Home / বিনোদন / সব সময় পুরুষ দরকার : শ্রীলেখা
সব সময় পুরুষ দরকার : শ্রীলেখা

সব সময় পুরুষ দরকার : শ্রীলেখা

জল-কাদা-বৃষ্টি পেরিয়ে পৌঁছনো গেল কামালগাজীর ফ্ল্যাট। কফিশপ বা হ্যাং আউটে যে স্বচ্ছন্দ নন শ্রীলেখা মিত্র। এই ফ্ল্যাটে একাই থাকেন? একা কেন? মেয়ে আছে। আর মেয়ে যখন বাবার কাছে যায় তখন? তখন আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন থাকে। কয়েকজন মানে? কী ভাবে বলি বলুন তো? এই বাড়িতে দু-তিনজন অশরীরী থাকেন আমার সঙ্গে। অশরীরী? এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? আমি তো অনুভব করি। আমার বাড়িতে ভূত বা স্পিরিট আছে। আর শরীরী? হ্যাঁ, বন্ধুবান্ধবেরা আসে। আড্ডা মারি। কোনো মহিলা একা ফ্ল্যাটে থাকলে ধরেই নেওয়া হয় বিশেষ পুরুষবন্ধুর সঙ্গে তিনি থাকেন। প্লিজ…..আজকের দিনে ভাবনাটা বড্ড ক্লিশে হয়ে যাচ্ছে না?

বেশ। সকলে বলছে চৌকাঠ-এ শ্রীলেখা অসাধারণ। চৌকাঠ-এই শ্রীলেখার কামব্যাক? কামব্যাকের কী আছে? আমি তো বহুদিন ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। কোথায়? যে শ্রীলেখা আমির খানের সঙ্গে কোকা কোলা-র বিজ্ঞাপন করেছিল, প্রদীপ সরকার যাঁকে মুম্বাইতে বিজ্ঞাপনের কাজ দেবেন বলে থেকে যেতে বলেছিলেন, সেই শ্রীলেখা টিভি শো-এর বিচারক হয়ে থেকে যাবেন, এটা ভাবতে অসুবিধে হয়…আমার পিআর খুব খারাপ। মাঝে বিয়ে, ডিভোর্স, বাচ্চা… একসময় ইংরেজি কাগজে আপনার প্রচুর ছবি বেরোত। তখন তো ভালোই পিআর ছিল। সিনেমার জন্যই ইংরেজি কাগজে ছবি বেরোত। এখন কেউ ডাকে না, ছবিও বেরোয় না। সাক্ষাৎকারের জন্য তো আপনি বাড়ি থেকেও বেরোতে পারলেন না। সন্ধ্যাবেলা কথা বলতে চাইলেন না মেয়েকে পড়াবেন বলে…

একটা উদাহরণ দিই। এক নামী সংস্থার চিপসের বিজ্ঞাপনের জন্য আমি মুম্বাইতে মোটা টাকার একটা কনট্র্যাক্ট সই করি। কিন্তু তখনই আমি কনসিভ করি। অন্য কেউ হলে কাজটাই করত। আমি মা হতে চাইলাম। পরে শুনেছি ওই বিজ্ঞাপনটা জুহি চাওলা করেছেন। এটার জন্য কোনোদিন রিগ্রেট করিনি। প্ল্যান করে বিয়ে, বাচ্চা, কেরিয়ার কোনো কিছুই আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই বেশ আছি। কখনও সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের বলেছেন ওঁদের সঙ্গে কাজ করতে চান? সৃজিত যখন নামী পরিচালক হয়নি, তখন থেকে বন্ধু। ফোনে কথা হয়। কৌশিকদা তো আমাকে নিয়ে টিভিতে কাজ করিয়েছেন। সিনেমায় কেন ডাকেন না কে জানে! সুজিত আর সুজয়ও আমার বন্ধু। অহল্যা দেখে ভোরবেলা সুজয়কে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কাউকেই বলতে পারব না আমাকে একটা চরিত্র দাও।

একটু রোগা হলে তো বেশি কাজ পেতেন? আই লাভ মাই কার্ভস। পুরুষরা তার জন্যই আজও আমায় ফ্যান্টাসাইজ করে। হঠাৎ কোনো পরিচালক এসে যদি বলে অভিনয়ের জন্য এক মাসে ১০ কেজি কমাতে হবে, আমি না বলে দিই। সে কী? এটাই তো চ্যালেঞ্জ! আশ্চর্য প্রদীপ-এ একজন গৃহবধূর চরিত্রে পেটে চর্বি নিয়েও আমি ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে শাড়ি পরার দৃশ্য করেছি। কিন্তু সারা জীবন গৃহবধূর চরিত্রই করবেন? তা কেন? তবে আমি একেবারেই ফিগার সচেতন নই। মীরাক্কেল-এ শর্ট ড্রেস, স্প্যাগেটি ক্যারি করেছি। অনীকদা বলতেন নো মেক আপ লুক যেমন আমাকে মানায়, তেমনই গ্ল্যামারাস লুক। সম্প্রতি মোটা মেয়ের রোগা হওয়া নিয়ে যে ছবি হলো, সেখানে তো আমাকে নেওয়া উচিত ছিল। গ্ল্যামারাস কোনো নায়িকাকে ডি-গ্ল্যাম করার কী দরকার ছিল?

এখন বাণিজ্যিক ছবির চেয়ে ওপেন টি বায়োস্কোপ-এর মতো ছবি হয়। অভিনয়ের সুযোগ বেশি। আপনি সেখানে কোথায়? ওপেন টি… অসাধারণ। অরিন্দম শীলের স্বাদে আহ্লাদে করলাম। পরিচালক হিসেবে দারুণ কাজ করছেন উনি। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পরিচালনা করেছেন এমন অনেক পরিচালকই তাঁদের প্রথম ছবিতেই আমাকে নিয়েছেন। তাঁরা কারা? অনীক দত্ত, অর্জুন চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সৌকর্য ঘোষাল, মলয় ভট্টাচার্য। ইন্ডাস্ট্রি আমাদের মতো অভিনেতাদের ঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। আমাদের বলতে?

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। বিদীপ্তার মতো অভিনেত্রী শুধু সিরিয়াল করে যাচ্ছে। সুদীপ্তা? চান্দ্রেয়ীকেও তো মেগাসিরিয়ালে কটকটি হয়ে থেকে যেতে হচ্ছে। রূপাঞ্জনা, দেবলীনাও দারুণ। প্রচুর পোটেনশিয়াল আছে। কিন্তু ক্লিক করার ফর্মুলাটা যে কী,আমি জানি না। জানলে কি আর শুধু চৌকাঠ-এই আটকে থাকতাম? আমার তো এটাও মনে হয় ঋতুপর্ণার মতো ভার্সাটাইল অভিনেত্রীকেও ইন্ডাস্ট্রি ঠিক মতো কাজে লাগায়নি। ওর মতো কাজপাগল অভিনেত্রী খুব একটা পাওয়া যায় না। ঋতুপর্ণা আর কোয়েল দুজনের কেউই কিন্তু প্রকাশ্যে কাউকে নিয়ে গসিপ করে না। এটাও কিন্তু শেখার মতো।

শ্রীলেখা মানেই হট আর সেনসুয়াস। দারুণ এনজয় করি। কত রকম যে ফোন পাই! মনের মতো ফোন? আমার চারপাশে পুরুষ দরকার। দু-তিনজন পুরুষ বন্ধু আছে যাদের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে? আছে। বিয়ের প্ল্যান? এখন শুধু অভিনয়। পরিচালনার ইচ্ছে আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের কাছে প্রযোজক থাকলে তাঁদের ছবি করার জন্য ভাবতে হয় না। আমার হাতে, গায়ে, মাথায় কোত্থাও প্রযোজকরা নেই। তবে আমি জানি আমি যদি পরিচালনার কথা ভাবি, নতুন কিছু প্রযোজক আছেন তাঁরা নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন। এই তো কৌশিক মিত্র-কে (চৌকাঠ-এর প্রযোজক) রাজাদার (দাশগুপ্ত) কাছে আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে কৌশিক আমার হাতে ছিল না। কোন নায়িকাদের হাতে, গায়ে, মাথায় প্রযোজকরা আছেন?  বলব না। কাদা ছোড়াছুড়ি করব না প্লিজ।

চল্লিশে ঢুকলেন শ্রীলেখা। কী বলতে ইচ্ছা হয়? হ্যারি পটারে হারমিওনির সংলাপটা আছে না? নেভার বেটার (প্রচণ্ড ন্যাকামি করে) মেয়েকে বলেছি ষাট হলে রাস্তায় যখন পাশাপাশি হাঁটব, তখনও ছেলেরা আমাকেই দেখবে…চৌকাঠ-এর প্রিমিয়ারে তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন। আমি সৌরভের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। দাদাগিরিতে গিয়ে ওর সঙ্গে যোগাযোগ। উত্তমকুমার পুরস্কারও  পেলেন। রাজনীতিতে আসছেন? না, না। সরকারি পুরস্কার নেওয়া মানেই রাজনীতিতে আসা নয়। রাজনীতি না করেই সমাজসেবা করা যায়। আমি অনেক দিন ধরেই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। অল্পবয়সী মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি।

একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। আশ্চর্য প্রদীপ-এর পর সি থ্রু কালো শাড়ি আর ব্লাউজ পরা আপনার একটি ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল…ছবিটায় দেখবেন সি থ্রু ব্লাউজ আর শাড়ি পরে আমি হাঁটছি। আমার চারপাশের লোকেরা ছবিতে একেবারে নির্লিপ্ত! এটা কখনও সম্ভব? সি থ্রু শাড়ি পরতে পারি। ব্লাউজ পরার সাহস এখনও হয়নি। চমকে দেওয়ার জন্য কিছু করব না।

বিনোদন নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:৩০ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৬, রোববার

এমআরআর