অনেকটা তাড়াহুড়া করেই আগামীকাল বৃহস্পতিবার ৯ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা। এতে তোলা হচ্ছে আরো ৪২টি প্রকল্প। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে এটিই বর্তমান সরকারের শেষ একনেক সভা।
একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে ৩৬টি প্রকল্প।
এর বাইরে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আছে একটি প্রকল্প। অবগতির জন্য পাঁচটিসহ মোট ৪২টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে তোলা হবে।
আগামী সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিলের পর আইনি বাধা না থাকলেও রেওয়াজ অনুযায়ী সাধারণত একনেক সভা করা হয় না।
এ হিসাবে এটি সরকারের শেষ একনেক সভা বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার জনগণের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয়। এগুলো কোনো জনপ্রিয় প্রকল্প নয়। আর নির্বাচন সামনে রেখে এসব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত চার মাসে তিন শতাধিক প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এত দ্রুত সময়ে ডিপিপি যাচাই-বাছাই করে কার্যপত্র তৈরিসহ পিইসি সভা করতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা। তাড়াহুড়া করে প্রকল্প নিতে গিয়ে সরকারের অর্থের অপচয় হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে একনেকের ছয়টি বৈঠকে ২০০টির মতো প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। গত একনেকেই অনুমোদন পেয়েছে ৭৫টি প্রকল্প।
আগামী একনেকে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে আরো ৪২ প্রকল্প। বাস্তবতা হলো, সরকার চলমান প্রকল্পগুলোতেই চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে যে প্রকল্পগুলো এখন অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো এডিপিতে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দেখা যাবে, আগামী দুই বছরে মন্ত্রণালয়গুলো তেমন বরাদ্দই দিতে পারবে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাবে। আর মেয়াদ বাড়লে ব্যয় তো বাড়বেই। গত নির্বাচনের আগে যেসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তার বেশির ভাগই এখনো মাঝপথে।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ৩০৯টি চলমান প্রকল্প রয়েছে। ৮২৫টি প্রকল্প বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। সেই তালিকা থেকেই এখন প্রকল্প পাস করা হচ্ছে।
একনেকে অনুমোদন পেতে পারে যেসব প্রকল্প : গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঢাকার শেরেবাংলানগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ,শেরেবাংলানগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ,তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনরুদ্ধার, সম্প্রসারণ,সংস্কার ও উন্নয়ন,সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর,নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ, মুরাদনগর রামচন্দ্রপুর বাঞ্ছারামপুর জেলা মহাসড়কটি যথাযথভাবে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ,গাবতলী সিটিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনারদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ,বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহে রেজিলিয়েন্স প্রকল্প,ঢাকা পানি সরবরাহ উন্নয়ন, ঢাকা স্যানিটেশন উন্নয়ন,বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধ নিদর্শন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।
এ ছাড়া মুগদা মেডিক্যাল কলেজের প্রয়োজনে অবকাঠামো নির্মাণ,মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩-এর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়ন, যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা,সারা দেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ দ্বিতীয় পর্ব,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মৌলভীবাজার প্রথম পর্যায় প্রকল্প,পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি অনুমোদন পেতে পারে।
৮ নভেম্বর ২০২৩
এজি