জাতীয়

সবার নজর এখন রংপুরের দিকে

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণা, অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ—এমন প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে ২০১৭ সাল।

এরপর শুরু হচ্ছে নির্বাচনের বছর ২০১৮। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি পর্যবেক্ষক মহল থেকে শুরু করে সবার নজর থাকছে এ নির্বাচনের ওপর।

এ ছাড়া এ নির্বাচনকে মনে করা হচ্ছে দলগুলোর জনপ্রিয়তা পরীক্ষা হিসেবে। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের জন্য পরীক্ষা হিসেবে গণ্য হচ্ছে এ নির্বাচন।

তিন লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ ভোটারের রংপুর সিটির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজার ৫০০ সদস্য মোতায়েন রেখেছে। ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার নগরের আকাশে টহল দেবে। প্রস্তুত থাকছে ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলও। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষকও থাকছে। ভোটার এবং প্রার্থীরাও সচেতন।

ভোট কারচুপির যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে প্রস্তুত তারা।
ভোটের এক দিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খান মো. নুরুল হুদা বলেছেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অনুকূলে রয়েছে—সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন নিয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীকে হুমকির অভিযোগ ছাড়া বড় ধরনের আর কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

সব পক্ষেরই চাওয়া, ভোটের আগের দিন পর্যন্ত যে অনুকূল পরিস্থিতি ছিল, তা যেন ভোটের দিনও বহাল থাকে। গতকাল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে তাদের এ চাহিদার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এ নির্বাচন ইসির জন্য ‘এসিড টেস্ট’। ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এ নির্বাচনে ইসির সামর্থ্যেরও একে ধরনের পরীক্ষা হয়ে যাবে।

এ নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৩৩ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ২১২ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৬৫ জন।

মেয়র পদপ্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙ্গল), বিএনপির কাওছার জামান বাবলা (ধানের শীষ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা), বাসদ-সিপিবির আব্দুল কুদ্দুস (মই), স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতি প্রতীক) ও এনপিপির প্রার্থী সেলিম আখতার (আম প্রতীক)। মেয়র পদে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, নতুন বছরের শুরুর দিকেই নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপের বাইরে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচন। সেই সঙ্গে ডিএনসিসি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) সম্প্রতি যুক্ত হওয়া ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুত ইসি। এ নির্বাচনের পর আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন কমিশন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এই পাঁচ সিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দশম সংসদের অধিবেশন বসে ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। ফলে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ২৮ তারিখের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন সম্পন্ন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন কিছুটা সময় হাতে রেখে আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহী।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন বছর শুধু নির্বাচনী বছরই নয়; দেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবেও এ বছর চিহ্নিত হতে পারে। ২০১৮ সাল নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল—সবার জন্য একটি পরীক্ষার বছর। একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষতার ওপরই ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে বিদায়ী বছরের শেষ ভাগে আজ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও নতুন বছরের শুরুর দিকে ঢাকায় মেয়র পদে উপনির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনায় রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এ দুই নির্বাচনের মাধ্যমেই ইসি ও সরকারের নিরপেক্ষতা যাচাই হতে পারে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা দলগুলো এ নির্বাচন দেখেই পরের নির্বাচনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

ভোটের আগের দিন মেয়র প্রার্থীরা যা বললেন : রংপুর নগরীর শান্তিবাগে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার বাসা। গতকাল দুপুরে নগরীর তাবৎ যানজট ঠেলে তাঁর বাসায় যাওয়ার পর দেখা গেল, দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে উন্মুখ হয়ে বসে আছে। মোস্তফা ক্লান্ত, গোসল করবেন। একটু পর বের হয়ে কালের কণ্ঠ’র মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচন চান। আমরাও শান্তিপূর্ণ ভোট প্রত্যাশা করি। তবে ভোট চুরির চেষ্টা করা হলে সাধারণ ভোটাররাই প্রতিরোধ করবে। প্রতিটি কেন্দ্রে আমাদের ১০০ জন করে কর্মী পাহারায় থাকবে। বস্তি বা গ্রামাঞ্চলে প্রতিপক্ষ টাকা বিলিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে। তার পরও লাঙ্গলকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। ’

জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম ইয়াসির বলেন, ‘আমরা এগিয়ে আছি। তার পরও ভোট কেনার চেষ্টা চলছে। রাতে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অপরিচিতদের দেখলেই তাদের শনাক্ত করা হবে, প্রতিরোধ করা হবে। ’

ভোট ঘিরে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের প্রচার বেশি ছিল রংপুর নগরীতে। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি দেখেছেন। বিকেলে নগরীর মাহিগঞ্জে নিজ বাসায় ফেরেন।

বাবলা বলেন, ‘রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের অবস্থান নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে। তিনি (এরশাদ) বাসায় বসে নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন এটা দেখছে না। তার পরও আমরা প্রস্তুত—সরকারের বিভিন্ন আচরণের জবাব দেবে ভোটাররা। নির্বাচন দলীয় প্রভাবে সুষ্ঠু না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ’ জামায়াতের সমর্থন পাবেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের জোটের ভেতরই আছে। ভোটের দিন অনিয়ম হলেও আমরা মাঠ ছাড়ব না। ’

নগরের জি এল রায় রোডের পাশে অনুপম সুন্দর বাসার ভেতর বসে দুপুরে হিসাব কষছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। প্রায়ই বিরক্তির সুরে কথা বললেও তখন তাঁর চোখে-মুখে রাগ বা বিরক্তির চিহ্ন দেখা গেল না। গেঞ্জি পরিহিত সদ্য সাবেক নগরপিতা ঝন্টুর কাছে ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমার ওপর দিয়ে স্টিম রোলার গেছে। আমি আচরণবিধি লঙ্ঘনের চেষ্টাও করিনি। এর পরও আমাকে জবাব দিতে হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত রংপুরে অবস্থান করছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, এরশাদের ভাগ্নি জামাই একই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ রংপুরে অবস্থান করছেন। তাঁরা কি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি! তবু আমার আনন্দ একটাই ৩০ বছর ধরে লাঙ্গলের দুর্গ রংপুরে নৌকায় ওঠার স্বপ্ন দেখছি আমরা। এরশাদ লাইটপোস্টকে ভোট দিতে বললে তারই জয় হতো। এখন সেই অবস্থা নেই। উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে রংপুর নগরবাসী নৌকায় ভোট দেবে।

আমি সংসদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে মানুষের ভোটে জয়ী হয়েছি। বাংলাদেশে এ ধরনের জনপ্রতিনিধি কোথায় আছে! আমি মানুষকে ধোঁকা দিইনি। ভোট সুষ্ঠু হবে। ’

ভোট কেনা ঠেকাতে পাহারা : গত মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষের ভোট কেনা ঠেকাতে পাহারা বসানো হয়েছে। গত রাত থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে রায় আনতে বস্তি এলাকায় অর্থ বিতরণের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মেয়র প্রার্থীর কাছ থেকে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঝন্টুর অনুসারীরা অবশ্য অভিযোগ করেছে, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তফার লোকজন বাঁশের লাঠি তৈরি করে রেখেছে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে রায় নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য। গত রাত থেকে তাই শেষ হিসাব কী হয়, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা বাড়ছিল।

বুধবার প্রধান দলগুলোর মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ভোট ছিনতাই করলে প্রতিরোধ করবে অন্য দুই দল। তবে আওয়ামী লীগ বলছে মডেল ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। প্রকাশ্যে গত রাত পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ভেতরে ভেতরে এক ধরনের শঙ্কা ছিল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের।

সবার নজর, পরীক্ষাও সবার : প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী পথচলায় সহায়ক রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোট আজ। জাতীয় পার্টির দুর্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নিরপেক্ষ আচরণ ও একই সঙ্গে জনপ্রিয়তা যাছাইয়ের পরীক্ষা হবে এখানে। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, গাজীপুর, কুমিল্লার মতো সিটিতে জয়ী বিএনপিও এখানে অবস্থান জানান দিতে মরিয়া। ৩০ বছর ধরে লাঙ্গলের শক্তি আগের মতোই প্রমাণ করতে প্রস্তুত জাতীয় পার্টি। এসব নানা পরীক্ষার কেন্দ্র রংপুরে তাকিয়ে আছেন দেশবাসী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে নিরপেক্ষতা অর্জনের মতো রংপুরেও তা হবে কি না, সেই পরীক্ষা দেবে নির্বাচন কমিশন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রংপুরে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে সরকারি দলের আচরণ একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা আমরা দেখব। জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনচক্রের সূচনা হবে রংপুরে। তার ধরনের ওপর নির্ভর করবে পথনকশা তৈরির কাজ। ’

নগরজুড়ে ভোটের আলোচনা : নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার মধ্যরাতে। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে চিত্র পাল্টে গেছে হঠাৎ করে। প্রচারণা না হলেও বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে ও দলগতভাবে ভোটারদের কথা বলতে দেখা যায়। এমন চিত্র চোখে পড়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হারাটি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট, ২ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়ালু ও উত্তম বেতারপাড়া ভোটকেন্দ্র এলাকায়। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ভোটকে ঘিরে প্রার্থীদের সঙ্গে দফারফা করার সময় আজকেই। সময়মতো প্রার্থী বা তাঁদের লোকজন যোগাযোগ করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভোটার বলে, প্রার্থীরা দূরে থাকেন। সব সময় তাঁদের পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ভোটের দিন ভোটারদের আনা-নেওয়া নিশ্চিতসহ তাদের আপ্যায়ন ও পোলিং এজেন্টদের পেছনে একটা খরচ হয়। এখানকার নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীরা তা ভোটের আগের দিনেই সম্পন্ন করেন। তাঁদের বিশ্বস্ত কিছু স্থানীয় লোক থাকে, তাদের মাধ্যমেই এ কাজটি করা হয়। বিষয়টি খুব গোপনীয় উল্লেখ করে তারা জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এ ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

নগরের ঘরে ঘরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, বাস টার্মিনালে, অটোস্ট্যান্ডে কিংবা রেলস্টেশনে দিনভর আলোচনার কেন্দ্র ছিল ভোটের প্রস্তুতি, হিসাব-নিকাশের প্রসঙ্গ। তবে নির্বাচন উৎসবময় পরিবেশে সুষ্ঠু হবে বলেই বেশির ভাগ নগরবাসীর আশা। ভোটের আগের রাতে কিংবা ভোট চলাকালে কোনো অপতৎপরতা বা দলীয় প্রভাব খাটানো নিয়ে আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে অনেকে।

চাউল আমোদ পাড়ার জুয়েল ক্রোকারিজের মালিক রহিম হোসেন জুয়েল দ্বিতীয়বারের মতো সিটি নির্বাচনে ভোট দেবেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রবার্টসনগঞ্জ মঙ্গলপাড়ার একটি কেন্দ্রে। পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চকচকা (স্বচ্ছ) নির্বাচন হইলে লাঙ্গল পাস করবে। এবার দলীয় মার্কায় ভোট হওয়ায় গেলবারের চ্যায়া আলাদা। ’

এবারই প্রথম ভোট দেবেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান মাসুম। প্রথম ভোট দিতে পারবেন বলে খুব খুশি। তিনি বলেন, ‘দল-মত নয়, যাঁরা নগর উন্নয়নের পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে ভাববেন তাঁদেরকেই ভোট দেব। ’

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১০৮টি : ভোটগ্রহণ শুরু হবে আজ সকাল ৮টায়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনী এলাকায় এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ ছাড়া ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০৩ বর্গকিলোমিটারের রংপুর নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৯৩টি কেন্দ্রে ভোট হবে। এখানে ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।

রংপুর সিটি নির্বাচনে ১৯৩টি ভোটকেন্দ্রের ১০৮টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল এবং গতকাল ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সব ধরনের যন্ত্রচালিত বাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

চার স্তরের নিরাপত্তা : নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে ৩৬ প্লাটুন বিজিবি, পাঁচ হাজার পুলিশ, দুই হাজার ৭০০ আনসার সদস্য, ৩৩ ওয়ার্ডে ৩৩টি মোবাইল টিম এবং ৩৩টি র‌্যাবের টিম কাজ করবে। এ ছাড়া ১৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। পুরো এলাকায় বসানো হয়েছে আটটি চেকপোস্ট।

রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার সাংবাদিকদের জানান, বেগম রোকেয়া কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন বসানো হয়েছে। ওই কেন্দ্রসহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি কাজ করছে বিপুল গোয়েন্দা। নির্বাচনী এলাকার বাইরে থেকে আসা মানুষকে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে কাউকে কক্ষ ভাড়া না দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে গত মঙ্গলবার। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযানের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনেও আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

টহল দেবে হেলিকপ্টার : যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, ডগ স্কোয়াডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে র‌্যাব। ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিটি করপোরেশন এলাকায় হেলিকপ্টারও টহল দেবে। গতকাল দুপুরে নগরের পায়রা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক কমান্ডার আতিকুল্লাহ।

এর আগে সকালে রংপুর পুলিশ লাইন মাঠে নির্বাচনী সরঞ্জাম গ্রহণ এবং ভোটকেন্দ্রে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক, রিটার্নিং অফিসার সুভাষ চন্দ্র সরকার, রংপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ’ (কালেরকণ্ঠ)

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share