সরকারিকরণ হলো মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

দেশখ্যাত শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাগুরু ওয়ালী উল্লাহ পাটওয়ারী প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ মতলবগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ঐতিহ্য আর গৌরবের স্মৃতিগাঁথা এ বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়েছে।

গত ১৩ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে দেশের ৭৯টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করণের ঘোষণার সাথে এটির নাম উঠে এসেছে।

বিদ্যালয়টি শতবর্ষপূতি উদযাপনের আগেই সরকারী করণের খবর শুনে সবাই যেন আনন্দে আত্মহারা।

বিদ্যালয়কে সরকারি করণের জন্য দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যবৃন্দসহ মতলবের স্থানীয় রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

চাঁদপুর-২ আসনের সাংসদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এ বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ তা বাস্তববায়ন হয়েছে।

শুধুমাত্র মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারি করণ হয়েছে তা নয়, সেই সাথে সরকারিকরণ হয়েছে মতলব ডিগ্রি কলেজও।

এই দু’খুশির খবর শুনে মতলববাসীর চেহারায় ফুটে ওঠেছে আনন্দের ছাপ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মতলব বাজারে আসা লোকজনের মুখে একটিই কথা ‘শুনেছেন মতলব স্কুল, কলেজ সরকারি হইছে’।

বিদ্যালয়টি সরকারী হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘স্কুলটি সরকারি করণ হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এমপিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সকল সদ্যসদের কাছে।’

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত এ বিদ্যালয়টির সুনাম রয়েছে সর্বত্র। ১৯১৭ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী জগবন্ধু ও বিশ্বনাথ মিলে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন প্রায় ৩ একর জমি।

আর তাদের নামেই নাম করণ করা হয় মতলবগঞ্জ জেবি উচ্চ বিদ্যালয়। ইংরেজী অক্ষর জে মানে জগবন্ধু এবং বি হলো বিশ্বনাথ। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বহু দানশীল ব্যক্তি জমি দান করেছেন এই প্রতিষ্ঠানের জন্য। আগামী বছর বিদ্যালয়টি শতবর্ষপূতি উদযাপন করবে।

মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সম্পর্কে ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু কথা:

দেশখ্যাত শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাগুরু ওয়ালী উল্লাহ পাটওয়ারী প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাপীঠ মতলবগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। যেটি মতলব বাজার এলাকায় অবস্থিত। তাঁর স্মৃতি ধন্য এ বিদ্যালয়টি যেমনি পড়াশোনায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে তেমনি সহ-পাঠক্রমিক কর্মকাণ্ডেও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সাফল্য বয়ে এনেছে।

প্রাক্তন সকল শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত ও গুণী শিক্ষক হলেন এই বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মরহুম ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্বাধীনতাপদক প্রাপ্ত এই শিক্ষকের মাধ্যমে গৌরবের র্শীষে উঠে বিদ্যালয়টি।

এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছায়ায় থেকে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী আজ আলো ছড়াচ্ছেন।

১৯৬০ সালে মতলবে প্রথম মেয়েদের জন্য পৃথক এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিদ ও মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ওয়ালী উল্যাহ পাটোয়ারী নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে পরিকল্পনা করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করতে সক্ষম হন।

শুরু থেকেই ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাইমারি শাখা ও ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শাখা ছিল এ বিদ্যালয়ে। শুরুর দিকে বিদ্যালয়টি ছিলো টিনের ঘর। ৫টি ক্লাস রুম নিয়ে শুরু হয়েছে এ বিদ্যালয়ের যাত্রা।

প্রথম দিকে প্রাইমারি শাখার ক্লাস চলতো স্কুলের বারান্দায়। প্রায় আড়াইশ’ শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৩-৮৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রাইমারি শাখা বন্ধ করে দিয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু রাখা হয়। অদ্য পর্যন্ত ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মরহুম ওয়ালী উল্লাহ পাটোয়ারী, পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আজিজুন নেছা, রহিমা খাতুন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আ. করিম, মোঃ সাদেক, আশ্রাফুননেছা, আনিছুজ্জামান মজুমদার, বিউটি বেগম, মো. কবির হোসেন ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান।

এ বিদ্যালয় থেকে প্রেসিডেন্ট স্কাউট অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হয়েছে ১১জন শিক্ষার্থী। তারা হলো- ১৯৯৭ সালে সুপ্রিয়া সরকার, ১৯৯৮ সালে মারজিয়া সোলাইমান শারমিন, ২০০০ সালে নূসরাত জাহান মিথেন, ২০০৩ সালে ফৌজিয়া শারমিন তিথি, ২০০৭ সালে জান্নাতুল হক সাকি, ২০০৮ সালে জেনিফার কাইউম অমি ও জান্নতুন নাঈমা, ২০১০ সালে কামরুন নাহার মুক্তা এবং ২০১২ সালে আরেফা ইয়াছমিন ইতানা, মুমু পোদ্দার ও নূসরাত ফারহানা বিনতু।

শুধু তাই নয়, এ বিদ্যালয় থেকে ৪জন ছাত্রী জাতীয় স্কাউটের প্রতিনিধি হয়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। মারজিয়া সোলাইমান শারমিন ১৯৯৯ সালে ভুটান, রহিমা খাতুন লোপা ২০০৫ সালে মালদ্বীপ, জান্নাতুল হক সাকি ২০০৭ সালে ভারত (ট্রেন জাম্বুরী) ও আরেফা ইয়াছমিন ইতানা ২০১২ সালে ভারত ভ্রমণ করেন।

এছাড়া জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে একক অভিনয়ে ২০১৩ সালে তৃতীয় হয়েছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুবাইয়া ইয়াছমিন বন্যা।

প্রতিবেদক- পলাশ রায়, মতলব দক্ষিণ

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯:০০ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

Share