প্রত্যেকটা পরিবারেই একজন পুরুষ থাকে। সে কখনো বাবা, কখনো বড় ছেলে, মেজো ছেলে, ছোট ছেলে কিংবা কখনো কারো স্বামী। যে নামেই পরিচিত হোক না কেনো পরিবারের কাছে সে কেবলই একজন পুরুষ।
ওই পরিবারে তার অবস্থান অনেকটা গাধার মতো। প্রয়োজনে সবাই তাকে খাবার দেয়, যতœ নেয়, ভালোবাসে- সর্বোপরি বাঁচিয়ে রাখে। কারণ এই গাধার মাঝেই তাদের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার সমস্ত উপকরণ নিহিত আছে।
গাধা’ শব্দটা আমরা বেশিরভাগ ব্যবহার করি নেতিবাচক অর্থে। অধিক ক্ষেত্রে তা বোকাদের বেলাতেই ব্যবহার করা হয়। তবে আমি সেই অর্থে গাধা শব্দটা লিখি নাই। বরং এই গাধাকে যারা বোকাভাবে তারাই এক প্রকার বোকা। কারণ, গাধা একটি নিরীহ প্রাণী। এরা মানুষের অত্যন্ত অনুগত। কারো ক্ষতি করে না। মানুষ অপমান বা ভদ্র ভাষার গালি হিসেবেও ‘গাধা’ শব্দটি ব্যবহার করে।
কিন্তু গাধা কর্মঠ, বুদ্ধিমান এবং উপকারী প্রাণীও বটে। এটা সবাই কি জানি? হয়তো জানি না, হয়তো জানলেও গাধা শব্দটা বলতে, বা ব্যবহার করতে ভালো লাগে বলে যাকে তাকে গাধা বলে সম্বোধন করি।
আমার লেখার এই গাধা পারিবারিক জীবনে ভাগ্যস্রষ্টার বেধে দেয়া দায়িত্বকে হেলা না করে, তা পালনে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয় স্বেচ্ছায়। তাই কথায় কথায় একে অন্যকে ‘গাধা’ বলার আগে একবার ভেবে নিবেন।
এ মানুষটা গাধার মতো তার দায়িত্বে অনুগত থেকে দিনরাত খেটে যায় পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়াসহ দৈনন্দিন জীবনের সকল চাহিদা মেটাতে।
ঘরের চাল, ডাল, তেল, নুন থেকে জামা কাপড়, ঔষদ, বাড়িভাড়া, বিদ্্ুযৎ বিল, স্কুলের বেতন, ছোট বোন অথবা বৌয়ের জন্য লাল ফিতে- রেশমি চুরি- কখন কোনটা লাগবে সব তার মুখস্থ । যদিও পকেটে টাকা না থাকলে দু’এক দিন দেরি করারর জন্য ‘মনে নেই’ এমন মিথ্যা কথা বলে থাকে)।
ছেলে অথবা ছোট ভাই বখাটে কারো সাথে মিসছে কি- না, ঠিকমতো বিদ্যাপীঠে যায় কি- না তা নজরে রাখাতে দিনরাত সতর্ক আর টেনশনে থাকা তার নিত্যদিনের রুটিন।
এই মানুষটার অসুখ হলে পরিবারের লোকেরা তাকে সুস্থ্য খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তারা জানে এ মানুষটা বিছানায় পড়ে থাকলে সংসার নামক নৌকোর ছুটে চলা বাধাগ্রস্ত হবে।
কখনো কখনো এমনও হয় এ মানুষটার অসুখ হলে, মন খারাপ হলে- বিষয়টা পরিবারের লোকেরা খুব বেশি আমলে নেয় না। যেনো এই মানুষটার অসুখ করতে নেই, মন খারাপ হতে নেই। টাকা রোজগার করতে গিয়ে কারো সাথে জগড়া করা, ছোট হওয়া, অপমানিত হওয়া এ বিষয়ে পরিবারের লোকেরা খুব একটা খেয়াল রাখে না। যেনো তার শরীরে ব্যথা নেই, মনে অসুখ জমতে পারে না।
পরিবারের কেউ একদিন তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে না, তার শরীরটা ভালো কি না, পছন্দের কোনো খারা খেতে বা ভালো কোনো পোষাক পরতে ইচ্ছে করছে কিনা অথবা কোথাও তার বেড়াতে যেতে মন চাইছে কি না। রাতে ঘুমের ছলে কোনো অপ্রাপ্তি বা হতাশা তাকে পীড়া দেয় কিনা কেউ জানতে চায় না কখনোই।
অথচ সবকিছু পাছে ফেলে এই মানুষটা দিনরাত্রি খেটে যায় ক্লান্তিহীন গাধার আর যন্ত্রের মতো। আমাদের সব পরিবারেই এমন একজন মানুষ থাকে, যে কখনো বাবা, বড় ছেলে, মেজো ছেলে, ছোট ছেলে কিংবা স্বামী নামে পরিচিত। আসুন সপ্তাহে অন্তত একটিবার আমরা তার হাতটা জড়িয়ে ধরে বলি, তোমার শরীরটা ভালো তো? কোনো বিষয়ে খুব বেশি টেনশন করছো কি? পছন্দের কিছু খেতে মন চাইছে কি? আমরা তোমায় সত্যি সত্যিই অনেক ভালোবাসি গাধা।
লেখক- আশিক বিন রহিম
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক- চাঁদপুর টাইমস
সম্পাদক- কবিতার কাগজ ‘তরী’
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur