে না দেখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তার যাতে সুবিচার হয়, তিনি যাতে ন্যায়বিচার পান, তার প্রতি কোনোভাবে যাতে অন্যায় না হয় সেটি আমরা দেখছি, সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। প্রধানমন্ত্রী ও আমি সাংবাদিকদের মান মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় আন্তরিক ও বদ্ধপরিকর।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেকোনো মন্ত্রী বাংলাদেশে দুটি শপথ গ্রহণ করেন, একটি হচ্ছে মন্ত্রী হিসেবে শপথ, অন্যটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষার শপথ, সে শপথ আমাকেও নিতে হয়েছে। যেহেতেু আমি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার শপথ নিয়েছি মন্ত্রিসভায় কোনো কিছু আলোচনা হলে সেটি বাইরে বলতে পারি না। যেটি আমাকে বলতে বলা হবে শুধু সেটুকুই বলতে পারব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি বা অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি যেগুলো বাইরে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে চুক্তিতে আছে বা সেই দেশের অনুরোধ আছে সেগুলো কখনো বাইরে প্রকাশ করতে পারি না। সেটি সংরক্ষণ করা যেকোনো মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে গোপন নথি পাচার অন্যায়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের মান মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় বদ্ধপরিকর এবং সাংবাদিকদের কল্যাণে যে কাজগুলো বাংলাদেশে করেছেন সেগুলো অতুলনীয় ও অভাবনীয়। এক্ষেত্রে রোজিনা ইসলাম যাতে সুবিচার পান সেটি অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করবো।
এ বিষয়ে বারবার স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পুলিশ হেফাজতে তার সম্মান যাতে রক্ষা হয় এবং কারা হেফাজতে তিনি যাতে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পান, সেটি যাতে নিশ্চিত করা হয় আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন। তিনি যাতে ন্যায়বিচার পান সেটি অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করবো। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারো কোনো দায় থাকলে সেটিও নিশ্চয় বের হয়ে আসবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামকে নিয়ে কী ঘটনা ঘটেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেগুলো বাইরে প্রকাশ করা যাবে না এমন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়ে তার পকেটসহ অন্যান্য জায়গায় রেখেছিলেন এবং কিছু ছবি তুলেছিলেন। তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি কাগজগুলো ফেরত দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এখানে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি রোজিনা ইসলাম ফাইল থেকে নিয়েছেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব হচ্ছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে প্রশ্ন হচ্ছে তিনি সেখানে পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন কেন? এটি নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখেননি, এক ঘণ্টা পরেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। যে বিলম্বটা হয়েছে সেটি কেন হলো পুলিশ খুঁজে বের করবে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে, বিষয়টা তদন্তাধীন আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে তাকে সেখানে কেউ হেনস্থা করেছিল কিনা? রোজিনা ইসলামের কী অপরাধ ছিল, এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারো কোনো অপরাধ আছে কিনা বেরিয়ে আসবে। পুলিশও তদন্ত করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে তো অনেক খেলা আছে, আমাদের দেশ এতো এগিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তান থেকে এগিয়ে গেল অনেক দূর, ভারতকেও অনেক ক্ষেত্রে পেছনে ফেলে দিল, সেটি তো অনেকের সহ্য হয় না। সেই কারণে দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র আছে। সেজন্য একেক সময় একেক ইস্যু তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনে শতশত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, প্রায় একশ’র কাছাকাছি শিশুকে হত্যা করা হলো সেটি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিবৃতি দিল না। রোজিনা ইসলাম কেন পাঁচ ঘণ্টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে থাকলেন সেটি নিয়ে বিবৃতি দিয়ে দিল। আরো বেশ কয়েকটি সংগঠন আছে যেগুলো ফিলিস্তিনে এতো অন্যায় হচ্ছে সেটি নিয়ে বিবৃতি দেয়নি। এমনকি জাতিসংঘও কথা বলতে সাত দিন সময় নিয়েছে। কিন্তু রোজিনা ইসলামের বিষয় নিয়ে অনেকেই কথা বলেছে।
সুতরাং সাংবাদিক বন্ধুদের অনুরোধ জানাবো সরকারের ওপর আস্থা রাখুন, এক্ষেত্রে সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, নিয়ম-নীতির যদি কেউ তোয়াক্কা না করে সেক্ষেত্রে যাতে সেখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় সে ব্যাপারে নিশ্চয় সাংবাদিক সমাজ একমত থাকবে।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটা ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে হাজার হাজার সাংবাদিক উপকৃত হয়েছে। কোনো সাংবাদিক অসুস্থ হলে, চিকিৎসাধীন থাকলে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পান, মৃত্যুবরণ করলে এই কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ৩ লাখ টাকা তার পরিবার পায়। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া যায় কিনা সেটিও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছি।
২০২০ সালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সাংবাদিককে করোনাকালীন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অভাবনীয়ভাবে এবার প্রধানমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন, যে জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজ তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ঢাকা ব্যুরো চীফ